বিজয় বিকাশ ত্রিপুরা
সাম্প্রতিক সময়ে ইউপিডিএফ তথাকথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের জন্য মায়াকান্না করে চলেছে। অস্ত্রের মুখে তথাকথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বিরোধী সমাবেশ করতে নিরীহ নিরস্ত্র সাধারণ জনগণকে বাধ্য করে চলেছে। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে কার্বারী-হেডম্যান ও গণমাণ্য ব্যক্তির দস্তখত সম্বলিত স্মারকলিপিও প্রদান করে থাকে, যেখানে দস্তখতকারী অনেকে জানেনও না বলে জানা গেছে। অথচ ছাত্র অবস্থা থেকে শুরু হওয়া প্রসিত বিকাশ খীসার রাজনীতি ছিল হত্যার রাজনীতি, বিভাজনের রাজনীতি। এ বিষয়ে এখন বিস্তারিত বলার দরকার নেই। জনসংহতি সমিতির মুখপত্র ‘জুম্ম সংবাদ বুলেটিন, বুলেটিন নং ২৭, ১০ বর্ষ, জানুযারি ২০০২’ সংখ্যায় প্রকাশিত “পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী ছাত্র রাজনীতিতে প্রসিত চক্র” নিন্মোক্ত অংশ পড়লেই তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হবে।
“প্রসিত চক্রের মুখোশ উন্মোচিত:
সবকিছুর মূলে রয়েছে প্রসিতের ষড়যন্ত্র ও কুপরামর্শ। পিসিপিসহ তিন সংগঠনকে দুর্বল করার জন্য দীর্ঘদিনের তিল তিল করে যে সংগ্রামী ভাবমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছিল তা খন্ডিত করার মধ্য দিয়ে তার ক্ষতিসাধন করা হয়। সমস্ত গণতান্ত্রিক ও গঠনতান্ত্রিক নিয়ম নীতিকে উপেক্ষা করে প্রসিত চক্রের সহযোগী সঞ্চয় সংগঠনের ক্ষুদ্র একটি অংশকে নিয়ে ১৭ জুন’৯৭ তারিখ ৮ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করলে ১৮ জুন’৯৭ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রগতিশীল বৃহৎ অংশটি গঠনতন্ত্রকে সর্বোচ্চ মেনে চলার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্রাবাসে বিশেষ প্রতিনিধি সম্মেলন করতে বাধ্য হয়। সে প্রতিনিধি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেদিন বিকাল ৫ ঘটিকার সময় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ৩০ জুন’৯৭ ৮ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও ১-২ জুলাই’৯৭ ৭ম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার ঘোষণা দেয়া হয়। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মৃগাঙ্ক খীসা প্রমুখ। এভাবে প্রিয় লড়াকু সংগঠন পিসিপি’র গৌরবময় ইতিহাসে প্রসিত চক্ররা কালিমা লেপন করে, সংগঠনের উজ্জ্বল ভাবমূর্তির উপর মারাত্মকভাবে আঘাত হানে।
প্রসিত চক্রের মূল ভিত্তিটা খাগড়াছড়ি কেন্দ্রীক। ফলে ১৭-২০ জুন’৯৭ অষ্টম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও ৭ম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির একাংশ, দীঘিনালা, মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর, রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর ও কুতুকছড়ি শাখাসমূহ থেকে যোগদান করে। অন্যান্য এলাকা থেকেও ছিটেফোটা দু’একজন বিপদগামী কর্মী যোগদান করে। অপরদিকে সংগঠনের মূল নীতি-আদর্শে অনুপ্রাণিত এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুসারে অনুষ্ঠিত ৩০ জুন’৯৭ ৮ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও ৭ম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে ঢাকা মহানগর, বান্দরবান জেলাধীন সকল শাখা, খাগড়াছড়ি জেলাধীন মাটিরাঙ্গা থানা শাখা, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন শাখা থেকে সক্রিয়, ত্যাগী ও আদর্শিক কর্মীরা অনেকেই যোগদান করে। তৎসময়ে মানিকছড়ি ও রামগড়ে সংগঠনের শাখা ছিল না। লক্ষ্মীছড়ি ও গুইমারা শাখা ছিল নিষ্ক্রিয়। তারা কোনো পক্ষে যোগদান করেনি।
সাংগঠনিক কাজে প্রসিতচক্রের প্রতিবন্ধকতা:
পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের নামে প্রসিত চক্র পিসিপি’র মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর সংগঠনকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য এবং জনমনে যে সকল বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে তা দূরীভূত করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে গোটা পার্বত্য অঞ্চলে সাংগঠনিক সফর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি টীম জলি মং মারমা, মৃগাঙ্ক খীসা, ব্রজ কিশোর ত্রিপুরা, মনিন্দ্র চাকমা ও আমি প্রসিতের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত খাগড়াছড়ির বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করি। আগষ্ট মাসের শুরুতেই দীঘিনালার বাবুছড়া, বড়াদামসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় মতবিনিময় করি এলাকার মুরুব্বী ও ছাত্র যুবকদের সাথে। মতবিনিময় করার পর বিশেষ করে এলাকার ছাত্র-যুবকদের অনুরোধে এবং মুরুব্বিদের পরামর্শে ৪ আগষ্ট’৯৭ বড়াদামে পিসিপি, দীঘিনালা থানা শাখার কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত হয়। ৩ আগষ্ট’৯৭ সবাই বসে একটি খসড়া কমিটিও প্রস্তুত করি। কিন্তু ৪ আগষ্ট সকালে খবর পেলাম প্রসিত চক্র আমাদের মনোনীত সভাপতিসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে, হুমকি দিয়েছে কাউন্সিলে না আসার জন্য এবং তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে কাউন্সিল স্থলে হামলা করার জন্য।
