হিল ভয়েস, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া থেকে দেশীয় তৈরি পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলি গুঁজে দিয়ে আলোময় চাকমা ওরফে বলয় নামে একজন জুম্মকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।
গত রবিবার (২৫ সেপ্টেস্বর) রাত দশটায় ঘাগড়া ক্যাম্পের আওতাধীন ঘাগড়ার চম্পাতলী এলাকায় তার বাড়ি ঘেরাও করে তাকে আটক করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, সেনাবাহিনী কর্তৃক বাড়ি ঘেরাও করার সময় আলোময় চাকমা বাড়িতে ছিলেন না। এ সময় পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে মোবাইল করে কৌশলে ডেকে এনে তাকে আটক করা হয়।
গ্রেফতারের পর ঘাগড়া ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিকভাবে মারধরের পর অস্ত্র গুঁজে দিয়ে আলোময় চাকমাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি রাঙ্গামাটির নান্যাচর উপজেলার উত্তর ফিরিঙ্গি পাড়ার গুপ্ত বিহারী চাকমার ছেলে বলে জানা যায়।
তিনি এক সময় ইউপিডিএফ প্রসীত-সমর্থিত গ্রুপের কাউখালী ইউনিটের সক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে জানা যায়। অনেক আগে ২০০৬ সালের দিকে ইউপিডিএফ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে চলে আসেন এবং তখন থেকে সপরিবারে ঘাগড়ায় বসবাস করছেন। এরপর থেকে কোন রাজনৈতিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন না বলে জানা গেছে।
কিন্তু তিনি “জনসংহতি সমিতির নেতা” এবং “তার বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে একটি কক্ষে বালতির ভেতর কাপড় মোড়ানো অবস্থায় দেশীয় তৈরি ১টি পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে” মর্মে রাষ্ট্রযন্ত্র-সমর্থিত স্থানীয় হলুদ সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে সেনাবাহিনী অপপ্রচার চালায়।
এ প্রসঙ্গে জনসংহতি সমিতির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রোমোশনের জন্য সেনাবাহিনী এধরনের গর্হিত কাজ হরহামেশাই করে থাকে। আর এক্ষেত্রে তাদের অপকর্ম জায়েস করার জন্য অস্ত্র গুঁজে দিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয়। আর কাউকে গ্রেফতার করলেই তাকে জনসংহতি সমিতির সদস্য হিসেবে তকমা দিয়ে ‘সন্ত্রাসী’ বানানোর অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে।
যার সর্বশেষ উদাহরণ হলো গত ২২ সেপ্টেম্বর রাত ২:০০ ঘটিকায় শান্তি কুমার চাকমা নুন্যা (৫২) নামে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়ন থেকে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে গ্রেপ্তারকৃত এক নিরীহ জুম্ম জেলেকে জেএসএসের সদস্য বলে সেনাবাহিনী অপপ্রচার চালায়। এমনকি গত ২৮ জুলাই কাপ্তাই উপজেলাধীন রিজার্ভমুখের কালাপানি এলাকায়
সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত নিখিল দাশ নামে একজন কাঠুরিয়া হিন্দু বাঙালিকেও জনসংহতি সমিতির সদস্য হিসেবে সেনাবাহিনী অপপ্রচার চালায় বলে সজীব চাকমা অভিযোগ করেন।
সজীব চাকমা আরো বলেন, এভাবেই সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা খেলছে, যা সেনাবাহিনীর ভয়ে জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় না। কেবল ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগষ্ট পর্যন্ত
সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা মোট ৭২টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ২১০ জন জুম্ম মানুষ মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে।