হিল ভয়েস, ৯ আগস্ট ২০২২, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, সরকারের উদাসীনতায় বাংলাদেশের আদিবাসীরা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
আজ ৯ আগস্ট ২০২২ চট্টগ্রামে দুটি পর্বে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে সকাল ১০:০০ ঘটিকায় চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় মোড়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং দ্বিতীয় পর্বে দুপুর ১২:০০ টায় জে এম সেন হলে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনী পর্বে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। এছাড়াও এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শরিফ চৌহান, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, আবৃত্তি শিল্পী ও প্রমা’র সভাপতি রাশেদ হাসান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নিলু নাগ প্রমুখ। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, ফটিকছড়ি উপজেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক অনিক ত্রিপুরা ও মারমা যুব সমাজ, চট্টগ্রাম মহানগরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাচিং মারমা।
আদিবাসী দিবসের উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরে উদ্বোধক কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীবৃন্দ গণসংগীত, ডিসপ্লে প্রদর্শন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চলের সদস্য রুমেন চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর চাকমা এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাছেনহ্লা রাখাইন।
উদ্বোধক আবুল মোমেন মহোদয় বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ে আদিবাসী দিবস পালন করছি যখন সরকার কর্তৃক এই ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহারের বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা মনে করি বাংলাদেশে অর্ধ শতাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। তাদের সামাজিক, নাগরিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার অক্ষুন্ন রাখা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।আদিবাসীদের ভূমি ব্যবস্থা,ভূমির অধিকার নিশ্চিত করা সকল রাষ্ট্রেরই উচিত।’ এছাড়া তিনি আদিবাসীদের স্বকীয়তা, বৈচিত্র্য রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আশার আহ্বান জানান।
শরিফ চৌহান বলেন, ‘স্বাধীনতার পরবর্তীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি যেমন পায়নি তার উপর তাদের এখন আদিবাসী হিসেবে পরিচয়টাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আদিবাসীদের সম্পদ, মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য সরকার নানা আদিবাসী বিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আজকের এই বাংলাদেশ হওয়ার পেছনে শুধু বাঙালিদের অবদান ছিল না। আদিবাসীরাও চেয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশে সম্মান ও অধিকার নিয়ে বসবাস করবে।’ তিনি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সঙ্গী হয়ে থাকার আশ্বাস দেন।
কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকল জাতিস্বত্তার রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা। এদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। আজকের সেই স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু আদিবাসীদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। যে জাতি বুকের রক্ত দিয়ে নিজের ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারে সে জাতি অন্যের অধিকার হরণ করতে পারে না। আজকে দেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠী সংখ্যায় কম বলে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক আগ্রাসন চলতে পারে না। আজকে ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, রিসোর্ট ও সাফারি পার্কের নামে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ভূমি দখল করা হচ্ছে। আমরা যে নীলাচলে যাচ্ছি সে নীলাচলের নাম এমন হওয়ার কথা নয়। এভাবেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসন বাড়ছে দিনের পর দিন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করে দিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে পাহাড়-বন আদিবাসীদের পিতৃভূমি। তাদের জীবীকা দেয়, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা দেয় সেই পাহাড়-জঙ্গলকে উন্নয়নের নামে, পর্যটনের নামে কেড়ে নিতে পারিনা।’
আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, ‘একটি মানবিক রাষ্ট্র তখনই গড়ে ওঠে যখন রাষ্ট্রের মধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থাকে না, সকল জনগোষ্ঠী মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে সমান অধিকারে। কিন্তু আমাদের দেশে আদিবাসী ভাইবোনদের অধিকার আদায়ের জন্য এখনো রাস্তায় নামতে হয়। আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠরা যেমন বলতে পারি আমরা বাংলাদেশি ঠিক একইভাবে তাদেরও এইরকম পরিবেশ দিতে হবে, দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো সমান সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু যখন দেশের মধ্যে আদিবাসীদের উপর হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন চলে তখন আমার মাথা নিচু হয়ে যায়। রাষ্ট্র যখন ঠিক করে দেয় কারা জাতি, কারা উপজাতি অথবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আমরা সেটা মেনে নেবো না। যারা বাংলাদেশে প্রগতিশীল চিন্তা করে তারা এটা মেনে নিতে পারে না অন্তত।’ এছাড়াও তিনি মানবিক সমাজ গঠনে সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতার আহ্বান করেন।
এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আদিবাসীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। একটি রাষ্ট্রে একক কোন জনগোষ্ঠী অন্য জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে রেখে উন্নয়ন সাধন করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে আওয়ামীলীগ নির্বাচনী প্রচারণায় আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল আজ সে আওয়ামিলীগ সরকার শাসন ক্ষমতায় ১২ বছর ধরে অধিষ্ঠিত। বর্তমান সময়ে আদিবাসীরা নিজ ভূমিতে অস্তিত্বের সংকটে আছে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে অন্তর চাকমা বলেন, ‘জাতিসংঘ কর্তৃক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য ঘোষিত অধিকারের দাবিতে আমরা প্রতিবছর ৯ আগস্ট এই দিবসটি পালন করে থাকি।’
