হিল ভয়েস, ১৭ জুন ২০২২ ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। আজ ১৬ জুলাই (শনিবার) বিকাল ৩.৩০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং সমাবেশ পরবর্তী একটি বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনটি।
সমাবেশে অংশ নিয়ে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সনের ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদররা যেভাবে আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করেছিল, যেভাবে মা-বোনদের উপর অত্যাচার করেছিল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছিল একইভাবে কাল নড়াইলে হামলা করা হয়েছে।
দুঃখের সাথে বলছি, এই বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ২০০৯ সালে বিপুল ভোটে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে, তারা যেন পথ হারিয়ে ফেলেছে। এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন কিন্তু মানবিক রাষ্ট্র করতে পারলেন না! এটা কিসের আলামত বলে সরকারকে প্রশ্ন করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেব দুটি কথা বলেন, একটি হচ্ছে কাউয়া এবং আরেকটি হচ্ছে হাইব্রিড। আমি এখন দেখি সরকারের মধ্যেই সব কাউয়া, সরকারের মধ্যেই সব হাইব্রিড। তা না হলে কিভাবে ওসির সামনে, টিএনও’ র সামনে, ডিসির সামনে সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটছে! আমরা যেন পাকিস্তানে ফিরে গেছি। পাকিস্তানের ভূত আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে।
সংগঠনের আরেক সভাপতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার বলেন, আমাদের আজকে শহীদ মিনারে দাঁড়াতে হয়েছে। যেখানে সংখ্যালঘু বান্ধব মুক্তিযুদ্ধের সরকার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ক্ষমতায় রয়েছে সেখানে এটা আশা করা যায় না। তাই দুঃখ এবং লজ্জা নিয়ে বলছি, এটা আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। এই সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কেন আমাদের এই সময়টাকে অপচয় করতে হলো বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আজকে নড়াইলের ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন মৌলবাদীরা, সাম্প্রদায়িক মন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষেরা যখন চাইবে তখনই হামলা করবে, যখন ইচ্ছা হবে তখনই আগুন লাগিয়ে দিবে। এটা তাদের কাছে খেলা হয়ে গেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ২২ তারিখে খাগড়াছড়ির মাইসছড়ি এলাকার জয়সেনপাড়ায় সেটেলাররা বিনা উস্কানিতে ৩৭ টি ঘরে আগুন দিয়েছে। অনেক ঘর ভাঙচুর করেছে, লুটপাট করেছে। কিন্তু সেখানে প্রশাসনের তরফ থেকে এলাকার মানুষদের বলে দেয়া হয়েছে যে এ বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না। এটাই এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা।
বিক্ষোভ সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করে সংগঠনটি।
উল্লেখ্য, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া এলাকায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর কয়েকটি দোকান ভাঙচুর ও একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ লোকজন। তখন একটি মন্দির ভাঙচুর করা হয়। হামলা করা হয় আরও দুটি পারিবারিক মন্দিরে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিপেটা করে ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। রাত সাড়ে নয়টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।