হিল ভয়েস, ২৫ আগস্ট ২০২২, রাঙ্গামাটি: আগামীকাল (২৬ আগস্ট ২০২২) থেকে রাঙ্গামাটি শহর এলাকায় ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান (আর এস দেওয়ান) এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমবারের মত ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২২ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিন বিকাল ৩:০০ টায় রাঙ্গামাটি শহরের রাঙ্গাপানি এলাকাস্থ কান্ত স্মৃতি ফুটবল মাঠে এই ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটি কর্তৃক অনুষ্ঠিতব্য ফুটবল টুর্নামেন্টটি উদ্বোধন করবেন চাকমা সার্কেলের চীফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। এছাড়া উপস্থিত থাকবেন এলাকা গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিকাল ৪:০০ টায় খিপ্যা পাড়া একাদশ বনাম রংখ্রে ডং একাদশ এর মধ্যে টুর্নামেন্টের প্রথম খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, এই টুর্নামেন্টে সর্বমোট ২৫টি দল অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আরো অনেক দল অংশগ্রহণ করতে চাইলেও ইতোমধ্যে টুর্নামেন্টের নির্ধারিত দলের সংখ্যা পূরণ হওয়ায় সেসব দল অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
এবারের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী দলসমূহ হল- ১. রাঙ্গাপানি স্পোর্টিং ক্লাব, ২. আলুটিলা একাদশ, ৩. ডেপ্পোছড়িমুখ পাড়া একাদশ, ৪. রাঙ্গামাটি শহর একাদশ, ৫. মোনঘর শিশু সদন একাদশ, ৬. আমছড়ি একাদশ, ৭. রাণী বিনীতা রায় (রাবিরা) ক্লাব, কল্যাণপুর, ৮. রাঙ্গাপানি জুনিয়র একাদশ, ৯. রংখ্রে ডং মারমা একাদশ, ১০. ডিয়ার পার্ক, রাঙ্গামাটি পর্যটন এলাকা, ১১. হাজলং একাদশ, বাঘাইছড়ি, ১২. বিএম কলেজ একাদশ, ১৩. জাগরণ ক্লাব, মধ্যপাড়া, সাপছড়ি, ১৪. পরমাণু এফসি, রাঙ্গামাটি সদর, ১৫. খিপ্প্যা পাড়া একাদশ, ১৬. কর্ণফুলী ইউনাইটেড, তবলছড়ি, ১৭. চিৎমরম একাদশ, কাপ্তাই, ১৮. হ্যাচারি একাদশ, ১৯. শতদল স্পোর্টিং ক্লাব, আসামবস্তি, ২০. কাটাছড়ি স্পোর্টিং ক্লাব, ২১. মিতিঙ্গ্যাছড়ি একাদশ, সুবলং, বরকল, ২২. কেরণছড়ি যুব সংঘ, বিলাইছড়ি, ২৩. চেঙ্গী একাদশ, নানিয়ারচর, ২৪. রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ একাদশ, ২৫. ধুধুক একাদশ, ট্রাইবেল আদাম।
উল্লেখ্য, ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র আন্তর্জাতিক মুখপাত্রজুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচারকার্যের অন্যতম পুরোধা। তিনি ছিলেন একজন নিখাদ স্বজাতি ও স্বদেশপ্রেমিক, অত্যন্ত ত্যাগী ও সাহসী মানবাধিকার কর্মী এবং বিপ্লবী। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে তার হাত ধরে জুম্ম জনগণের অধিকারের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযানের পত্তন ঘটেছে যা ধীরে ধীরে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। জাতিসংঘে জুম্মদের পদার্পণ এবং জুম্মদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার কাজটা তিনিই প্রথম শুরু এবং প্রতিষ্ঠিত করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান ও সাদাসিধা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন।
ছোটকাল থেকে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তাঁর লেখাপড়া শুরু হয় খাগড়াছড়ির খবংপয্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তৎসময়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে তিনি সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম শিক্ষাবিদ, সংগ্রামী ও প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব চিত্ত কিশোর চাকমার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত মহাপ্রুম এমই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে আবার সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে ১৯৬১ সালে বিএসসি (অনার্স) ও ১৯৬২ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। পরে ১৯৬৮ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কুইন এলিজাবেথ কলেজে ভর্তি হন এবং চার বছর পর এমফিল গবেষণা সমাপ্ত করেন। এরপর ১৯৮০ সালে রসায়নে সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষ করার পর ব্যক্তিগত স্বার্থ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে জলাঞ্জলি দিয়ে অচিরেই তিনি সম্পূর্ণভাবে জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক প্রচার আন্দোলনে নিজেকে সমর্পণ করেন। জুম্ম জাতির সংগ্রামে নিজেকে সঁপে দেয়ায় ব্যক্তি জীবনে ড. দেওয়ান বিয়েও করেননি।
ড. আর এস দেওয়ানের জন্ম ৭ জানুয়ারি ১৯৩২ সালে বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার খবংপয্যা গ্রামে। তাঁর পিতা রমেশচন্দ্র দেওয়ান ও মাতা চন্দ্রমুখী দেওয়ান। পিতামাতার চার পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। তিনি মৃত্যুবরণ করেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ২৯ মার্চ যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার শহরে নিজের এপার্টমেন্টে। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
মহান এই ব্যক্তির অবদান ও স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য সকল স্তরের জনগণকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছে।