হিল ভয়েস, ১২ জুন ২০২২, বান্দরবান: সেনাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ মদদপুষ্ট মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের কর্তৃক বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন বান্দরবান সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়ন এলাকা থেকে অপহৃত দুই নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে ব্যাপক মারধর করার পর শেষে সেনাবাহিনীর পরামর্শে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
অপহরণ ও পরে মিথ্যা মামলার শিকার দুই জুম্ম গ্রামবাসী হলেন- (১) খোকন তঞ্চঙ্গ্যা খোকা (৪৩), পিতা-মৃত বিরণ তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম- তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া, রাজভিলা ইউনিয়ন ও (২) জীবন চাকমা ওরফে সুমন (৪৫), পিতা-সুরা মেরেয়া চাকমা, গ্রাম-ঐ। উল্লেখ্য, জীবন চাকমার আসল বাড়ি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় বলে জানা গেছে। তবে তিনি রাজভিলার তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন এবং সেখানে তার একটি চায়ের দোকানও রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত পরশু বিকেলে উক্ত গ্রামবাসীদের অপহরণের পর মগ পার্টির সন্ত্রাসীরা রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া এলাকায় তাদের আস্তানায় নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখে এবং মারধর করে। পরে তাদের মদদদাতা রাজস্থলী সেনা ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর পরামর্শে গতকাল ১১ জুন ২০২২ অস্ত্র গুঁজে দিয়ে উক্ত গ্রামবাসীকে চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অপহৃত নিরীহ দুই গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে চন্দ্রঘোনা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এরপর সেনা প্রভাবিত বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল বাহার চোধুরী’র নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানে অস্ত্রসহ দুই সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে বলে মিথ্যা প্রচারণা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া, উক্ত দুই গ্রামবাসীকে জেএসএস (সন্তু লারমা) দলের কালেক্টর বলে প্রচার চালানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জনসংহতি সমিতির স্থানীয় একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, উক্ত দুই গ্রামবাসী সম্পূর্ণ নিরীহ এবং জেএসএসের কোনো কমিটির সদস্য নয়, কালেক্টর হওয়া তো প্রশ্নই আসে না। সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীরাই ষড়যন্ত্র করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুই গ্রামবাসীকে এভাবে ক্রিমিনালাইজ করা এবং জেএসএস’এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুন ২০২২ বিকাল আনুমানিক ৪:০০ টার দিকে উচিংমং রাখাইন ওরফে মুদি’র নেতৃত্বে মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের ৬ জনের একটি সশস্ত্র দল মহেন্দ্র গাড়িতে করে রাজভিলার তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া এলাকায় হঠাৎ এসে খোকন তঞ্চঙ্গ্যা ও জীবন চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা খোকন তঞ্চঙ্গ্যাকে তার নিজ বাড়ি থেকে এবং জীবন চাকমাকে তার দোকান থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, অপহরণকারীরা রাজভিলার পার্শ্ববর্তী রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের হেডম্যান বিহার পাড়া এলাকা থেকে সেখানে গিয়েছিল বলে এলাকাবাসীর সূত্রে খবর পাওয়া যায়। সন্ত্রাসীরা খোকন তঞ্চঙ্গ্যা ও জীবন চাকমাকে অপহরণের পর বাঙ্গালহালিয়ার দিকে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, অপহরণ ঘটনার পর জীবন চাকমা ওরফে সুমন’এর স্ত্রীসহ কয়েকজন গ্রামবাসী বাঙ্গাহালিয়ায় মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তার স্বামীর মুক্তি কামনা করেন। কিন্তু এসময় সন্ত্রাসীরা ঘটনার ব্যাপারে তারা জানে না বলে জানায়। তবে পরে সেনাবাহিনীর পরামর্শে মগ পার্টির সন্ত্রাসীরা দুই গ্রামবাসীকে ব্যাপক মারধর করার পর চন্দ্রঘোনা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যাভাবে চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ ফোর্স ও যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে গত ১০ জুন ২০২২ রাত ১০:০০টার সময় বাঙ্গাহালিয়ার ৭নং ওয়ার্ডে কাঁকড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তুলা গাছের নিচ হতে উক্ত দুই জনকে আটক করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। এসময় আটক দুই ব্যক্তির কাছ থেকে একটি দেশীয় তৈরি ১৫.৫ ইঞ্চি এলজি কাঠের বাট ও ৪ রাউন্ড কার্তুজ জব্দ করা হয় বলে সাজানো কাহিনীও প্রচার করা হয়।