হিল ভয়েস, ১৪ জুলাই ২০২২, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় সরই ইউনিয়নের ৩০৩ নং ডলুছড়ি মৌজার হেডম্যানের ছোট ভাই ও ভূমি অধিকার কর্মী রংধজন ত্রিপুরার উপর হামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, গতকাল বুধবার (১৩ জুলাই) রাত আনুমানিক ৮:০০ টায় বান্দরবানে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি মোয়াজ্জেম হোসেন ও পরিচালক কামাল উদ্দিনের মদদে ৪০-৫০ জন রাবার কোম্পানি শ্রমিকদের নিয়ে লামা সরই ইউনিয়নের ক্যজ বাজারে রংধজন ত্রিপুরার উপর হামলা চালায়।
এই হামলায় রংধজন ত্রিপুরা গুরুতর আহত হন। তাকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
এর আগে গত ২৬ এপ্রিল ২০২২ লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির উপ-পরিচালক মো: কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৬০-৭০ জনের একদল বহিরাগত বাঙালি ও রোহিঙ্গা শ্রমিক লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ডুলুছড়ি মৌজার ৪নং ওয়ার্ডের লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া, রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়ায় জুম্মদের প্রায় ৩৫০ একর জুমভূমি পাহাড় ও গ্রামীণ বন এলাকায় আগুন লাগিয়ে দেয়।
উল্লেখ্য যে, লামা উপজেলাধীন সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজার নতুন পাড়া, ঢেঁকিছড়া পাড়া ও নোয়া পাড়ায় লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্তৃক ইজারার নামে ১,৬০০ একর জায়গা দখল করে। এর ফলে এলাকার তিনটি গ্রামের শত শত পরিবার ম্রো গ্রামবাসী উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে।
লামা উপজেলার লুলেইন মৌজার ২৫০টি ম্রো পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকিতে রয়েছে। লামায় জনৈক লাদেন গ্রুপ কর্তৃক ফাস্যাখালি ইউনিয়নের ৭৫টি ম্রো, ত্রিপুরা, মারমা ও স্থায়ী বাঙালি পরিবার উচ্ছেদ করে ১৭৫ একর জায়গা জবরদখল করা হয়েছে এবং আরো ২২১টি পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হয়েছে। মুজিবুল হক গং কর্তৃক মারমা গ্রামবাসীর উপর হামলা চালিয়ে লামা উপজেলার রূপসী ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ একর জায়গা জবরদখলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
লামা উপজেলার সাঙ্গু মৌজায় লাদেন বাহিনী কর্তৃক ২০১৫ সালে ৫০০ একরের অধিক ভূমি জবরদখল করা হয়েছে এবং এর ফলে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে তিনটি আদিবাসীদের গ্রাম। উক্ত গ্রামবাসীরা তাদের গ্রামটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়।
লামা উপজেলাধীন সরই ইউনিয়নের এলাকায় ডলুছড়ি, লুলেইন ও বমু মৌজায় ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’ নামে জাতীয় পর্যায়ের একটি এনজিও কর্তৃক ২০০১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আনুমানিক ২০০০ একর জায়গা জবরদখল করা হয়েছে। লামায় কোয়ান্টাম সংস্থা কর্তৃক ভূমি বেদখলের কারণে এলাকার ২৫০ পরিবার ম্রো গ্রামবাসীরা জুম চাষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তাদের জীবন-জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়েছে।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ভূমি বেদখলের শিকার কেবল আদিবাসী ম্রো জনগোষ্ঠী নয়, লামা ক্যজু পাড়ায় স্থায়ী বাঙালি অধিবাসীও শিকার হয়েছে। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ভূমি বেদখলের কর্তৃক শিকার স্থায়ী বাঙালিদের পক্ষ থেকে গত ২ জুলাই ২০২২ ঢাকাস্থ রিপোর্টার্স ইউনিটে এক সংবাদ সম্মেলন করে। এতে নির্যাতিতদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. আবু রায়হান আলী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় যে, লামা উপজেলার ডলুছড়ি মৌজায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শহীদ আল বোখারী কয়েক হাজার একর জমি নামে-বেনামে দখল করে নিয়েছে।
আরো উল্লেখ করা হয় যে, শহীদ আল বোখারী অর্থাৎ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাসিক বেতনভুক্ত প্রায় এক হাজার সন্ত্রাসী বাহিনী ক্যজুপাড়া, লামা ও ডলুছড়ি এলাকায় রয়েছে। তাদের সকলের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে এবং মাঝে মাঝে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। সাধারণ মানুষের মাঝে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে।