হিল ভয়েস, ৯ জুন, ২০২২ গাইবান্ধা: গত মঙ্গলবার (৭জুন) গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের আদিবাসীদের বাপ-দাদার তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপন ও উচ্ছেদ চক্রান্তের প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. আবুল বারাকাত সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণের অভিপ্রায়ের বিপক্ষে যে আইন তা অকার্যকর বলে বিবেচিত হবে। তাই জনগণের অভিপ্রায়ের বিপক্ষে কোনো কিছু করে থাকলে সংবিধানেও আরেকটি ধারা আছে, সে ধারা অনুযায়ী আপনি হবেন রাষ্ট্রদ্রোহী। তাহলে রিক্যুইজিশন যদি অ্যাকুইজিশন বলে চালান তাহলে সংবিধানের ৭(২) নং ধারা অনুযায়ী আপনি হবেন দেশদ্রোহী।
তিনি আরো বলেন, সংবিধান যদি বলেন জনগণ হবে প্রজাতন্ত্রের মালিক তাহলে আমার প্রশ্ন এখানে উপস্থিত সাঁওতালরা জনগণ কিনা! রাষ্ট্রকে এর উত্তর দিতে হবে। সাঁওতালদের সাড়ে ৫০০০ বিঘা জমির লড়াই আরো বড় লড়াইয়ের অংশ হিসেবে করতে হবে।
এছাড়াও ইপিজেডের জায়গায় সমবায়ী মালিকানায় কৃষি ও শিল্প কারখানা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আজকাল উন্নয়নের যে সংজ্ঞা দেয়া হয় তা হলো একটি জাতির, একটি এলাকার মানুষেরা তারা কি চান কিভাবে চান কিন্তু সেই মানুষেরা যদি না চান কিন্তু যদি তা চাপিয়ে দেন তাহলে তা উন্নয়নের মধ্যে পরে না। কাজেই যার জন্য উন্নয়ন করবেন তার মনের কথা শুনতে হবে।
দুজন সাঁওতাল কৃষকের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুজন সাঁওতাল কৃষির জন্য পানি চেয়েছিলেন। তাদের মরে যেতে হয়েছে। তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। এটা আত্মহত্যা না। এটা এক ধরনের স্ট্রাকচারাল কিলিং।
ইপিজেড প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ১০০টি ইপিজেদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আদৌ কি এগুলোর ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছিল! এগুলো আসলে কাজ করবে কিনা নাকি আদমজীর মতোই সব জায়গাগুলো একসময় পতিতা থাকবে এবং পরবর্তীতে বিক্রি করে দেয়া হবে! প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘোষণা দিয়েছেন যেখানে তিন ফসলি জমি সেখানে ইপিজেড করা যাবে না। তাই কোনো অবস্থাতেই ইপিজেড হতে দেয়া যাবেনা। এক ইঞ্চি জায়গা এখান থেকে ছাড় দেয়া হবে না।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের প্রায় ২৫০০ একর জমি আদিবাসীদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে দখলের করা হয়েছে। এতে ১৪টি আদিবাসী গ্রাম উচ্ছেদ করা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই আদিবাসীদের আর দেখা পাওয়া যায় না। আমরা জানি না তারা কোথায় গেছে! শুনেছি অনেকে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে।
হতাশা ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন, তিন ফসলি জমি কিভাবে প্রজেক্ট হয়, কারখানা হয় আমরা বুঝতে পারি না! আদিবাসীদের সংখ্যা বাড়ে না আদিবাসীরা গায়েব হয়ে যায়। বর্তমান সরকার শুধু আদিবাসীদের আশ্বাস দেয়, প্রলোভন দেখায়। ভূমি কমিশন গঠনের কোন আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তাহলে কিভাবে আমরা সরকারকে বিশ্বাস করব!
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা বলেন, গুটিগুটি পায়ে আগানো বাগদা ফার্মের আন্দোলন আজ কতদূর গিয়ে দানা বেঁধেছে! এটি একটি বিশাল ব্যাপার। আমরা যারা এই বাংলাদেশে আছি শ্রমজীবী মানুষ, নিপীড়িত মানুষ তারা গোবিন্দগঞ্জের এই লড়াই থেকে শিখতে পারি। কিভাবে মাটি কামড়ে থেকে একটি জনগোষ্ঠী নিরলসভাবে লড়াই-সংগ্রাম করছে এবং তারা শুধু লড়াই করেনি তিনজন মানুষ তাদের জীবন দিয়েছে। আগুন দিয়ে ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও এ লড়াই থামেনি বরং উত্তরোত্তর চলছে। কিন্তু রাষ্ট্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তার বিপরীতে এখানকার জনগণ দীর্ঘদিন ধরে মরণপণ লড়াই করছে আমরা বিশ্বাস করি, যারা লড়াই করে মাটি কামড়ে থাকে এবং রক্ত দেয়, তাদের লড়াই পরাজিত হয় না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এএলআরডির নির্বাহি পরিচালক শামসুল হুদা, মোঃ আফজাল হোসেন, মোঃ জয়নাল আবেদীন মুকুল, এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবুল, গোলাম মারুফ মাওলা প্রমুখ।
সমাবেশটি সকাল ১০টায় গোবিন্দগঞ্জের কাটামোড়ায় ‘সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি’, ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’, ‘আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদ’ এবং ‘সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়।