হিল ভয়েস, ১২ আগস্ট ২০২২, বান্দরবান: বান্দরবান জেলাধীন লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাড়াটে ভূমিদস্যুদের কর্তৃক নবনির্মিত এক বৌদ্ধ বিহারে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলাকারীরা দু’টি ধাতব বুদ্ধমূর্তিও লুট করে নিয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট ২০২২ বিকাল আনুমানিক ৩:০০ টার দিকে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু নুরুল হক নুর’এর নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের একদল দুর্বৃত্ত রেংইয়েন কার্বারি পাড়ার নবনির্মিত অশোক বৌদ্ধ বিহারে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা বিহারটির ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং দুটি বুদ্ধিমূর্তি লুট করে নিয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আদিবাসীদের আরো ভূমি বেদখল করার উদ্দেশ্যেই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন পরিকল্পিতভাবে এই ভূমিদস্যুদের লেলিয়ে দিয়েছে। তারা বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন দীঘদিন ধরে স্থানীয় ত্রিপুরা ও ম্রো পাড়াবাসীদের প্রায় ৪০০ একর ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এজন্য তারা একাধিকবার স্থানীয় আদিবাসীদের উপর হামলা ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে।
ভূমি রক্ষার্থে নবগঠিত ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির কমিটির সদস্য সচিব লাংকম ম্রো (কার্বারি) বলেন, লামা রাবার বাগান ইন্ডাস্ট্রিজ’র মোয়াজ্জেম হোসেন এর লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের ৪০০ একর ভূমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গ্রামবাসীদের প্রায়ই হুমকি দিচ্ছে। আদিবাসীদের ভূমিতে জোরপূর্বক দখল করে রাবার গাছের চারা লাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ফদরাম ত্রিপুরা (কার্বারি) বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর আইনত অপরাধ। কিন্তু ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানানো পরেও তারা নির্বিকার থেকেছে। অপরদিকে রাবার কোম্পানির লোকজন প্রায়ই স্থানীয় ম্রো ও ত্রিপুরাদের জুমভূমি দখলে নিতে হামলা ও মামলার ভয় দেখাচ্ছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি সরই ইউনিয়নের রেংইয়েন কার্বারি পাড়ার আদিবাসী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী গ্রামবাসীরা অশোক বৌদ্ধ বিহার নামে একটি বিহার নির্মাণ করেন। গত ১১ জুলাই ২০২২ সুমনানন্দ ভিক্ষুর উপস্থিতিতে বিহারটির উদ্বোধন করা হয় এবং তখন থেকে বিহারে ধর্মীয় কাজও শুরু হয়।
উল্লেখ্য, রাবার কোম্পানির ভূমিদস্যুদের কর্তৃক গত ৯ এপ্রিল ২০২২ স্থানীয় ম্রো ও ত্রিপুরাদের প্রায় ৪০০ একর জুম ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে আদিবাসীদের বিভিন্ন ফলজ গাছসহ অন্যান্য চারা ও গাছ কেটে দেয়া হয় এবং ২৬ এপ্রিল ২০২২ জুম ভূমিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর গত ১৩ জুলাই ২০২২ ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরাকে ডলুছড়ি মৌজার হেডম্যান কার্যালয়ে হামলা করে গুরুতর আহত করা হয়।