হিল ভয়েস, ২৩ জুলাই ২০২২ ঢাকা: গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ভিন্নমত দমন ও সহনশীলতা চর্চার অভাবে দেশে অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির কারণে এই পরিস্থিতি এখন ভয়ংকর ও অসহনীয় হয়ে উঠছে।
গতকাল শুক্রবার (২২ জুলাই ২০২২) বিকেল ৩ টার সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক ও আলোচনা সভায় জোটের নেতারা এসব কথা বলেন। ‘সাম্প্রদায়িতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ড. শ্রীমতি সোনালী দাসের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ডা. এম. কে. রায়।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ভিন্নমত দমন, বহুত্ববাদী ও সহনশীলতা চর্চার অভাব দেশে একটি অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কোনো ধর্মকে অবমাননা করার অধিকার যেমন কারো নেই, তেমনি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মন্দির, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুর ও নির্যাতন করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির দরুন এই পরিস্থিতি এখন ভয়ঙ্কর ও অসহনীয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক দেশে এ ধরণের সাম্প্রদায়িক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরো বলেন, ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ছোট বড় সাড়ে তিন হাজার মামলা হয়েছে। একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের তাড়িয়ে দিয়ে সম্পদ ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। তাই যারা সাম্প্রদায়িক হামলা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকে প্ররোচিত করছে।
অনুষ্ঠানে জোটের সভাপতি সোনালী দাস বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হিন্দুরা যা উৎসর্গ করল তার প্রতিদানে এখন যা দেখছেন এতে তারা মর্মাহত, ব্যাথিত। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলন চাই না। সহিংসতা চাই না। শান্তিতে থাকতে চাই। এ দেশের জনগণের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ভক্তসংঘের সভাপতি শান্তি রঞ্জন দাস অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও হিন্দুরা স্বাধীনতা পায়নি।’
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বিচারটা হওয়া দরকার। বিচার হলে এমন প্রবণতা কমবে।
হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ডা. এম. কে. রায় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো—
১. সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন
২. ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধ করতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার সব মামলার দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. এযাবতকালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্মীয় উপাসনালয়, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত অপরাধী কারা জড়িত তা উদঘাটনে একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ভুক্তভোগীদের সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদান করা।
৪. জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করা।