তিনি বলেন, ‘সরকার একসময় আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ে যে নিশ্চয়তা দিয়েছিল বর্তমান সময়ে এসে আমরা তার সঠিক বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। এমনকি সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আদিবাসী বিরোধী প্রজ্ঞাপনও এর বিপরীতে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আদিবাসীদের যে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম তা দিনদিন কঠোরতর হচ্ছে।’ তাছাড়া তিনি এ সংকটাপন্ন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ৫০ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার যথাযথ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভা শেষে চেরাগী মোড় থেকে জামালখান ঘুরে জে এম সেন হল পর্যন্ত র্যালি করা হয়। এরপর জে এম সেন হলে রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সভাপতি অনিল চাকমার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সম্মানিত ডীন প্রফেসর সিরাজ উদ দৌল্লাহ। আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের জসীম চৌধুরী সবুজ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুহাম্মদ আলাউদ্দিন, ঐক্য ন্যাপ, চট্টগ্রামের যুগ্ম সম্পাদক পাহাড়ী ভট্টাচার্য প্রমুখ। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্য জুনিয়া ত্রিপুরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ জন্মের মূল স্তম্ভের একটি হলো গণতন্ত্র। কিন্তু একুশ শতকের তৃতীয় দশকে এসেও সংখ্যালঘু আদিবাসীরা প্রান্তিকতার মধ্যে রয়ে গেছে। অনেক নীতিমালা প্রণয়ন হয় অথচ বাস্তবায়নের পর্যায়ে গিয়ে দেখা যায় তা যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির মাধ্যমে দমিয়ে রাখা হয়। আমাদের দেশের মূলধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির এই প্রবণতা নিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মূল সমস্যা বুঝতে হবে। তাদের জীবনযাত্রার মান কেমন তা দেখতে হবে। কিন্তু সংসদীয় পর্যায়ে আদিবাসী জনগণের স্বার্থে কতটুকু ভাবা হয়?’ তিনি আরো বলেন, ‘মানব সমাজের প্রথম দিকে কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের ভূমিকা অগ্রগণ্য ছিল। আদিবাসী সমাজে গেলে আমরা দেখতে পাবো তারা এখনো ঐতিহ্যগত জ্ঞান কতো আগ্রহের সঙ্গে সংরক্ষণ করে চলেছে যুগ যুগ ধরে। সমাজের বিকাশে বৈচিত্র্যতা বিশাল অবদান রাখে।’
এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত তাঁর আলোচনায় বলেন, ‘উপমহাদেশের সংখ্যাঘুদের জীবন দিনের পর দিন অস্তিত্বহীনতার দিকে আগাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে যদি সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠী হারিয়ে যায় তবে বাংলাদেশ গণতন্ত্র হারাবে। তাদেরকে নিজ মাটিতে দাঁড়িয়ে অধিকার রক্ষা, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার রক্ষার সুযোগ দিতে হবে। পাকিস্তান সরকারের আমলে নির্মিত কাপ্তাই বাঁধের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল সংখ্যক জনগণ দেশান্তরি হতে বাধ্য হয়েছে। নতুন স্বাধীন দেশের সংসদে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বিচ্ছিন্ন পার্বত্য চট্টগ্রাম চাননি।
তিনি শুধু চেয়েছিলেন পার্বত্যবাসীর সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু এই সময়ে এসে আদিবাসীরা এখন হতাশ, অসহায়। এই হতাশার জায়গা থেকে তাদের মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে দিনের পর দিন।’ তাছাড়া তিনি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান।
জসীম চৌধুরী সবুজ বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। সরকার প্রতিনিয়ত পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ভূমি কমিশন গঠিত হয়েও ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেখানে আইনগতভাবে সরকারের কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই।’ তিনি ঐতিহ্য-সংস্কৃতি রক্ষায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লড়াই সংগ্রামের সাথে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সংহতি প্রকাশ করেন।
প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘দেশে এখন নিজ ভূমিতে মানুষের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত নেই। সাংস্কৃতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার মাধ্যমে কোনো জনগোষ্ঠীর বিকাশের পথে বাধা জড়িত আছে। বাংলাদেশের আদিবাসীদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার নিষ্ঠুর শোষণ তাদের উপর পড়েছে। এই শোষণের প্রধান হাতিয়ার আদিবাসীদের সম্পত্তি হরণ ও নারীর উপর সহিংসতা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আদিবাসীদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। পার্বত্য জেলাগুলোতে সেনাশাসনের মতো নিষ্ঠুর ব্যবস্থা এখনো আছে। গণতন্ত্রের কথা আমরা মুখে বলছি ঠিকই কিন্তু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের বিষয়ে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব নেই। সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় তাদের ভূমি, অধিকার ও স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’
অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ৯ আগস্ট আদিবাসী দিবস হলেও বাংলাদেশে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে যেখানে এই আদিবাসী শব্দের উচ্চারণ করা যায় না। সরকারের এই উদ্যোগ সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সাম্প্রদায়িক কিংবা অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিউনিস্ট পার্টি বিরোধিতা করে।’ তিনি সকলকে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
মুহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘চিরায়তভাবে বাংলাদেশ জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এই পরিস্থিতিকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে এখন দেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে স্বীকার করছে না।’ এছাড়া তিনি আদিবাসী নারী অধিকারসহ প্রান্তিক সকল জাতিসত্তার মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
পাহাড়ী ভট্টাচার্য বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম, মধুপুর, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসীরা এখন বেদনাময় দিন পার করছে। সরকার তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি ও সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। আধুনিকায়নের নামে শোষণ, ভূমি দখল তাদের সাংস্কৃতিক জীবনধারা ও জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি তারা কোনদিন চায়নি। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো এই ব্যাপারে উদাসীন। আজকের এই আদিবাসী দিবসে আমাদের শপথ নিতে হবে আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তাদের জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত অধিকার বাস্তবায়ন যেন হয়।’
দিনব্যাপি আদিবাসী দিবসের সমাবেশে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা; পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা; বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখা; ফটিকছড়ি উপজেলা শাখা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম, মারমা যুব ফোরাম, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা সহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং নানা পেশাজীবী আদিবাসী জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেন।