হিল ভয়েস, ২৮ জুলাই ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে এক বাঙালি সেটেলার সড়ক নির্মাণ শ্রমিক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার আদিবাসী জুম্ম বিধবা নারী (৩৮) সাজেক থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করে মামলা করেছেন। হিল ভয়েসসহ বিভিন্ন অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পরদিনই পুলিশ অভিযুক্ত ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, প্রথমে হিল ভয়েসসহ বিভিন্ন অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে ঘটনাটি ধর্ষণের চেষ্টা বলে খবর প্রকাশিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ধর্ষণের ঘটনা বলেই জানা গেছে। গত ২৫ জুলাই ২০২২ ভুক্তভোগী নারী নিজেই বাদী হয়ে সাজেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ঐ দিনই বাদীর অভিযোগটি সাজেক থানায় মামলা নং ১, তাং ২৫/০৭/২২, ধারা: ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর ৯(১) হিসেবে গৃহীত হয়।
ধর্ষণকারী শ্রমিকের নাম মোঃ রাসেল মিয়া (২৪), পীং-মৃত আয়নাল হক, ঠিকানা-বড় মেরুং এলাকা, ৫নং ওয়ার্ড, ১নং মেরুং ইউনিয়ন, দীঘিনালা উপজেলা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। অভিযুক্ত মোঃ রাসেল বর্তমানে সাজেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক চলমান সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজের একজন শ্রমিক।
ভুক্তভোগী জুম্ম নারী তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, “আমি জুমে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। গত ২৪/০৭/২০২২ খ্রি: তারিখ বিকাল আনুমানিক ১৬:০৫ (বিকাল ৪:০৫ টা) ঘটিকার সময় প্রতিদিনের ন্যায় আমি জুমের কাজ শেষ করে বড় কমলাকে সীমান্ত রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরতেছিলাম। তখন প্রচুর বৃষ্টি হইতেছিল। বৃষ্টির কারণে আশেপাশে কোনো মানুষের আনাগোনা ছিল না। উপরোক্ত বিবাদী রাসেল সীমান্তবর্তী রাস্তার কাজ করতেছিল। আমাকে দেখে কোনো কারণ ছাড়াই আমার পিছু নেয়। কিছু দূরে যাওয়ার পর যখন আমি বিশ্বমনি চাকমার জুমক্ষেতের পাশে পৌঁছালে বিবাদী রাসেল আমাকে ডাক দিয়ে থামিয়ে বলে যে, ‘দিদি আপনার পিঠের ঝুড়িতে কী তরকারী আছে?’ আমি তাকে বলি যে, আমার কাছে বিক্রি করার মত কোনো তরকারী নাই। আমি এই কথা বলার এক পর্যায়ে বিবাদী রাসেল আমার পিঠে থাকা ঝুড়ি ফেলে দিয়ে আমাকে ঝাপটে ধরে জুম ক্ষেতে ফেলে দিয়ে আমার পরিহিত ব্লাউজ ও চাকমা থামি এবং পেটিকোট টানাহেচড়া করে খোলার সময় আমি চিৎকার করিলে আমার মুখ চেপে ধরে আমাকে জোরপূর্বক আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে বিবাদী রাসেল আমার গলা চেপে ধরে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে যে, ‘তুই যদি এই ঘটনার কথা কাউকে বলিস তাহলে তোকে আমি জানে মেরে ফেলবো।’ পরবর্তীতে আমি তাকে অনেক আকুতিমিনতি করে বলি যে, আজকে ঘটনার কথা আমি কাউকে বলবো না। তুই আমাকে বাড়ি যেতে দে। আমার আকুতি মিনতি শুনে বিবাদী রাসেল আমাকে জুমক্ষেতের মধ্যে ফেলে দিয়ে সীমান্তবর্তী রাস্তার দিকে চলে যায়। বিবাদী রাসেল চলে যাওয়ার পর আমি অনেক কষ্টে জুমক্ষেত থেকে উঠে বাড়িতে এসে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত কথা আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদেরকে বলি।”
উক্ত ধর্ষণ ঘটনার খবর শুনে সামাজিক মাধ্যমে এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা এই ঘটনার যথাযথ বিচার এবং ধর্ষণকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, এ জাতীয় দুস্কৃতিকারীদের যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না বলেই অপরাধীরা বারবার এধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।
জানা গেছে, গত মাসেও এই চয়নালছড়া এলাকাতে এক বাঙালি সেটেলার স্থানীয় এক জুম্ম মেয়েকে ধর্ষণ করে। কিন্তু বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে প্রশাসন এইসব দুস্কৃতিকারী বাঙালি সেটেলারদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ না দিলে ভবিষ্যতে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একাধিক গ্রামবাসী।