আমাদের অনুষ্ঠান শুরু করার কথা ছিল সকাল ১০ টায়। তার আগে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা বড়াদামসহ অন্যান্য জায়গার উপস্থিত ছাত্র-যুবক ও অভিভাবকদের সাথে প্রসিত চক্রের কর্মকান্ডের বিষয়ে আলাপ করলাম। বড়াদমের ছাত্র-যুবক বন্ধুরা আমাদের আশ^স্ত করলো বড়াদমে এসে হামলা করার দুঃসাহস প্রসিত চক্রের নেই। যদি হামলা করে একজনও সুস্থ শরীরে ফেরৎ দেওয়া হবে না। বড়াদমের সেই সাহসী বৃদ্ধদের যে অপরিসীম সাহস ও বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কাউন্সিল করার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি চলতে থাকলো। আমরা যখন অনুষ্ঠান শুরু করতে যাচ্ছি ঠিক সেই সময়ে ধর্মজ্যোতির নেতৃত্বে প্রসিত চক্র আমাদের কাউন্সিল স্থলে এসে যায় এবং আমাদেরকে কাউন্সিল না করার জন্য চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। ধর্মজ্যোতির বক্তব্য হলো পিসিপির থানা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে সে রয়েছে। তাকে না জানিয়ে আমরা কাউন্সিল করতে যাচ্ছি কেন? অথচ আমরা যখন বাবুছড়া মিটিং করেছি সেই সময়ে ধর্মজ্যোতির সাথে আলাপ হয়েছে। তারপরও তাদেরকে আমি বুঝিয়ে বললাম যে, পিসিপি থেকে একটি ক্ষুদ্র অংশ পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের নাম দিয়ে বের হয়ে গেছে। আমরা মৌলিক দাবীগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই এটা স্পষ্ট যে এখন পিসিপিতে দুটো ধারা সৃষ্টি হয়েছে। তোমরা যদি আমাদেরকে বিশ্বাস করে থাক এবং আমাদের দাবীর সাথে একাত্ম হতে পার তাহলে কাউন্সিলে ঢুকে পড়। আর যদি পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনে বিশ্বাস কর তাহলে কোনো প্রকার ঝামেলা করার চেষ্ট না করে এখান থেকে চলে যাও। আমরা কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করেছি, কাউন্সিল অবশ্যই হবে। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রসিত চক্র সেদিন পিছু হটে যায়। আমরা সুশৃঙ্খলভাবে দীঘিনালা থানা শাখার কাউন্সিল সুসম্পন্ন করি।
সেদিনই সন্ধ্যায় আমরা পানছড়ি পৌঁছে যায়। ৫ আগষ্ট’৯৭ পিসিপি পানছড়ি থানা শাখার কর্মী সমাবেশ পূর্ব নির্ধারিত ছিল। পানছড়ি কর্মী সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল সকাল ১০ টায় বাজারের পাশে একটি ক্লাবে। কিন্তু সেদিন ৯ টার আগে প্রসিত চক্রের অনিমেষ চাকমার (পরবর্তীতে ভুল বুঝতে পেরে প্রসিত চক্র ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে) নেতৃত্বে ৮/১০ জন সন্ত্রাসী ক্লাবে অবস্থান গ্রহণ করে। আমাদের কর্মীরা তাদেরকে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বললে তারা অপারগতা প্রকাশ করে এবং বলে যে, পলাশ, জলিমং, মৃগাঙ্ক কাউকে ক্লাবে ঢুকতে দেবে না। তখন আমাদের ছাত্র সংখ্যা খুব বেশী ছিলো না। পরবর্তীতে আমাদের ব্যাপক কর্মীর সমাগম ঘটলে প্রসিত চক্র সুর পাল্টায়। তখন বলে তারা আসতে পারবে কিন্তু প্রসিত বিরোধী কোন বক্তব্য দিতে পারবে না। তখন আমাদের কর্মীরা তাদের উত্তম মধ্যম দিয়ে বের করে দেওয়ার অনুমতি চায়। আমরা অনেক কিছু ভেবে তা অনুমোদন করিনি। প্রথমতঃ আমরা কারও সাথে সংঘাত হোক সেটা চায় না। তাছাড়া তাদেরকে মারধর করলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ সেদিন ছিল বাজারের দিন। প্রসিত চক্র মার খেয়ে যদি বাজারে গিয়ে কোন বাঙালিকে মারধর করে তাহলে পরিস্থিতি সাম্পদায়িক দাঙ্গায় রূপ নেবে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে পূর্ব নির্ধারিত স্থানের পরিবর্তে বৌদ্ধ বিহারের পাশে কর্মী সমাবেশ শুরু করি। এমন সময় খবর এলো প্রসিত চক্র পেরাছড়াস্থ গিরিফুল শিশু সদন এলাকায় গাড়ী থামিয়ে তল্লাসী চালাচ্ছে আমাদেরকে অপহরণ, হত্যা বা গুম করার জন্য। কাজেই আমরা যেন পানছড়িতে অবস্থান করি। আমাদের কর্মী সমাবেশ যখন শেষ পর্যায়ে তখন খাগড়াছড়ি থেকে একটা চাঁদের গাড়ী (জীপ) নিয়ে আমাদের সমর্থিত ২০/২৫ জন ছাত্র পৌঁছে যায় আমাদেরকে নিয়ে আসার জন্য। আসার পথে গিরিফুল এলাকায় কিরিচ, হকিষ্টিক নিয়ে ১০/১৫ জন প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীকে দেখা যায়। আমাদের ছাত্র সংখ্যা বেশী হওয়ায় তারা হামলা করার সাহস পায়নি।
৪ সেপ্টেম্বর’৯৭ খাগড়াছড়ি জেলার মাইচছড়ির বলিপাড়া বৌদ্ধ বিহারে পিসিপি এক জনসভা আয়োজন করলে চুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসী প্রসিত চক্র সমাবেশ শুরুর আগে হামলা চালায়। সেখানে ছাত্রনেতা নয়ন জ্যোতি চাকমাকে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করে। ইসলামী ছাত্র শিবিরের কায়দায় তার হাত ও পায়োর রগ কেটে দেওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় ছাত্র জনতা সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে চলে যাওয়ার সময় তৎকালীন পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জলিমং মারমার ব্যবহৃত ব্যাগ ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সমাবেশ ভন্ডুল করে উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে আঘাত করা। সে সময় টার্গেট করা নেতৃবৃন্দ না থাকায় তারা নয়ন জ্যোতির উপর হামলা চালায়। তাদের সে দিনের উদ্দেশ্য সফল করতে দেয়নি মাইচছড়ির সচেতন ছাত্র-জনতা।
শুধু তাই নয়, ঘাগড়াতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বর্তমান বিভেদের কারণ ও সঠিক পথটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার জন্য ঘাগড়ার ইউপি কার্যালয়ে আয়োজিত কর্মী সভায় প্রসিতের পকেটকর্মী ও স্থানীয় সন্ত্রাসী বাবুর্শে মারমার (পরবর্তীতে নিজের ভূল বুঝতে পেরে স্বপক্ষ ত্যাগ করেন) নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মী তনয় দেওয়ান ও বোধিসত্ব চাকমার উপস্থিতিতে কর্মী সভা আয়োজনে বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। এসময় ঘাগড়ার দোদুল্যমান কর্মীরা বাবুর্শের এহেন আচরণ দেখলে নিজেরাই প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে আসে এবং বাবুর্শে মারমাকে তার সাঙ্গপাঙ্গসহ হলরুম থেকে বের করে দেয়।
অনুরূপভাবে নান্যাচর থানা সদরে সন্তোষ বিকাশ খীসা, বোধিসত্ব চাকমা ও সুদীর্ঘ চাকমার নেতৃত্বে একদল কর্মী সাংগঠনিক সফরে গেলে নান্যাচর বাজারে প্রসিত চক্রের পকেট কর্মী তপনজ্যোতি ও উথোয়াইচিং মারমা তাদেরকে বাধা প্রদান করে। পরে সেখানে খুল্যাং পাড়ায় আয়োজিত জনসভায় তারা আবার বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। কিন্তু জনগণের তরফ থেকে তখন তাদের বলা হয় যে, এভাবে বাধা না দিয়ে তোমাদের যা বলার আছে তা মিটিংএ এসে বলো। তখন উথোয়াচিং মারমা জনতার রোষ দেখে সুর পাল্টিয়ে জনসভায় বলেন যে, আমরা জনসংহতি সমিতির বিপক্ষে নই। জনসংহতি সমিতি যা বলবে তাই আমরা মেনে নেবো। তখন আমাদের নেতৃবৃন্দ বলেন যে, তাহলে তোমরা কার ইঙ্গিতে বাধা দিচ্ছো? তখন তারা যুক্তি দেখাতে না পেরে জনসভার স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এভাবে প্রতিটি এলাকায় যেখানে প্রসিত চক্রের লোকজন রয়েছে সেখানে তারা মরণপণ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তাদের দুর্বলতা ছিল যে, তাদের সমর্থিত এলাকায় যদি আমরা প্রসিতের কুকীর্তিগুলো তুলে ধরি তাহলে তার জনসমর্থন হারাবে। ফলে কোন অবস্থায় তাদের সমর্থিত এলাকায় বিনা বাধায় সমাবেশ বা মত বিনিময় সভা করতে দেয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর:
২ ডিসেম্বর ৯৭ প্রসিত চক্রের সমস্ত বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত করে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রসিত চক্রের সমস্ত মিথ্যা প্রমাণিত হলেও তাদের অন্ধ সমর্থকদের আরো অন্ধ করে রাখার জন্য সেদিনই বিকালে ঢাবির সড়ক দ্বীপে একটি মিছিল শেষে সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রসিত চক্র চুক্তির কপি নাম দিয়ে একগাদা কাগজ পুড়িয়ে ফেলে এবং বলে সরকার ও জনসংহতি সমিতির স্বাক্ষরিত চুক্তিতে জুম্ম জনগণের কোন অধিকার অর্জিত হয়নি। এটা ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা। কারণ প্রসিত চক্র নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ১০ মার্চ ৯৭ থেকে বৈঠক প্রক্রিয়া বিরোধিতা করে আসছিল। তখন থেকে তারা বিশ^াস করতো জনসংহতি সমিতি সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি করতে যাচ্ছে ৯৭ সালের জুন মাসের মধ্যে, যে চুক্তিতে জুম্ম জনগণের অধিকার বা স্বার্থ অর্জিত হবে না। তারা এটাও বিশ্বাস করতো যে, জনসংহতি সমিতির বিরাট একটা অংশ চুক্তির বিরোধিতা করবে, অস্ত্র জমা দেবে না এবং সেই অংশটির সাথে তারা একাত্ম হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তাদের সেই আশা ও বিশ্বাস মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে জনংসহতি সমিতির সকল সদস্য অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে, জুম্ম জনগণের ন্যুনতম বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে।
আমরা যারা পিসিপির মূল ধারার কাজ করে চলেছি অর্থাৎ সংগঠনের গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে সমুন্নত রেখে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃপ্ত শপথ নিয়ে কাজ করে চলেছি চুক্তি হওয়ার সাথে সাথে আমরা চুক্তিকে সমর্থন করিনি। চুক্তির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে এবং পাশাপাশি জেলা পরিষদের আইনগুলো (১৯৮৯) দেখে সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, এই চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে জুম্ম জনগণের ন্যূনতম বেঁচে থাকার অধিকার থাকবে। আমরা এই চুক্তিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের অগ্রগতির একটি উল্লেখযোগ্য ধাপ হিসেবে চিহ্নিত করে ৬ ডিসেম্বর ৯৭ খাগড়াছড়িতে ও ১৫ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটিতে চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করি।
