হিল ভয়েস, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: জুন হতে আগস্ট মাসে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ২০টি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে। তার মধ্যে সেনাবাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে ১ ব্যক্তি নিহত ও ১০ জনকে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণের ঘটনা ঘটেছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) জনসংহতি সমিতির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উক্ত তথ্য তুলে ধরা হয়। নিম্নে জনসংহতি সমিতির তিন মাসের (জুন-আগষ্ট) প্রতিবেদন হুবহু দেয়া গেল-
বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বিশেষ করে, দীর্ঘ ২৪ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়া এবং সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক একের পর এক চুক্তি লঙ্ঘন এবং চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী নানা ষড়যন্ত্র ও কার্যক্রমের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল অধিবাসী ও ভূমির সন্তান আদিবাসী জুম্ম জাতিসমূহের জাতীয় অস্তিত্ব আজ চরম হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা তীব্র এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। সরকার, রাষ্ট্র ও বহিরাগত গোষ্ঠীর নির্মম ও নির্দয় ঔপনিবেশিক ও সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসনের কবলে পড়ে জুম্ম জনগণের সাধারণ মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারসহ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ভূমি ও ভূখন্ডের অধিকার আজ প্রতিনিয়ত পদদলিত হয়ে চলেছে।
সরকার একদিকে চুক্তি বাস্তবায়ন বন্ধ রাখাসহ চুক্তি বিরোধী নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে, অপরদিকে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনী জনসংহতি সমিতিসহ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আন্দোলনকারী অধিকারকর্মী ও জনগণকে সুপরিকল্পিতভাবে অপরাধী (সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ) হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিনাবিচারে হত্যা ও আটক, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ, মারধর, হয়রানি, হুমকি প্রদানের কার্যক্রম জোরালোভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকার এবং সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর ছত্রছায়ায় ও আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে কখনো উন্নয়ন, কখনো সড়ক ও পর্যটন নির্মাণ, কখনো রাবার বাগান, কখনো বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রমের নামে চলছে জুম্মদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, বসতভূমি ও জুমভূমি বেদখল, বাগান-বাগিচা ধ্বংসকরণ এবং বহিরাগত বাঙালি সেটেলারদের কর্তৃক অব্যাহত সাম্প্রদায়িক হামলা ও গুচ্ছগ্রাম সম্প্রসারণের চেষ্টা। অপরদিকে ইসলামী মৌলবাদীদের কর্তৃক অব্যাহতভাবে চলছে নিরীহ ও দরিদ্র জুম্ম জনগণকে সুকৌশলে ইসলামে ধর্মান্তিতকরণ ও তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংসকরণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগত অনুপ্রবেশ। ২০২২ সালের জনশুমারীতেও পরিষ্কার ও উদ্বেগজনকভাবে আদিবাসী জুম্মদের জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়া ও সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে। যা স্পষ্টতই জুম্মদের জাতিগতভাবে বিলুপ্তকরণের ধারাকেই প্রতিফলিত করেছে।
গত ১৪-১৮ আগষ্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরে অনুমতি দেয়া হয়নি, যা ছিল প্রকারান্তরে জুম্ম জনগনের উপর সরকারের দমন-পীড়নেরই বহি:প্রকাশ ঘটে। ১৭ আগষ্টের সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট হিন্দু সম্প্রদায়সহ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীসমূহকে সহিংসতা ও তাদের ভূমি বেদখল থেকে সুরক্ষা প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, ২৫ বছর আগে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। কিন্তু ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ ও বেসামরিকীকরণের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অব্যাহত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও স্বাধীন পক্ষসমূহের ওই এলাকা পরিদর্শন করার ক্ষেত্রে অবাধ অনুমতি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
