হিল ভয়েস, ১১ আগষ্ট ২০২২, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফরে আসছেন। কিন্তু তাঁকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সফর করতে অনুমতি প্রদান করেনি বাংলাদেশ সরকার।
মিশেল ব্যাচেলেট আগামী ১৪ আগস্ট ২০২২ বাংলাদেশ সফরে আসছেন। থাকবেন ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। সফরে মিশেল ব্যাচেলেট সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং রোহিঙ্গা শিবিরে যাবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে যে, মিশেল ব্যাচেলেট পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকতে তাঁকে অনুমতি প্রদান করেনি। ফলে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সফরে আসছেন না বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কানাডা প্রবাসী বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও হিল ভয়েসের নির্বাহী সম্পাদক প্রীতিবিন্দু চাকমা বলেন যে, সরকার কর্তৃক জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরে অনুমতি না দেয়ার মধ্য দিয়েই প্রমাণ হয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের উপর ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, সরকার আদিবাসী জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে বরাবরই বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে থাকে।
এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা হিল ভয়েসকে বলেন, এ থেকে বুঝা যায় সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে নির্বিঘ্নে জুম্ম জনগণের উপর দমন-পীড়ন চালিয়ে যেতে চায়। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত সামরিক শাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের গড়িমসি, ব্যাপক ভূমি বেদখল ও স্বভূমি থেকে জুম্মদের উচ্ছেদ, সাম্প্রদায়িক হামলা ও গ্রামে অগ্নিসংযোগ, জুম্ম নারীর উপর অব্যাহত সহিংসতা, অপরাধীদের দায়মুক্তি ও বিচারহীনতা ইত্যাদি বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের নিকট তুলে ধরতে মিশেল ব্যাচেলেটকে আহ্বান জানিয়েছেন।
মিশেল ব্যাচেলেটের প্রতি ৯ মানবাধিকার সংগঠনের আহ্বান
বাংলাদেশে বিচার-বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অবিলম্বে বন্ধে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফরে প্রকাশ্যে আহ্বান জানানো উচিত বলে মন্তব্য করেছে ৯ মানবাধিকার সংগঠন।
গতকাল বুধবার (১০ আগষ্ট) এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ (এইচআরডব্লিউ) এসব আন্তর্জাতিক সংগঠন। এইচআরডব্লিউ ছাড়া বিবৃতি দেওয়া অন্য সংগঠনগুলো হলো অ্যান্টি–ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন), এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম–এশিয়া), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট (সিপিজেপি), ইলিওস জাস্টিস (মনাশ ইউনিভার্সিটি), ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ) ও রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর শত শত মানুষ গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং মারা গেছেন। এই সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বাংলাদেশে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন, মানবাধিকারকর্মী ও তাঁদের পরিবার এবং মানবাধিকার সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এতে আরও বলা হয় গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনার সব অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করতে হবে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে।
গুম, খুন, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি, তাঁদের পরিবার ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই কমিশন গঠনে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সমর্থনদানের প্রস্তাব ব্যাচেলেটের দেওয়া উচিত বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সংগঠনগুলো বলেছে, এটি সরকারকে ব্যাচেলেটের পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের চলমান ঘটনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের মোতায়েনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।