জেএসএস সদস্যদের অস্ত্র জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত পত্রপত্রিকার লেখা ও বক্তব্যে প্রসিত চক্রের আক্রমণের টার্গেট ছিলেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা ও তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জনসংহতি সমিতির সকল সদস্য অস্ত্র জমা দেওয়ার পর প্রসিত চক্রের নেতৃত্ব কর্মীদের ক্ষোভের মধ্যে পড়েন। কেননা প্রসিত চক্র বলেছিল জনসংহতি সমিতির একটি বিরাট অংশ অস্ত্র জমা দেবে না। অথচ তারাই অস্ত্র জমা দিলেন কেন- কর্মীদের এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো। সেদিন প্রসিত চক্র কর্মীদের এই বলে শান্তনা দেয় যে, কিছুদিনের মধ্যে আমাদের অটোমেটিক হাতিয়ার আসবে। কাজেই চিন্তার কোন কারণ নেই। কিন্তু অটোমেটিক হাতিয়ার দেখতে না পেয়ে কর্মীরা আরো ক্ষুদ্ধ হয়। ফলে প্রসিত চক্র ছলনার আশ্রয় নেয়। বিশ্বস্ত কর্মীদের দিয়ে নকল অটোমেটিক হাতিয়ার সাধারণ কর্মীদের দেখায়। প্রসিত চক্রের এ ধরনের ভন্ডামী দেখে অনেকেই স্বপক্ষ ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। অবশ্যই জনসংহতি সমিতির একটা অংশকে নিজেদের পক্ষে রাখার কম চেষ্টা করেনি তারা। চুক্তির পর পরই তাদের এক পকেট সাংবাদিককে দিয়ে আজকের কাগজে রিপোর্ট লিখে দেয় যে, মেজর বাতায়ন তার গ্রুপ নিয়ে বিদ্রোহ করেছে। তিনি অস্ত্র জমা দিতে চান না। কিন্তু লারমার অনুগত বাহিনী তাকে নিরস্ত্র ও গ্রেপ্তার করেছে। এভাবে তারা পার্টির অভ্যন্তরে ভাঙ্গন সৃষ্টি করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে যায়। ফলে প্রসিত চক্রের টার্গেট হয়ে যায় পুরো পার্টি, অস্ত্র জমাদানকারী সকল সদস্য ও তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
প্রসিতচক্রের হত্যার রাজনীতি শুরু
চুক্তির পর পরই প্রসিত চক্র হত্যার রাজনীতি শুরু করে। সর্ব প্রথমে তারা খুন করে কুতুকছড়ির অশ্বিনী কুমার চাকমাকে। অশ্বিনী কুমার চাকমা ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরত কুমার চাকমার ছোট ভাই। মরত কুমার চাকমা ছিলেন চুক্তির একজন সমর্থক। তার দুই ছেলেও চুক্তি পক্ষের পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাথে যুক্ত ছিল। ১৬ জানুয়ারী ৯৮ চুক্তির সমর্থনে কুতুকছড়ি বাজার একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রসিত চক্রের বাধা সত্ত্বেও অনেক লোক জমায়েত হয় সেখানে। সেই সমাবেশ আয়োজনের ক্ষেত্রে মরত কুমারের ভূমিকা ছিল নজরে পড়ার মত। অশ্বিনী কুমারও সেই সমাবেশে যোগ দেন। দু’দিন পর ১৮ জানুয়ারি ৯৮ প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীরা মরত কুমারকে মারার জন্য যায়। তাকে না পেয়ে তার ছোট ভাই অশ্বিনী কুমার চাকমার উপর আক্রমণ চালায়। কিছু সময় মার খাওয়ার পর অশ্বিনী কুমার আত্মরক্ষার জন্য কোদাল হাতে নিলে প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীরা চারদিকে ঘিরে পাথর ছুড়ে মারতে থাকে। অশ্বিনী বাঁচার জন্য আর্মী ক্যাম্পের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতগুলো সন্ত্রাসীর সাথে একজনের মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। একটার পর একটা পাথর দিয়ে বার বার আঘাত করতে থাকে সন্ত্রাসীরা। ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। এভাবেই চুক্তি বিরোধীদের হাতে প্রথম জীবন দিলেন অশ্বিনী কুমার চাকমা। অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে কেটে যেতে থাকে অশ্বিনীর বিধবা স্ত্রীর দিনকাল। কিছুদিন আগে প্রসিত চক্রের তথাকথিত এক নেতা তার প্রতি দরদ দেখিয়ে মদ বিক্রির অনুমতি দেয়। মদ বিক্রি করে কোন মতে চলছে বিধবার অভাবী সংসার।
অশ্বিনীর মৃত্যুর পর দাহক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য যখন আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মিটিং চলছিল তখনই ছাত্রনেতা বোধিসত্ব চাকমা সরেজমিনে ঘুরে এসে রিপোর্ট দেয় যে, প্রসিত চক্র রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে। তারা চুক্তির যে কোন সমর্থককে খুন করতে পারে। যদি অশ্বিনীর দাহক্রিয়ায় যাওয়া হয় তাহলে অবশ্যই আমাদের আঘাত করবে তারা। স্থল বা নৌ পথ কোনটাই নিরাপদ নয়। তারপরও আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম উপস্থিত সকল নেতৃবৃন্দ দাহক্রিয়ায় যাবো। একটা বাস ও একটা মাইক্রো নিয়ে ৬০/৭০ জনের একটা দল তৎকালীন সভাপতি থোয়াই অং মারমার নেতৃত্বে দাহ অনুষ্ঠানে যায়। যাবার পথে প্রসিত চক্রের অন্যতম