হিল ভয়েস, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, দিনাজপুর: দিনাজপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তাঁর চাচা দিনাজপুর জাতীয় পার্টির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করেছেন সাঁওতালদের জমি ও জীবনরক্ষা আন্দোলন।
এছাড়া জমি ফেরত চাওয়ার কারণে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে এবং কেউ কেউ বাড়ি ছাড়া বলেও অভিযোগ করেছেন সাঁওতালরা।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সাঁওতালদের জমি ও জীবনরক্ষা আন্দোলন’–এর ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ উঠে আসে। তবে সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলছেন, অভিযোগ ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক কারণে এসব হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় স্বপ্নপুরি নামের বিনোদনকেন্দ্রে সাঁওতাল ও মাহালি সম্প্রদায়ের তিনটি কবরস্থান আছে। একটি কবরস্থানের ওপর শিবলী সাদিক বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। স্বপ্নপুরি বিনোদনকেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন।
সংসদ সদস্যের চাচা ও জেলা জাতীয় পার্টির নেতা দেলোয়ার হোসেনকে ভূমিদস্যু আখ্যা দিয়ে বলা হয়, তিনি সাঁওতালদের ৭৭ দশমিক ১১ একর জমি দখল করেছেন। এলাকায় কোনো জমি নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে জমির মালিক হয়ে যান দেলোয়ার হোসেন। এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত সাঁওতালদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
প্রশাসনের অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অভিযোগ জানালে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। সাঁওতালরা জীবন ও জমি রক্ষার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলেন উকিল হেমব্রম নামের একজন বলেন, তাঁর ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন। বাকি সব দখল করা হয়েছে। গ্রামে ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না। স্বপ্নপুরি বিনোদনকেন্দ্রের ময়লা সাঁওতালদের কিছু কবরস্থানের ওপর ফেলা হয়। তিনি এক মাসের বেশি সময় ধরে বাড়ি যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে উকিল হেমব্রম বলেন, যেসব জমি দখল করা হয়েছে, তার প্রমাণ তাঁদের কাছে আছে।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের অধিবাসী আলতাফ আলী সংবাদ সম্মেলেনে বলেন, ২০১৯ সাল থেকে তাঁর দেড় একর জমি সংসদ সদস্যের স্বজনরা দখল করার পাঁয়তারা শুরু করেন। করোনার সময় তাঁরা জমি দখলে নিয়ে নেন এবং ভয়ে তিনি এলাকায় যেতে পারছেন না। জীবনের নিরাপত্তা চান এবং জমি ফেরত চান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে গণেশ হেমব্রম, খুকুমিন হেমব্রম, রবেন মার্ডি, অখিল হেমব্রম, লুইস হাসদা, সলেমন মার্ডিসহ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিবলী সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজে কোনো বাড়ি করেননি এবং চাচার বাড়িতে থাকেন বলে জানান। এই সংসদ সদস্য বলেন, প্রায়ই তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়। কিন্তু এসব নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট মামলাও নেই। তিনিও এসবের তদন্ত চান উল্লেখ করে বলেন, অভিযোগ সত্য হলে তিনি নিজ উদ্যোগে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
জমির সব কাগজপত্র এবং সাঁওতালদের দাবি সত্য নয় বলে প্রথম আলোকে জানান দিনাজপুর জাতীয় পার্টির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, তাঁর সব জমির কাগজপত্র আছে।