বস্তুত সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে পার্বত্য চুক্তির উল্টোপথে তথা চুক্তি-পূর্বকালের আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক অবস্থানের দিকে যাত্রা করেছে। যার ফলে সরকার কেবল চুক্তি মোতাবেক সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি, উপরন্তু প্রতিনিয়ত জুম্মদের ভূমি বেদখল করে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের পাঁয়তারা করে চলেছে। সেই হীনতৎপরতারই অংশ হিসেবে সরকার ইতোমধ্যে প্রত্যাহৃত সেনাক্যাম্পের স্থলে গত মে মাস থেকে পর্যায়ক্রমে ৩০টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এবিপিএন) ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। অপরদিকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে এবং জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে ইউপিডিএফ (প্রসিত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), সংস্কারপন্থী জেএসএস, মগপাটি, বমপার্টি প্রভৃতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে অব্যাহতভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে চলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এবং সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনী। পক্ষান্তরে এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসীর গোষ্ঠীর সন্ত্রাসের দায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর চাপিয়ে দিয়ে চলেছে।
বিগত তিন মাসে (জুন-আগস্ট) নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ২০টি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে। ২০টি ঘটনার মধ্যে সেনাবাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে ১ ব্যক্তি নিহত ও আরেক ১ ব্যক্তি আহত হয়েছে; ১০ জনকে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ, ৫ জনকে সাময়িক আটক ও মারধর করা হয়েছে; ৬ জনকে নানাভাবে হয়রানি এবং ৬টি বাড়ি তল্লাসী ও বাড়ির জিনিষপত্র তছনছ করা হয়েছে; এবং খাগড়াছড়ি জেলায় ২টি নতুন সেনা ক্যাম্প (মাটিরাঙ্গায় একটি ও মহালছড়িতে একটি) স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জুলাই মাসে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে ৯ আগষ্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত টকশো-তে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যা সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও বাক-স্বাধীনতা পরিপন্থী এবং বর্ণবাদী ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে।
এসময়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক বাড়ি তল্লাশি, হুমকি প্রদান, জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া যায়। আগষ্টে সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জনিয়ারিং কনষ্ট্রাক্টশন ব্যাটেলিয়ন কর্তৃক রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে প্রায় ৬০ জুম্ম পরিবারের ভূমি, ঘরবাড়ি ও বাগান-বাগিচা ক্ষতি করে সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার ঘটনা ঘটে। আগষ্ট মাস থেকে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নে সেনাবাহিনীর বীর ৩২ রেজিমেন্ট কর্তৃক গাছ-বাঁশের ব্যবসা ও গ্রামের প্রথাগত ভূমিতে চাষাবাদ করতে বাধা দেয়া হয়েছে। আগষ্টের শেষান্তে সেনাবাহিনী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার আদিবাসী জুম্ম গ্রামবাসীদের নিকট হতে ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে। এতে জনগণের মধ্যে যেমন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি এভাবে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা সেনাবাহিনীর কাজ কিনা বা এর পেছনে সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যই বা কী তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিগত জুন থেকে আগষ্ট মাসে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ মদদপুষ্ট মগ পার্টি, বম পার্টি, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), প্রসিত সমর্থিত ইউপিডিএফ ইত্যাদি সন্ত্রাসী দল কর্তৃক ১৮টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তার মধ্যে ৬ জন খুন, শিশুসহ ৬ জন আহত, ১২ জন অপহরণ এবং অপহৃত ২ জনকে মিথ্যা মামলায় পুলিশের নিকট সোপর্দ, ১ জনকে আটক এবং ১৩ জন ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার সবচেয়ে জঘন্য ছিল বমপার্টি নামে খ্যাত কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্তৃক বিলাইছড়ির বড়থলিতে একটি ত্রিপুরা পাড়ায় এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে নিরীহ ৩ জন গ্রামবাসীকে হত্যা ও ২ শিশুকে গুরুতর জখম করা এবং তার পরবর্তীতে বড়থলি ও রোয়াংছড়ির আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের প্রত্যক্ষ অঞ্চল থেকে তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের ১০০-এর অধিক জুমচাষী পরিবারকে উচ্ছেদ করা।
সেনাবাহিনীর ৫ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বান্দরবান সেনা জোনের কম্যান্ডার লে: কর্নেল মো: মাহমুদুর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ও আশ্রয়-প্রশয়ে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতা অনুপম চাকমা কর্তৃক বান্দরবান সদর উপজেলায় বোমাং রাজা উচপ্রুর ৩১৩নং মৌজাধীন মেঘলা পর্যটনের সন্নিকটে চাকমা পাড়া গ্রামের এক বৌদ্ধ বিহারের ৩.০ একর ভূমি জোরপূর্বক দখল করে বাগান সৃজন করা হয়েছে। এছাড়া জামছড়ি ইউনিয়নের মৌজার তংপ্রু পাড়ার গ্রাম প্রধান অংচমং মারমা কার্বারীর ২.০ একর ভূমি জবরদখল করে নিয়েছে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা।