সহযোগী অভিলাষসহ ৪/৫ জনকে দেখতে পেয়ে আমাদের কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে তাদেরকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে আসার প্রস্তাব করে। আমার গাড়ী না থামিয়ে কর্মীদের বলি আমরা অশ্বিনীর দাহক্রিয়ায় যাচ্ছি। তাই প্রধান হচ্ছে দাহক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়া নয়। আমরা অশ্বিনীর বাড়ীতে পৌঁছলে শত শত জনতা আমাদের স্বাগত জানান যে, তারা খুবই অসহায়, সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি। ফলে তারা চান না অশ্বিনীকে রাজনৈতিক মর্যাদায় দাহ করা হোক। এরমধ্যে আমরা খবর পেলাম সন্ত্রাসীরা আমাদেরকে হামলা করার জন্য অপেক্ষা করছে। দাহক্রিয়া ঘন্টা দু’য়েক দেরি হতে পারে বলে জেনে আমরা সেখান হতে শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে এলাম।
বাজারে হামলা করার কথা শোনা গেলেও কেউ কিছু করেনি। আমরা আসতে থাকলাম। কিছুদূর এসে দেখা গেল অভিলাষসহ কয়েকজন রাস্তার কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে গালিগালাজ করছে। আমাদের কর্মীরা তাদেরকে ধাওয়া করতে চাইলেও আমরা দিইনি। কিছুদূর এসে দেখি আবাসিক স্কুলের কাছে ধর্মঘরের পাশে সন্ত্রাসীরা ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে এবং তিন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে হামলার জন্য অবস্থান করছে। তখন আর কোন উপায় না দেখে আমাদের কর্মীদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। মুহূর্তের মধ্যে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে ব্যারিকেড ভেঙ্গে ফেলে আমাদের কর্মীরা। সেদিন দেখেছি প্রসিত চক্রের ভীরুতা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের উপর হামলা করা। কিন্তু আমাদের কর্মীরা গাড়ী থেকে হুংকার দিয়ে নামার সাথে সাথে তারা পালিয়ে যায়। আমারাও নিরাপদে চলে আসি।
জনসংহতি সমিতির সদস্যরা অস্ত্র জমা দেয়ার পর পরই প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীরা শুরু করে সমিতির সদস্যদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়। সমিতির যে কোন সদস্যকে পেলেই সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মুক্তি দেয়। তাদের ক্ষোভের কারণ হলো সমিতির সদস্যরা তাদের পক্ষ না নিয়ে কেন সন্তু লারমার স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী অস্ত্র জমা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। ৫০ হাজার টাকা একটা পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য খুবই নগণ্য। সেই টাকায় জায়গা ক্রয় করা তো দূরের কথা চলনসই একটা বাড়ী বানানোর জন্যও যথেষ্ট নয়। ফলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সাথে সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে ৫০ হাজার টাকা দাবী মেটাতে সমিতির সদস্যদেরকে বাপ-দাদার ভিটেমাটি বিক্রি করে দেয়া ছাড়া অন্য কোন পথ ছিল না। এভাবে প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীদের অপহরণের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় পার্টির অনেক অনেক সদস্য-পরিবার।
জনসংহতি সমিতির সদস্যদের অপরহণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মধ্য দিয়ে খুব বেশীদিন সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি প্রসিত চক্র। কিছুদিনের মধ্যে তারা শুরু করে হত্যার রাজনীতি। দু’ যুগের অধিক সশস্ত্র আন্দোলনে যারা সবচেয়ে সাহসী যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে, যারা বিভিন্ন যুদ্ধে শত্রু সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে অস্ত্র গোলাবারুদ ছিনিয়ে এনেছেন তারাই ছিল সন্ত্রাসীদের সবচেয়ে টার্গেট। ফলে বীর শহীদ তার্জেন, অর্জিন, স্বাধীন, লাব্বেসহ মোট ৪১ জন জনসংহতি সমিতির সদস্যকে প্রসিত চক্র খুন করেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই এই তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। যারা দীর্ঘ দ’ যুগ ধরে শত্রুর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত হননি, আর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধে জয়ী হয়েছে সেই সকল বীর যোদ্ধারা অস্ত্র জমা দেয়ার পর নিজের জাতির বিপথগামী ও বেঈমানদের নগ্ন হাতে জীবন দিচ্ছেন এটা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও মর্মান্তিক।
অস্ত্র জমা দেয়ার পর চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করতে থাকে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা। কোনো কোনো এলাকার গ্রামের বাড়ীতে থাকতে পারে না কখন সন্ত্রাসীরা এসে অপহরণ করে, খুন করে। রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি আসা-যাওয়া করা যায় না নিরাপত্তার অভাবে। কুতুকছড়িসহ দু’একটি জায়গায় সন্ত্রাসীরা গাড়ী তল্লাসী চালিয়ে অপরহণ করে নিয়ে যায়। নিয়ে গেলে আর ফেরৎ আসে না। ফেরৎ আসলেও হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে নিজের পরিবারকে নিঃস্ব করে। পানছড়ি থেকে খাগড়াছড়ি কিংবা খাগড়াছড়ি থেকে পানছড়ি যাওয়া যায় না পেরাছড়াস্থ গিরিফুল এলাকায় অস্ত্রের মুখে সন্ত্রাসীরা বাস থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। উঠিয়ে গেলে পরিণতি যা হবার তা হয়ে যায়।
