হিল ভয়েস, ২ জুলাই ২০২২, ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের উপর চলমান সহিংসতা ও নির্যাতন অস্বীকার করে ভারতের নয়াদিল্লীতে যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে তাঁর মিথ্যাচারের দায় স্বীকার করে অনতিবিলম্বে তাকে পদত্যাগের পুনঃদাবি জানিয়ে সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অন্যথায় আগামী সংসদ নির্বাচনে যে কোন দল থেকে তাকে প্রার্থী করা হলে সংখ্যালঘু ভোটাররা তাকে বর্জন করবে। উল্লেখ্য, গত দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী সহ দেশব্যাপী ২৬টি জেলায় পূজামন্ডপ ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও তাণ্ডবের সময়ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একই রকম মিথ্যাচার করেছিলেন।
দেশে চলমান সংখ্যালঘু শিক্ষকদের উপর হামলাসহ সকল সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিথ্যাচারের দায়ে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আজ শনিবার (২ জুলাই) সকালে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাব চত্ত্বর থেকে বিক্ষোভ পূর্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার নেতৃবৃন্দও বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। সমাবেশে আগামী ১৬ জুলাই শনিবার বিকাল ৩:০০ টায় সারাদেশে নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারী দল কর্তৃক সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নসহ একই দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের উপর নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে বার বার জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতা ও কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনাকে অস্বীকারের প্রবণতা থেকে প্রশ্ন জাগে তিনি প্রকারান্তরে মন্ত্রণালয়ে কার স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
তার এই ধরনের মিথ্যাচার ও ঘটনাসমূহকে অস্বীকারের প্রবণতা থেকে মনে হয়, তিনি প্রকারান্তরে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এহেন ভূমিকায় দ্বিগুণভাবে উৎসাহিত হয়ে সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তরা শিক্ষক সম্প্রদায়সহ সাধারণ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতন নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। নেতৃবৃন্দ সকল প্রকার নির্যাতন নিপীড়নের আশু অবসান এবং সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সমাবেশে জনৈক ভারতীয় রাজনৈতিক নেত্রী নূপুর শর্মার মহানবীর বিরদ্ধে অশালীন মন্তব্যের তীব্র বিরোধীতা করে সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ বলেছেন, উপমহাদেশের সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ জনগণ এতে নিদারুণভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। এ ব্যাপারে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মন্তব্যকে তাঁরা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন ধর্মীয় উস্কানীমূলক যে কোন মন্তব্য বা উক্তি স্বাধীন ধর্মাচারের ও ধর্মানুশীলনের পরিপন্থী।
প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি সাবেক এমপি উষাতন তালুকদার।
এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক ও মি. নির্মল রোজারিও, প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, মিলন কান্তি দত্ত, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব, এ্যাড. তাপস কুমার পাল, রবীন্দ্রনাথ বসু, রমেন মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশন এর মহাসচিব মি. হেমন্ত কোড়াইয়া, শ্রীশ্রী ভোলাগিরি আশ্রম ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক রঘুপতি সেন, অনুভব এর সাধারণ সম্পাদক অতুল চন্দ্র মন্ডল, সনাতন সংগঠন’র প্রধান সমন্বয়ক বাপ্পাদিত্য বসু প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শ্যামল কুমার রায়।