হিল ভয়েস, ২৬ মে ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা সভায় মন্ত্রী, এমপি, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের বক্তব্যে জুম্ম বিরোধী হুমকিমূলক বক্তব্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক মতামত তুলে ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সভায় পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার জুম্ম জনগণকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে পার্বত্য চুক্তিকে সম্পূর্ণ খর্ব করে প্রত্যাহৃত সেনা ক্যাম্পের জায়গায় এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
গতকাল ২৫ মে ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩০ ঘটিকায় রাঙ্গামাটিতে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের আইন-শৃঙ্খলা সভায় এসব কথা বলা হয়। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সভায় পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর, খাগড়াছড়ি এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙামাটি এমপি দীপংকর তালুকদার, মহিলা এমপি বাসন্তি চাকমা, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এনএসআই প্রধান, তিন পার্বত্য অঞ্চলের সেনা, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব বাহিনীর গুরুত্বপুর্ণ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী পরিষদের সচিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমাও অংশগ্রহণ করেন। তবে তিনি কোন বক্তব্য রাখেননি। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ’র সভায় অংশগ্রহণের কথা থাকলেও তিনি যোগ দেননি।
আইন-শৃঙ্খলা সভায় প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সভা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা প্রদান করেন। এরপর নিজ উদ্যোগে আইজিপি, ডিআইজি, জিওসি, কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি’সহ সামরিক কর্মকর্তারা মূলত আঞ্চলিক দলগুলোর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অপহরণ নিয়ে একতরফা ও উদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে সামরিক কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্যে একপ্রকার দমন-পীড়নের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের হুমকি দিয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও জিওসি মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীন তার বক্তব্যে চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্দেশ্যকে ভিন্নভাবে নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা প্রদান করেন বলে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মত ব্যক্ত করেছেন।
এরপর মহিলা সাংসদসহ পার্বত্যাঞ্চলের চার সাংসদবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। তারাও কেউই পার্বত্য চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নের কথা উত্থাপন করেননি। পক্ষান্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার বিশেষ প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করে এমপিরাও সামরিক কর্মকর্তাদের মতো একদেশদর্শীভাবে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, হানাহানির কথা তুলে ধরেছেন।
রাঙ্গামাটির এমপি দীপংকর তালুকদার পূর্বের মতো অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কথা তুলে ধরেন।
খাগড়াছড়ির এমপি তথা ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা নিজেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য হলেও চুক্তি বাস্তবায়নে বিষয়ে একটি কথাও উল্লেখ করেননি।
বীর বাহাদুরের বক্তব্য ছিল অনেকটা গল্প বলার মতো। বীর বাহাদুর নাকি এও বলেছেন কলাগাছের কলাছড়া বের হওয়ার আগেই নাকি সন্ত্রাসীরা বা চাঁদাবাজরা চাঁদা ধরে থাকে বা চাঁদা আদায় করে থাকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের একান্ত বৈঠক:
আইন-শৃঙ্খলা সভার আগে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউজে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমার) সাথে একান্ত বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বৈঠক চলে এক ঘন্টারও বেশি। এ সময় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে অচিরেই আলোচনায় বসা দরকার বলে উভয়ের মধ্যে ঐক্যমত্য হয়। ভূমি কমিশনের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য অচিরেই কমিশনের বিধিমালা প্রণয়নের কথা আলোচনায় উঠে আসে।