সমঝোতার পরও প্রসিতচক্রের তান্ডব:
নিজের জাতির ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছে, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে- প্রতিরোধ করেছে তাদের পক্ষে এধরনের একটা জীবন মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি, হতে পারে না। ফলে প্রসিত চক্রের বিরুদ্ধেও তারা রুখে দাঁড়ায় নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য। আর তখনই প্রসিত চক্র বুঝতে পারে তাদের সন্ত্রাসীদের শক্তি সাহস কতটুকু। তাদের কেউ কেউ পালিয়ে যায় ইপিজেড-এ, কেউ যায় ঢাকায়। যাদের কোথাও যাবার জায়গা নেই তারা চাপ সৃষ্টি করে সমঝোতার জন্য। সমঝোতার প্রস্তাব দিতে বাধ্য হয় প্রসিত। জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকেও তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়া হয়। কারণ জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক নীতি হচ্ছে- ‘শত্রুকে নিরপেক্ষ কর, নিরপেক্ষকে সক্রিয় করা এবং সক্রিয়কে আরো অধিকতর সক্রিয় করা।’ পার্টির সাংগঠনিক এই নীতি অনুযায়ী প্রসিত চক্রের সাথে সমঝোতার জন্য বৈঠক করে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০০ তারিখে খাগড়াছড়ির নারানখাইয়ার অনন্ত বিহারী খীসার বাড়ীতে। সেখানে জেএসএস এর পক্ষে নেতৃত্ব দেন তাতিন্দ্র লাল চাকমা (মেজর পেলে)। প্রসিত চক্রের নেতৃত্ব দেন দীপ্তি শংকর চাকমা। উভয় পক্ষ একমত হয়ে সমঝোতা চুক্তি করেন যে,
১. ইতিমধ্যে যারা অপহৃত হয়েছেন তাদের উদ্ধারকল্পে উভয় পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান করবে।
২. উভয় পক্ষ চলাফেরাকালীন কোনো প্রকার বাধা, ধর-পাকড় করবে না এবং মিটিং মিছিলে কোনো পক্ষ প্রতিপক্ষকে কোনো বাধা প্রদান করবে না।
৩. যোগাযোগের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আলোচনায় বসার দিন, তারিখ ও জায়গা ঠিক করা হবে।
কিন্তু সমঝোতা চুক্তির ১২ ঘন্টার পর প্রসিত চক্র সমিতির একজন সদস্য সুখেন্দু বিকাশ চাকমাকে খাগড়াছড়ির দাঁতকুপ্যা এলাকায় গুলি করে হত্যা করে। ফলে চুক্তি কাগজে লেখা ছাড়া বাস্তবে আর কিছুই হয়নি। প্রসিত চক্রের সমঝোতা চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল সমঝোতার নামে পার্টির সদস্যদের খুন করা এবং সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করা। যেভাবে করেছিল আশির দশকে বিভেদপন্থী গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্ররা। তারাও সমঝোতার কথা বলে জুম্ম জাতীয় চেতনার অগ্রদূত এমএন লারমাকে ’৮৩ সালের ১০ নভেম্বর নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর প্রসিত চক্র আবারো সমঝোতার প্রস্তাব দেয় যখন পার্টির সদস্য জীবন প্রদীপ দেওয়ানকে অপহরণ করেও স্থানীয় জনগণের চাপের মুখে হত্যা করতে পারেনি কিংবা টাকার বিনিময়ে তার আত্মীয়-স্বজনরা তাকে ছাড়িয়ে আনেননি। তিন পার্বত্য জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে প্রস্তাব দেয় যে, জনসংহতি সমিতি যদি সমঝোতা বৈঠকে বসতে রাজী হয় তাহলে তারা জীবন প্রদীপ দেওয়ানকে নিঃশর্ত মুক্তি দেবে। তিন পার্বত্য জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আহ্বানে জনসংহতি সমিতি সাড়া দিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০০ সমঝোতা বৈঠকে বসতে রাজী হয়। সেই বৈঠকে জেএসএস এর পক্ষে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমা ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সত্যবীর দেওয়ান। অপরপক্ষে প্রসিত চক্রের পক্ষে ছিলেন সঞ্চয় চাকমা, অভিলাষ চাকমা ও অনিমেষ চাকমা। তিন পার্বত্য জেলা থেকে গৌতম দেওয়ান, মুথুরা লাল চাকমা, উপেন্দ্র লাল চাকমাসহ অনেকেই ছিলেন। প্রসিত চক্রের পক্ষ থেকে সেই বৈঠকে আবারও প্রস্তাব দেয়া হয় যে, উভয়ের মধ্যে আক্রমণ না করা ও ন্যূনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে আন্দোলন করা। সেই বৈঠকে জেএসএস এর পক্ষ থেকে বলা হয় যে, প্রসিত চক্র যে সকল অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ ইত্যাদি করে থাকে সে সকল অস্ত্র তৃতীয় কোন পক্ষের হাতে জমা দিতে হবে এবং জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে সকল সশস্ত্র তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া জনসংহতি সমিতি যেহেতু চুক্তি করেছে চুক্তি বাস্তবায়নই হচ্ছে আমাদের আপাতত কর্মসূচী। কাজেই চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসলে সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু প্রসিত চক্র কোন প্রস্তাবেই সাড়া দেয়নি। ফলে কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেই বৈঠকের অপমৃত্যু ঘটে।
