রোয়াংছড়িতে আদিবাসী ম্রো গ্রামবাসীর ভূমি বেদখলের অভিযোগ

হিল ভয়েস, ১৫ আগস্ট ২০২২, বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের তারাছা মৌজা এলাকায় কতিপয় প্রভাবশালী আদিবাসী ব্যক্তি কর্তৃক স্থানীয় আদিবাসী ম্রো গ্রামবাসীর ভূমি বেদখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তারাছা মৌজার হেডম্যান হ্লাথোয়াইহ্রী মারমা এবং পর্যটন রিসোর্টের উদ্যোক্তা ফিলিপ ত্রিপুরা ও জুলফিকার আলী লাবন এই বেদখলের সাথে জড়িত। জানা গেছে, হেডম্যান হ্লাথোয়াইহ্রী মারমা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতাও।

ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পর্যটন রিসোর্টের উদ্যোক্তা ফিলিপ ত্রিপুরা ও জুলফিকার আলী লাবন পর্যটন রিসোর্ট করার উদ্দেশ্যে তারাছা মৌজার ৭নং ওয়ার্ডের জামিনী ম্রো পাড়া গ্রামের মেনদুই ম্রোর কাছ থেকে ৩ একর জায়গা ক্রয় করেন। কিন্তু গত ১৩ আগস্ট ২০২২ হেডম্যান হ্লাথোয়াইহ্রী মারমা’র প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ফিলিপ ত্রিপুরা ও জুলফিকার আলী লাবন মেনদুই ম্রো’র জায়গার পার্শ্ববর্তী স্থানীয় আরেক গ্রামবাসী লাংএ ম্রো’র ভোগদখলীয় ২ একর জায়গাও বেদখল করে নেন। জামিনী ম্রো পাড়া’র ২০টি ম্রো পরিবারের সবাই বিষয়টি জানলেও হেডম্যান হ্লাথোয়াইহ্রী মারমা, ফিলিপ ত্রিপুরা ও জুলফিকার আলী লাবন প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে পারছেন না।

গ্রামবাসীদের আরো অভিযোগ, ফিলিপ ত্রিপুরা ও জুলফিকার আলী লাবন উক্ত ভূমি বেদখল করা ছাড়াও জামিনী ম্রো পাড়ার পাশ্ববর্তী উত্তর হাঙ্গর এলাকার মেনয়ক ম্রো হেডম্যান এর অধীন ৩০৮নং মৌজার টংকাবতী ইউনিয়নের রামরি ম্রো পাড়ার বাসিন্দা খামলাই ম্রো’র কাছ থেকে আরও ১ একর জায়গা বেদখল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

জানা গেছে, গতকাল ১৪ আগস্ট ২০২২ রামরি ম্রো পাড়ার বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে উক্ত বিতর্কিত জায়গায় জমায়েত হন এবং বেদখলের চেষ্টার প্রতিরোধে ফিলিপ ত্রিপুরা ও জুলফিকার আলী লাবন কর্তৃক ক্রয়কৃত জায়গা বরাবর একটি বাঁশের বেড়া দিয়েছেন।

বেদখলের ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দরবানের এক অধিকারকর্মী বলেন, যুগ যুগ ধরে এসব নিরীহ আদিবাসীরা এসব এলাকায় জুমচাষ ও বাগান করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। যদিও অনেকের কাগজপত্র নেই। সরকারি-বেসরকারি ও বাঙালি-পাহাড়ি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কর্তৃক এসব ভূমি বেদখলের কারণে তাদের অনেকের জীবিকা এখন হুমকির মুখে এবং তাদের অনেকেই এখন উচ্ছেদের মুখে।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় আদিবাসীদের জীবিকার অবলম্বন ভূমিগুলো হারিয়ে ফেললে তারাও ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বাধ্য হবে। তাই তো লামা, থানচি সীমান্ত, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি’র অনেক ম্রো, মারমা, চাক ও বম পাড়া বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

More From Author