হিল ভয়েস, ১ আগস্ট ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন এলাকায় স্থানীয় আদিবাসী জুম্ম জনগণের প্রতিরোধের মুখে সেনা ও বিজিবি কর্তৃপক্ষ তাদের সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ স্থগিত করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আজ (১ আগস্ট ২০২২) সকাল আনুমানিক ৮:৩০ টায় সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদস্যরা সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করলে স্থানীয় জুম্ম নারী ও পুরুষ নিজেদের বাড়িঘর, ভূমি ও বাগান রক্ষার দাবিতে ঘটনাস্থলে সমবেত হয়। তারা আবারও সেনা ও বিজিবি সদস্যদের তাদের কাজ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে রাস্তায় বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে।
এক পর্যায়ে মারিশ্যা ২৭ বিজিবি জোনের জোন কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ শরিফুল আবেদ (এসজিপি) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। স্থানীয় জনগণ আবারও তার নিকট সড়ক নির্মাণ কাজের প্রতিবাদ জানান এবং কাজটি বন্ধ করার দাবি জানান। এরপর সেনা ও বিজিবি সদস্যরা সড়ক নির্মাণ কাজ স্থগিত করার ঘোষণা দেন।
এসময় বিজিবি’র জোন কম্যান্ডার স্থানীয় জুম্মদের নিকট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তার কাছে জমা দিতে বলেন এবং তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে কী করা যায় দেখবেন বলে জানান।
অপরদিকে, ক্ষতির সম্মুখীন স্থানীয় এলাকাবাসীদের একটি প্রতিনিধিদলও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গতকাল ৩১ জুলাই ২০২২ সকাল ১০:০০ টায় ২৭ বিজিবি মারিশ্যা জোনের জোন কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ শরীফুল আবেদ (এসজিপি) নিজে এসে এই সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন। এর পরপরই তার উপস্থিতিতেই সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন এর সদস্যরা আর্য্যপুর বনবিহারের রাস্তার মুখ এলাকায় বুলডোজার ও ট্রাক্টর দিয়ে জোরপূর্বক আদিবাসী জুম্ম গ্রামবাসীর দোকান ও মূল্যবান গাছ ধ্বংস করে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
এই সময় বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলিভ চাকমার নেতৃত্বে স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসী জোন কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ আবেদ (পিএসসি) এর নিকট জুম্মদের ব্যাপক ক্ষতি করে এই সড়ক নির্মাণ কাজের প্রতিবাদ জানান এবং কাজটি বন্ধ করার দাবি জানান। কিন্তু বিজিবি ও সেনা সদস্যরা স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ ও দাবিকে তোয়াক্কা না করে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
গ্রামবাসীদের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকালের মধ্যে সেনা সদস্যরা বুল ডোজার ও ট্রাক্টর দিয়ে নির্মাণাধীন সড়ক সংলগ্ন এলাকায় জুম্মদের ১টি দোকান এবং প্রায় ১ হাজার আগর ও সেগুন গাছ ধ্বংস করে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, আর্য্যপুর দোকানের রাস্তা মুখ থেকে কজোইছড়ি মুখ পর্যন্ত ৩০ ফুট প্রস্থ আনুমানিক ৪ কিলোমিটার দুরত্বের রাস্তা নির্মিত হবে এবং এতে কমপক্ষে ৫০ পরিবার জুম্ম গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উক্ত জায়গা থেকে কজোইছড়ি মুখ হয়ে হালিমপুর বিজিবি সীমান্তবর্তী ক্যাম্প পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে এই রাস্তাটি। আর সার্বোয়াতলী ইউনিয়নের তাংগুম মুখ ব্রিজ থেকে ঐ কজোইছড়ি ক্যাম্প বিজিবি রাস্তার সাথে সংযুক্ত হবে।
বর্তমানে উক্ত জায়গায় ১০ ফুট চওড়া ইট সুলিং রাস্তা রয়েছে এবং উক্ত রাস্তায় যানবাহন চলছে। ৩০ ফুট রাস্তা বৃদ্ধি করে ক্ষতি করার কোন প্রয়োজন নেই বলে ক্ষতির মুখে পড়া স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মৌজার হেডম্যান ও এলাকার গ্রামবাসীরা উক্ত ৩০ ফুট সওড়া সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, সীমান্ত সড়ক (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা) নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।