হিল ভয়েস, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে ধুলিস্যাৎ করা, চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বকে ধ্বংস করা, সর্বোপরি জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে মগ পার্টি ও বম পার্টির ন্যায় সশস্ত্র ত্রিপুরা পার্টি গড়ে তোলার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ছাত্র-যুব সমাজের বিরোধিতার মুখে সেনাবাহিনীর সেই জঘন্য ষড়যন্ত্র এখনো সফল হতে পারেনি।
সেনাবাহিনী কর্তৃক এতদিন পর্যন্ত ত্রিপুরা বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভবপর না হলেও এবার পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ-এর সহযোগিতায় ইউপিডিএফের ত্রিপুরা কর্মী দিয়ে ত্রিপুরা বাহিনী গড়ে তোলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। ইউপিডিএফ সংগঠনের সাথে যুক্ত তনয় ত্রিপুরার নেতৃত্বে এ বাহিনী গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানা গেছে।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সংক্রান্ত এক গোপন মিটিং হয়েছে খাগড়াছড়ি ব্রিগেড অফিসে তনয় ত্রিপুরার নেতৃত্বে কয়েকজন ত্রিপুরা যুবক ও সেনা কর্মকর্তার মধ্যে। উল্লেখ্য যে, তনয় ত্রিপুরা ছাত্র জীবন থেকে চুক্তি বিরোধী ও সেনা-সমর্থিত ইউপিডিএফ সংগঠনের যুক্ত রয়েছে।
সেনাবাহিনী ও ইউপিডিএফ এর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হবার পর ইউপিডিএফ জুম্ম জনগণের জন্য ক্ষতিকারক সেনাবাহিনীর নানা ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা ও কার্যকলাপে সহযোগিতা প্রদান করা শুরু করে দিয়েছে। সেসব ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের একটি অন্যতম হলো ত্রিপুরা বাহিনী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা।
সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি গত ২৬ আগস্ট ২০২২ খাগড়াছড়ি সেনা ব্রিগেডে ইউপিডিএফ এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক ও মুখপাত্র অংগ্য মারমার নেতৃত্বে একটি দল খাগড়াছড়ি ব্রিগেডের জিইটু ও খাগড়াছড়ি সদর সেনা জোনের জোন কম্যান্ডারের সাথে একটা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়।
এর আগে ৯ জুন ২০২২ সরকারের নিকট পেশ করার জন্য মধ্যস্থতাকারীর কাছে দাখিলকৃত তথাকথিত দাবিনামা পেশ করার পর পরই ১১ জুন ২০২২ ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যরা পার্বত্য চুক্তি পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের উপর সশস্ত্র হামলা শুরু করে।
জনমতের চাপের মুখে এতদিন পার্বত্য চুক্তি পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের উপর সশস্ত্র হামলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হলেও সেনাবাহিনীর সাথে সমঝোতা হওয়ায় ইউপিডিএফ আবার নতুন করে এই সংঘাত ও হানাহানিতে অবতীর্ণ হয়েছে। পক্ষান্তরে এই সংঘাতের দায় চুক্তি পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের উপর চাপিয়ে দিয়ে মিছিল-মিটিং আয়োজন করতে সাধারণ নিরীহ গ্রামবাসীদেরকে বাধ্য করে চলেছে।
উল্লেখ্য যে, সেনাবাহিনী ‘ভাগ করো শাসন করো’ উপনিবেশিক নীতির ভিত্তিতে প্রসিত সমর্থিত ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), সংস্কারপন্থী জেএসএস, মগ পার্টি খ্যাত এমএনপি, বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, শামীম মাহফুজের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে আরাকান, আরএসও, আরসা প্রভৃতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে চলেছে এবং জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে চলমান আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে চলেছে।