প্রসিতের অনেক অগুণের মধ্যেও কিছু কিছু গুণ আছে। তার মধ্যে একটি হলো মানুষের দেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা। তিনি এটা প্রয়োগ করে চলেছেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জন্মের পর থেকে আজ অবধি। যে কথা আমি শুরুর দিকে বলেছি পিসিপির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য হিসেবে প্রসিতকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে চবির অনেক ছাত্র নেতৃবৃন্দের দ্বিমত ছিল। তারপরও বৃহত্তর ঐক্যের কথা ভেবে ধীরাজ চাকমা ও ধীমান চাকমারা তাকে অন্তর্ভুক্ত করে সদস্য হিসেবে। দ্বিতীয় কমিটিতে সে যখন ভালো কোনো পদে যেতে পারলো না তখন দ্বিতীয় কমিটির অনেক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে গ্রুপিং করতে থাকলো। সে সময় কাজে লাগালো এডভোকেট শক্তিমানসহ বেশ কয়েকজনকে। বিশেষ করে কাজে লাগিয়েছেন জনসংহতি সমিতির পৃষ্ঠপোষকতায় ও এডভোকেট শক্তিমান চাকমাদের সহযোগিতায় তৃতীয় কমিটিতে প্রসিত সভাপতির পদটি দখল করে নেয়। তৃতীয় কমিটির মেয়াদ যখন শেষ প্রান্তে তার কিছু পকেট কর্মী দিয়ে প্রচার করলো সে আর কমিটিতে থাকছে না। এমনকি গলায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখলেও থাকবে না। অথচ ভিতরে ভিতরে করলো লবিং ও গ্রুপিং। ফলে কাউন্সিলে এসে সে আবার দখল করে নিলো সভাপতির পদটি। সে যখন বিদায় নিয়ে যাচ্ছে তখন সভাপতি হওয়ার কথা ছিল এডভোকেট শক্তিমান চাকমার। কিন্তু কাউন্সিলের কয়েক মাস আগে কোনো একটা ব্যক্তিগত বিষয়ে শক্তিমান চাকমার সাথে বিরোধ লেগে যায় তার। তখন তিনি কেএস মং মারমাকে সভাপতি করার প্রস্তাব দেয়। কেএস মং মারমা যেহেতু মারমা সম্প্রদায়ের সেহেতু বৃহত্তর স্বার্থে শক্তিমান চাকমা তার জন্য সভাপতির পদটি ছেড়ে দেন।
কেএস মং কমিটির সভাপতি হলেও খুব বেশী দিন কাজ করতে পারেননি। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে অসহযোগিতা করা হয়েছে। ফলে তিনি দায়িত্ব নেয়ার কয়েক মাস পর পরই বান্দরবানে চলে যান। কেন্দ্রীয় দপ্তর ছেড়ে কেন বান্দরবানে অবস্থান করছেন- এই প্রশ্ন কে এস মং মারমাকে প্রতিনিধি সম্মেলনে করা হলে তিনি জবাব দেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েও আমি জানি না কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তগুলো কখন-কোথায় হয়, কিভাবে আসে?’ অপরদিকে প্রসিত পিসিপি থেকে বিদায় নেয়ার পর পাহাড়ী গণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রধীর তালুকদারকে কৌশলে সরিয়ে ঐ পদটি দখল করে নেয়। প্রসিতের রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষণীয় বিষয় ছিল প্রসিত যখনই সর্বোচ্চ পদের আসীন হন তখন অর্থ সম্পাদক পদটি দেবাশীষ চাকমা বাবলুকে দেন। ইউপিডিএফ গঠনের আগ পর্যন্ত প্রসিত পাহাড়ী গণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদটি দখল করে রাখে এবং দেবাশীষ চাকমা আমেরিকা যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রসিতের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
জনসংহতি সমিতির ঢাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য সমীরণ চাকমা প্রসিতের খপ্পরে পড়ে পাহাড়ী গণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের দিন প্রসিতের নির্দেশে তিনি বিবিসিতে এক সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে বলেন, চুক্তি করে আমরা কিছুই পাইনি। অথচ ৯৮ এর ২৬ ডিসেম্বর যখন ৫ সদস্য বিশিষ্ট ইউপিডিএফ এর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলো সেই কমিটিতে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হলো না। প্রয়োজন শেষে এক পর্যায়ে তাকে সংগঠন থেকে দূরে করে রাখা হলো। ফলে তিনি পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পেরে পার্টির সাথে হাত মেলান। এভাবে অসংখ্য মানুষকে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য প্রসিত ব্যবহার করেছে এবং প্রয়োজন শেষে দূরে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমানে যারা আজ ব্যবহৃত হচ্ছে তাদেরকে একদিন প্রসিত দূরে ছুড়ে ফেলে দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
