হিল ভয়েস, ২১ জুলাই ২০২২, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের (এইচডাব্লিউএফ) যৌথ উদ্যোগে রাঙ্গামাটিতে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে এইচএসসি ও স্নাতক (সম্মান) ভর্তিকৃত নবীন শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল ২০ জুলাই ২০২২ রাঙ্গামাটিস্থ সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে “হে নবীন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে মুক্তির মিছিলে সামিল হউন” স্লোগান নিয়ে এই নবীন বরণ ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা, যুব সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা নান্টু, পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমন মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রীমতী শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা ও পিসিপি’র রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিসিপি’র রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সুমন চাকমা। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সোনারিতা চাকমা এবং নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী কুর্নিকোভা চাকমা। নবীনদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছাপত্র পাঠ করেন ছায়া চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঊষাতন তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় চলে গেছে। জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, ছাত্র হিসেবে মনুষ্যত্ববোধের শিক্ষাও লাভ করতে হবে। বেঁচে থাকার তাগিদে শুধুমাত্র চাকরির পেছনে না ছুটে আত্মকর্মসংস্থানের পথও খুঁজতে হবে। পাশাপাশি সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থেকে সকল প্রকার অন্যায়কে প্রতিরোধ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জুয়েল চাকমা বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাদেরকে এ দায়বদ্ধতা অনুধাবন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু এ পরিবর্তন জুম্ম জনগণের জন্য অস্তিত্ব ধ্বংসের জন্য কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। ছাত্র সমাজ জাতির ক্রান্তিলগ্নে কী অবদান রাখতে পারছে তার উপর নির্ভর করবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব।
সাগর ত্রিপুরা নান্টু বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জ্ঞান আহরণের স্পৃহা থাকতে হবে। সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারলে স্ব স্ব কর্মজীবনে সামাজিক, ব্যক্তিগত, ধর্মীয় ও জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। ছাত্র জীবন প্রগতিকে গ্রহণ করার সময়। এ সময়ে মৌলবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে।
সুমন মারমা বলেন, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হওয়ায় তার চিন্তার পরিধি ব্যাপক। তারা ভালোমন্দ অনুধাবন করতে পারে। কিন্তু মানুষের মনুষ্যত্ববোধ থাকতে হবে। তাহলেই শোষণহীন, বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, ‘ছাত্রনং, অধ্যয়নং তপঃ’ বলে একটা কথা রয়েছে। অর্থাৎ, ছাত্রের কাজ হলো অধ্যায়ন করা। জ্ঞান আহরণ করা। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, সংস্কৃতি নিয়ে অধ্যয়ন থাকতে হবে ছাত্র হিসেবে। এতে একজন ছাত্রের মেধার বিকাশ ঘটবে এবং সমাজের ন্যায়সঙ্গত কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারবে।
শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। প্রগতির জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু সে শিক্ষাটা প্রকৃত শিক্ষা হতে হবে। যেটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শেখাবে। তিনি আরো বলেন, সারা বাংলাদেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম পিছিয়ে রয়েছে। এখানকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অবনতির দিকে। আজকে নারী সমাজকে জাগ্রত হতে হবে। তাঁদের সামাজিক মুক্তি লাভ করতে হবে।
জগদীশ চাকমা বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের আত্মার বন্ধন আমাকে উচ্ছ্বসিত করে তোলে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ যুগ যুগ ধরে অধিকার বঞ্চিত ও নিপীড়িত। আজীবন অবহেলিত হয়ে আসা জুম্ম জনগণের বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে হবে প্রত্যেক জুম্ম ছাত্রকে।
পিসিপি রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সুমন চাকমার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে নবীন শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সমাপ্তি হয়। বিকেলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা নৃত্য ও গান পরিবেশন করে।