হিল ভয়েস, ১৭ জুলাই ২০২২, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের মহালছড়িতে মুসলিম সেটেলারদের কর্তৃক জুম্ম গ্রামবাসীদের ৩৭ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনাসহ জুম্মদের উপর অব্যাহত অত্যাচারের প্রতিবাদে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরে চাকমা নারী-পুরুষসহ সকল স্তরের জনগণের অংশগ্রহণে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার (১৭ জুলাই ২০২২) দুপুর ১২:০০ টার দিকে উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুর সাবডিবিশন সদরে ‘ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন’-এর কাঞ্চনপুর শাখার উদ্যোগে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। প্রথমে সংগঠনের ব্যানার নিয়ে এবং বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে কাঞ্চনপুরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয় এবং বিক্ষোভ মিছিল শেষে কাঞ্চনপুর সুপার মার্কেটের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক পান্থ চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুবল চাকমা, সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী অনিরুদ্ধ চাকমা প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে আদিবাসী জুম্মদের ৩৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালিয়ে তাদেরকে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা সেখানে প্রত্যেক বছর প্রায়ই ঘটে চলেছে। তারই প্রতিবাদে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে প্রায়ই এখন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষের উপর হামলা হচ্ছে। মা-বোনেরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে না। প্রায়ই তাদেরকে অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব সংখ্যালঘুদেরকে নিজেদের অধিকারের জন্য বারবার লড়াই করতে হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ২০১৭ সালের ২ জুনেও লংগদুতে দুই শতাধিক জুম্ম গ্রামবাসীর বাড়ি ও বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে দেয়া হয়। এসব হামলার ঘটনা কেবল মুসলিম বাঙালি সেটেলাররা সংঘটিত করছে না, সেখানকার সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনও পেছন থেকে এইসব হামলাকারী মুসলিম সেটেলারদের উস্কানি ও মদদ দিয়ে থাকে।
নেতৃবৃন্দ হামলাকারী মুসলিম সেটেলারদের এবং সেনাবাহিনীর এহেন ঘৃণ্য কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানান।
নেতৃবৃন্দ গত ৫ জুলাই ২০২২ তারিখে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের জয়সেন পাড়াতে বহিরাগত মুসলিম সেটেলার কর্তৃক আদিবাসী জুম্মদের ৩৭টি ঘর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ঘরবাড়ি তছনছ করে দেয়া, জিনিসপত্র লুটপাট করারঘৃণ্য কাজে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ এসব ঘটনার বিচার ও বন্ধ না হলে শেখ হাসিনার সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মুসলিম সেটেলার বাঙালিদের সরিয়ে নেয়া ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
সমাবেশের আগে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা নিম্নোক্ত শ্লোগান দেন- পাহাড়ি জনগণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্র মানি না, মানবো না; পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা ক্যাম্প তুলে নাও, নিতে হবে; পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মুসলিম সেটেলারদের প্রত্যাহার কর, করতে হবে; মহালছড়িতে অগ্নিসংযোগকারীদের দৃষ্টান্তমূলকভাবে শাস্তি দাও, দিতে হবে; বাংলাদেশে কেন বারবার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ চলে শেখ হাসিনার জবাব চাই।