প্রসিত বিকাশ খীসা একেবারে জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক নয় একথা ঠিক নয়। তিনিও একসময় জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক এবং জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের পথিক ছিলেন। অনুরূপভাবে ৮৩ সালে গৃহযুদ্ধের মূল হোতা জুম্ম জাতির মহান নেতা এম এন লারমার হত্যাকারীরাও দেশপ্রেমিক ছিলেন, তারাও জুম্ম জাতির মুক্তির জন্যে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাদের জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম সেসময়ে শাসকগোষ্ঠীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে দেশ ও জাতির ক্ষতি সাধন করেছিল একথা কারো অজানা নয়। প্রসিত খীসার রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে বিশেষ করে ৯৭ থেকে আজ পর্যন্ত তার রাজনৈতিক কার্যকলাপগুলি বিশ্লেষণ করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তার জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম জুম্ম জাতিকে প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জুম্ম জনগণ তিল তিল করে বহু রক্ত, শ্রম ও মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে সংগ্রামী ঐতিহ্য গড়ে তুলেছিল প্রসিতের হঠকারী কার্যকলাপের জন্য তা আজ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তার সেই জাতীয় মুক্তির আকাঙ্খা জাতিকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করতে চলেছে। প্রসিত খীসার এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করে সঠিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অনুরূপভাবে প্রসিতের পক্ষ হয়ে যারা জাতিকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে তাদেরও বিষয়টা গভীরভাবে উপলদ্ধি করার সময় এসেছে বলে মনে করি।
গত ১ আগষ্ট ২০০১ ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ইউনিট থেকে একটা লিফলেট প্রকাশিত হয়। লিফলেটের হেডিং এ লেখা ছিল- ‘জেএসএস এর প্রতি আহ্বান- ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি নয়, আসুন জনগণের অধিকার আদায়ে সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই’। লিফলেটের শেষে তারা লিখেছে ‘ইউপিডিএফ অতীতে জেএসএস এর কোনো গণতান্ত্রিক কাজে বাধা দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না। ভিন্নমত সত্ত্বেও জেএসএস এর ডাকা হরতালে সমর্থন দিয়ে শুভেচ্ছার হাত প্রসারিত করেছে। আমরা আবারও ঘোষণা দিচ্ছি আমাদের পার্টি চুক্তি বাস্তবায়নে জেএসএসকে সহায়তা দেবে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আসুন আমরা যুগপৎভাবে আন্দোলন গড়ে তুলি।’ প্রসিত চক্রের এই আহ্বান সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে চমৎকার। কারণ ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি কেউ চায় না। প্রকৃত অর্থে যারা জুম্ম জাতীয়তাবাদী এবং অধিকার প্রত্যাশী তারা সবাই চায় ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু যারা অতীত সম্পর্কে খবর রাখে কিংবা প্রসিত চক্রের উৎপত্তি, বিকাশ ও তাদের সম্পর্কে ভালো করে জানে তাদের কাছে এই আহ্বান হাস্যকর। এটা সহজ সরল জুম্মদেরকে প্রতারণা করার কৌশল ছাড়া কিছুই নয়।
প্রসিত চক্র শুরুতেই বলেছিল যে, তারা অতীতে জেএসএস এর কোন গণতান্ত্রিক কাজে বাধা দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না একথা সত্য নয়। তারা প্রতি পদে পদে জেএসএস এর গণতান্ত্রিক আন্দেলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তন্মধ্যে একটি হলো ১০ নভেম্বর ১৯৯৮ যখন জেএসএস কর্মী সমর্থকরা আসার পথে প্রসিত চক্র কর্তৃক বাধাগ্রস্ত হয়। প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীরা সেদিন বিজিতলা নামক জায়গায় সকালা বেলা এম এন লারমার ছবি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে ফেলে এবং মহালছড়ি থেকে অনুষ্ঠানে আসা একটি বাস সেখানে আটকে রাখে। অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যার দিকে কর্মীদের বহনকারী ১০ টি বাস মহালছড়ি ফেরত যাওয়ার পথে বিজিতলায় প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালায়। সেখানে জনসংহতি সমিতির জীবন প্রদীপ দেওয়ান, ইরান কুমার চাকমাসহ ২০ জন সদস্য-সমর্থক গুরুতর আহত হন এবং বাসগুলো ভাঙচুর করা হয়।
তারা নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক দাবী করলেও বাস্তবিক অর্থে তারা গণতান্ত্রিক নয়। তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে অগণতান্ত্রিক আচরণ করে চলেছে। জনসংহতি সমিতির সদস্যরা চুক্তির পর পরই যখন অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য যাচ্ছে তখন তাদেরকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে, জুতা দেখিয়ে হেনস্থা করে, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও জুম্ম জনগণের পরীক্ষিত নেতা সন্তু লারমার মাথায় শিং এঁকে দিয়ে পোষ্টার ছাপায় ও দেওয়াল লিখন করে অসুস্থ ও অগণতান্ত্রিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। দীর্ঘ আড়াই দশক দরে কঠোর কঠিন পরিশ্রম করে জীবন বাজী রেখে যারা জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিল এবং একটা চুক্তির মধ্য দিয়ে অধিকারের সনদ নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল তাদেরকে এভাবে হেনস্থা করা কোনো দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক মানুষের আচরণ বা কাজ হতে পারে না।”