হিল ভয়েস, ৩০ মে ২০২২, বান্দরবান: সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন রুমা উপজেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক চার নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ এবং নারীসহ অপর আট জুম্ম গ্রামবাসীকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ সকালে হিল ভয়েস-এ তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশিত রিপোর্টে দুই জুম্মর আটক হওয়ার কথা বলা হলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই চার জন আটক এবং ৮ জন মারধরের শিকার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আটকের শিকার চার ব্যক্তি হচ্ছেন- (১) বিপন্ন তঞ্চঙ্গ্যা (২২), পীং-রনি কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, (২) রোন্যা তঞ্চঙ্গ্যা (১৯), পীং-চান্দু তঞ্চঙ্গ্যা, (৩) মেক্কো তঞ্চঙ্গ্যা (২৭), পীং-সরিক কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও (৪) নতুন জয় তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫), পীং-বিষ্ণু তঞ্চঙ্গ্যা। তাদের সকলের বাড়ি রুমার সীমান্তবর্তী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত বড়থলি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের গঙ্গাছড়া (টাইগার পাড়া) গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উক্ত গ্রামবাসীরা পরিবারের বাজার করার জন্য গতকাল (২৯ মে ২০২২) রুমা বাজারে গিয়েছিল।
আজ (৩০ মে ২০২২) সকালে বাজার করার সময়েই রুমা সেনা জোনের সার্জেন্ট জাকিরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল প্রথমে বিপন্ন তঞ্চঙ্গ্যা (২২) ও রোন্যা তঞ্চঙ্গ্যা (২৩)-কে আটক করে।
উক্ত দুইজনকে আটকের খবর পেয়ে মেক্কো তঞ্চঙ্গ্যা (২৭) এবং নতুন জয় তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫) ভয়ে রুমা বাজার থেকে গ্রামে ফিরে আসছিল। সেই সময়েই পথিমধ্যে মন্নুয়াম পাড়া সেনাক্যাম্পে তাদেরকেও আটক করে সেনাবাহিনী। মন্নুয়াম পাড়া সেনা ক্যাম্পটি রুমা সেনা জোন ২৮-বীর এর নিয়ন্ত্রণাধীন। উক্ত ক্যাম্পের কমান্ডার মোঃ ইমদাদ।
জানা গেছে, সেনাবাহিনী উক্ত চার নিরীহ গ্রামবাসীকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে রুমা সদর সেনা জোনে ধরে নিয়ে যায়। পরে গ্রেপ্তারকৃত চারজনকে রুমা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে উক্ত ৪ গ্রামবাসীকে আটকের খবর পেয়ে গঙ্গাছড়া (টাইগার পাড়া) থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জামায়া তঞ্চঙ্গ্যার নেতৃত্বে আটক হওয়া ব্যক্তিদের ৮ জন আত্মীয় রুমার উদ্দেশ্য রওনা হয়। এই সময় মন্নুয়াম পাড়ায় পৌঁছলে সেনাবাহিনী তাদেরকেও আটক করে এবং এক পর্যায়ে মারধর করে। মারধরের শিকারদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
এসময় আটক ও মারধরের স্বীকার হওয়া গ্রামবাসীরা হলেন জামায়া তঞ্চঙ্গ্যা (৪০), পীং-রাসেল তঞ্চঙ্গ্যা; রাইতপো তঞ্চঙ্গ্যা (১৫), পীং-সরিক কুমার তঞ্চঙ্গ্যা; স্বপ্নলাল তঞ্চঙ্গ্যা (১৩), পীং-অর্জুন তঞ্চঙ্গ্যা; নাজল তঞ্চঙ্গ্যা (১৪), পীং-আলচগা তঞ্চঙ্গ্যা; চম্পা তঞ্চঙ্গ্যা (১৩), পীং-কালিন্দ তঞ্চঙ্গ্যা; সাগরিকা তঞ্চঙ্গ্যা (১৩), পীং-নন্দ তঞ্চঙ্গ্যা; সঞ্জিতা তঞ্চঙ্গ্যা (১৪), পীং-জামায়া তঞ্চঙ্গ্যা; সবিতা তঞ্চঙ্গ্যা (১৮), পীং-চানদো তঞ্চঙ্গ্যা।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটককৃতদের মধ্য থেকে ইউপি সদস্য জামায়া তঞ্চঙ্গ্যাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
আরো জানা গেছে, মারধরের শিকার সবিতা তঞ্চঙ্গ্যাদের গ্রামে একটি ছোট দোকান আছে। সেনাবাহিনী সবিতা তঞ্চঙ্গ্যাকে মারধর করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নিয়ে নেয় যে, তাদের দোকানের অর্ধেক মালামাল জেএসএস’এর এবং বাকি অর্ধেক নিজস্ব। জোরপূর্বক নেওয়া এই স্বীকারোক্তিটি মন্নুয়াম পাড়া সেনা ক্যাম্প থেকে রুমা সেনা জোনে পাঠানো হয় এবং সেটি জোন থেকে রুমা থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।