জুন মাসে সরকারের নিকট পেশের জন্য সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম নামে এক মধ্যস্থতাকারীর কাছে তথাকথিত দাবিনামা দাখিল করার পর পরই প্রসিত নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যরা পার্বত্য চুক্তি-পক্ষীয় কর্মী-সমর্থকদের উপর সশস্ত্র হামলা চালাতে শুরু করেছে। জনমতের চাপের মুখে এতদিন পার্বত্য চুক্তি পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের উপর এধরনের সশস্ত্র হামলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হলেও রাষ্ট্রীয় বিশেষ কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলের মদদে ইউপিডিএফ (প্রসিত) আবার নতুন করে এই সংঘাতে অবতীর্ণ হয়েছে। পক্ষান্তরে এই সংঘাতের দায় চুক্তি পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের উপর চাপিয়ে দিয়ে মিছিল-মিটিং আয়োজন করতে প্রত্যন্ত এলাকায় সাধারণ নিরীহ গ্রামবাসীদেরকে বাধ্য করে চলেছে।
জুন-আগষ্ট মাসে নারী ও শিশুর উপর ৭টি যৌন ও শারীরিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এতে ৭ জন জুম্ম নারী সহিংসতার শিকার হয়েছে। তার মধ্যে ১ জনকে দলগত ধর্ষণসহ ২ জন জুম্ম নারীকে ধর্ষণ এবং ১ জনকে হত্যার চেষ্টাসহ ৪ নারী ধর্ষণের চেষ্টা এবং ১ জন হত্যার শিকার হন। এদের মধ্যে বাঙালি সেটেলারদের কর্তৃক ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হন ৪ জন নারী এবং সরকারি দল আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ৫ জন নেতাকর্মী কর্তৃক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক কলেজ ছাত্রী। তবে লংগদুতে একজন স্কুল শিক্ষিকাকে কারা গলা কেটে হত্যা করেছে তার সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।
এই সময়ে জুলাই-আগস্ট মাসে ভূমি জবরদখল, সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগ, মিথ্যা মামলা দায়ের সংক্রান্ত ৯টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তার মধ্যে মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও বহিরাগত মহল কর্তৃক জুম্মদের উপর ৩টি সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। এইসব ঘটনায় ৩৭টি জুম্ম গ্রামবাসীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, ৪ জনকে আহত, একটি বৌদ্ধ মন্দিরে লুটপাট ও ভাঙচুর, একজন বহিরাগত বাঙালি ও একজন পাহাড়ি পর্যটন ব্যবসায়ী কর্তৃক দুইজন জুম্মর ৩.০ একর ভূমি বেদখল করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ জন সেটেলার কর্তৃক ৩৭টি জুম্মর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির মাইসছড়িতে এবং এতে ২ জুম্মকে আহত করা হয়। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলের পাশে উপস্থিত থাকলেও হামলাকারী সেটেলারদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
বান্দরবানে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভূমিদস্যুদের কর্তৃক আগষ্ট মাসে নিজেদের ৪০০ একর জুম ভূমি ও গ্রামীন বন রক্ষার জন্য আন্দোলনরত ১১ জন গ্রামবাসীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জনকে আসামী করে বান্দরবানের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এক মামলা দায়ের করা হয়েছে। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং আদিবাসী ম্রো ও ত্রিপুরাদের মধ্যেকার ৪০০ একর ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আগষ্ট মাসে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক বেদখলকৃত ভূমি উদ্ধার করার পরিবর্তে ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৩৯ পরিবারকে ৫.০ একর ভূমি বরাদ্দের পর বাদবাকী ভূমি বেদখলকারী রাবার কোম্পানীকে দেয়ার জন্য পক্ষপাতমূলক প্রস্তাব করেন পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর ও বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তীবরীজি। ভূক্তভোগী ম্রো ও ত্রিপুরা গ্রামবাসীরা এই তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
গত জুন মাসের প্রথম থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বান্দরবানের থানচি ও আলীকদম উপজেলার দুটি ইউনিয়নে অন্তত ১২ জন জুম্ম গ্রামবাসীর মৃত্যু এবং প্রায় ৩৫০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এদের মধ্যে থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নে ৯ জনের মৃত্যু ও ৬০ জনের আক্রান্ত হওয়ার এবং আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নে ৩ জনের মৃত্যু ও ৩ শতাধিক ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার পাওয়া যায়।
এছাড়াও সম্প্রতি বান্দরবান পার্বত্য জেলার পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার জেলাধীন উখিয়া উপজেলার মনখালী চাকমা পাড়ার আদিবাসী চাকমাদের উপর একদল মুসলিম বাঙালি ভূমিদস্যু হামলা চালিয়ে নারীসহ ৫ জনকে গুরুতর জখমসহ ২০ জনকে আহত করে বলে জানা যায়।