হিল ভয়েস, ৮ জুলাই ২০২২, খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন মহালছড়িতে আদিবাসী জুম্ম বসতিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দ্রুত বিচার আইনে জড়িত অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ২৫ বিশিষ্ট নাগরিক।
আজ (৮ জুলাই ২০২২) সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় এই বিবৃতি প্রদানের কথা জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দ্রুত বিচার আইনে জড়িত অপরাধীদের শাস্তিসহ ৫ দফা দাবি জানানো জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ির মাইসছড়ি ইউনিয়নের জয়সেন পাড়ায় স্থানীয় বাঙালী সেটেলার কর্তৃক আদিবাসী বসতিতে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, ৫ জুলাই সকালে আদিবাসী পুরুষরা যখন পাশের বাজারে গেছেন তখন সেটেলারদের ২শ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে জয়সেন পাড়ায় আদিবাসী নারী ও বসতিতে হামলা চালায়। এ সময় আদিবাসিদের বাড়ি-ঘরে লুটপাট করে অন্তত ৩৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসীদের বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকলেও তারা হামলাকারীদের প্রতিহত করতে এগিয়ে আসেনি। পরবর্তীতে হামলাকারীদের সাথে স্থানীয় আাদিবাসী জনগোষ্ঠীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং হামলাকারীরা চলে যায়। এ ঘটনায় কয়েকজন আদিবাসী ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় আমরা খুবই ব্যথিত এবং ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি। আদিবাসী নির্যাতন নিপীড়ন কিংবা আদিবাসীদের অধিকার বঞ্চনার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাষ্ট্রীয় সেবা বঞ্চনা থেকে শুরু করে জান-মালের নিরাপত্তাহীনতা এখানে সবর্দাই বিরাজ করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাটি একটি ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। এটি চরমভাবে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা মনে করি, বৈচিত্রময়তা ধ্বংস করে সেটেলারদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যে সংস্কৃতি শুরু হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে চলতে পারে না। এ ধরনের প্রবণতা দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ জাতীয় সংহতি বিনষ্ট করবে। কাজেই দ্রুততম সময়ে ঘটনার প্রভাবমুক্ত তদন্ত করে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
বিবৃতিতে নিম্নোক্ত পাঁচটি দাবি উত্থাপন করা হয়:
১। ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে;
২। জয়সেন পাড়ায় আদিবাসী বসতিতে হামলকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে;
৩। দ্রুত বিচার আইনে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে;
৪। ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং
৫। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ করতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্ট নাগরিকগণ হলেন- অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা; পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ; রাশেদা কে. চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা; রামেন্দু মজুমদার, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন; ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন; অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভাপতি, মহিলা পরিষদ; ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, সদস্য সচিব, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ; এস.এম.এ সবুর, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি; খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী; রোকেয়া কবির, উন্নয়ন কর্মী; এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন; ড. জোবাইদা নাসরীন, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ডা. লেনিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ; অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; আবদুল ওয়াহেদ, কার্যকরী সভাপতি, জাতীয় শ্রমিক জোট; ড. সেলু বাসিত, গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী; আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব); অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংগঠক, গণজাগরণ মঞ্চ; এ কে আজাদ, সংস্কৃতি কর্মী; অলক দাস গুপ্ত, সংস্কৃতি কর্মী; দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও সেলিম রেজা, আহবায়ক, সংস্কৃতি মঞ্চ।