হিল ভয়েস, ১৮ আগস্ট ২০২২, ঢাকা: ঢাকায় ‘আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সুরক্ষা’ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেছেন, বর্তমানে সমতল ও পাহাড়ের আদিবাসীরা খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তারা সবক্ষেত্রে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তাদেরকে নিজ ভূমি থেকেও উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গতকাল ১৭ আগস্ট ২০২২ সিরডাপ মিলনায়তনে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভ (আরডিসি) ও ইউএনডিপির হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রাম আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফজলে হোসেন বাদশা এমপি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও আরডিসির চেয়ারপার্সন মেসবাহ কামাল।
মূল প্রবন্ধের উপর আরো আলোচনা করেন প্রতিথযশা নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্র্যাট সদস্য জান্নাত-ই-ফেরদৌসী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি ডিরেক্টর সুস্মিতা পাইক, খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব নির্মল রোজারিও, ভদন্ত সানন্দপ্রিয় ভিক্ষু প্রমুখ।
নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশে যত আইনই থাকুক না কেন, বাঙালি জাতি মূলত আইন অমান্যকারী জাতি। সর্বপ্রথম আইন অমান্য করে রাষ্ট্র নিজেই। এদেশের এমপি, মন্ত্রীরা রাস্তার উল্টোদিক দিয়ে গাড়ি চালায়। তাদের সঙ্গে দানব হয়ে যুক্ত হয়েছে ব্যবসায়ী ও আমলারা। তারা সকলে মিলে লুটপাট করে যাচ্ছে। নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। বাঙালি জনগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য, সহমর্মিতাই আইন, রীতি-নীতি ভাঙার অবসান ঘটাতে পারে। আর এমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য সবাইকে মিলে আন্দোলনে নামতে হবে।
দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, আদিবাসীরা দেশের সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠী। আদিবাসীরা নির্যাতিত হলে পুলিশও তাদের পাশে থাকে না। এভাবে চলতে পারে না। এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে আদিবাসীদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। আদিবাসীদের এই সংগ্রামে আদিবাসীদের সুহৃদ বাঙালিদেরকে সঙ্গে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশে বর্তমানে এক শ্রেণির লোক লুটপাট করে দ্রুত ধনী হচ্ছে। তারা দুর্বলের সম্পদ লুটপাট করছে।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও আদিবাসীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। আদিবাসীরা তাদের পরিচয় আদিবাসী হিসেবে দিতে পারছে না। জাতীয় সংসদে ২২ জন সংখ্যালঘু এমপি থাকলেও তারা আদিবাসীদের পক্ষে কথা বলেন না। তাদের কাছে এ নিয়ে বললে তারা বলেন, তারা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, তারা এই বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত তাদের স্বাধীনতার ১১ বছরের মধ্যে দেশটির আদিবাসীদের আলাদা নীতিমালা তৈরি করেছে। আর এ দেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরেও আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কোনো নীতিমালা হয়নি। তিনি বলেন, দেশের সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তারা পদে পদে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, শিক্ষামন্ত্রী আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা চালুর যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার মধ্যে পাঁচটি গোষ্ঠী নিজেদের মাতৃভাষায় পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। এটি প্রশংসার দাবি রাখে। এর বাইরে অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর নিজেদের ভাষায় শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। তিনি সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠনের তাগিদ দেন।