হিল ভয়েস, ৩ মে ২০২২, রাঙ্গামাটি: সম্প্রতি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বরকল উপজেলার ১২ বিজিবি ছোটহরিণা জোন কর্তৃক দেশীয় তৈরি অস্ত্র, গুলি এবং মালামাল উদ্ধারের ঘটনার খবর একটি সাজানো নাটক বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্রটির মতে, বিজিবি’র এই অস্ত্র, গুলি এবং মালামাল উদ্ধারের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক একটি কাজ।
উল্লেখ্য, গত ১ মে ২০২২ বিজিবি কর্তৃক একাধিক অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয় যে, ঐদিন রাত আনুমানিক ১১:০০ টার দিকে ১২ বিজিবি ছোটহরিণা জোনের কম্যান্ডার লে: কর্ণেল এস এম শফিকুর রহমান এর নেতৃত্বে বিজিবি’র একটি দল বড়হরিণার উদোন চাদারা নামক স্থানে টহল অভিযান চালায়। তাদের ঘটনার বিবরণে আরও উল্লেখ করা হয়, বিজিবি দলটি তিনটি উপদলে বিভক্ত হয়ে সন্ত্রাসীদের পেছনে ধাওয়া করে এবং সন্ত্রাসীরা পাহাড়ি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
বিজিবি কর্তৃক অভিযানে তল্লাশি করে ৩টি দেশীয় বন্দুক, ৫ রাউন্ড গুলি, ধারালো অস্ত্র ১টি এবং বিভিন্ন প্রকার কাপড় ও ব্যক্তিগত মালামাল উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করা হয়।
এদিকে বরকলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গত ১ মে ২০২২ বিজিবি’র এই উদ্ধারের ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। সূত্রটি আরও জানায়, গত ২ মাস পূর্ব থেকেই গোপন সূত্রে বিজিবি কর্তৃক এই জাতীয় উদ্ধার অভিযানের কথা জানা গিয়েছিল।
এছাড়াও ভারতের মিজোরামের এই সীমান্ত এলাকায় বা বরকল সদরের পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে ভবিষ্যতেও যেকোনো সময় বিজিবি কর্তৃক এই ধরনের সাজানো উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে দাবি করে সূত্রটি।
সূত্রটির মতে, জনগণকে হয়রানি, দমন-পীড়ন ও এলাকায় ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই ধরনের মিথ্যা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
অপরদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় মুরুব্বি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত বিজিবি ও সেনাবাহিনীর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ প্রায় সময়ই তাদের প্রমোশন লাভের উদ্দেশ্যে এ ধরনের উদ্ধার অভিযানসহ নানা ধরনের অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। প্রায় ক্ষেত্রে এসকল অভিযান হয়ে থাকে পূর্বপরিকল্পিত এবং সাজানো। দেখা যায়, এসকল অভিযানে হয় ক্ষুদ্র একটি বিষয়কে অতিরঞ্জিত করে বড় করে দেখানো হয়, নয়তো পুরো বিষয়টি একটি মিথ্যা কাহিনী দিয়ে সাজানো নাটক।
উল্লেখ্য, ৫ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার সকালে বড় হরিণা বিওপি ক্যাম্পের সন্নিকটস্থ কর্ণফুলী নদীর চেকপোস্টে ইঞ্জিন চালিত নৌকা তল্লাশি করে বিজিবি সদস্যরা ৩০ রাউন্ড কার্তুজ, পয়েন্ট ২২ বোরের খালি খোসা ১০টি, দুই জোড়া নেপালের (ডিএমএস) বুটসহ বরকল উপজেলারই অধিবাসী পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর ৭ জন লোককে আটক করে। পরে বরকল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হালাম্বা এলাকা থেকে আরও ৩ পাংখোয়াকে দেশীয় তৈরী বন্দুকসহ আটক করা হয়। পরে বিজিবি সদস্যরা প্রচার করে যে, উপজাতীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাড়াঁশি অভিযান চালিয়ে বিজিবি ও পুলিশের যৌথবাহিনী ৮টি অস্ত্র, ভারতের তৈরি ২০ রাউন্ড তাজা কার্তুজসহ ৫ জন উপজাতীয় সন্ত্রাসীকে আটক করেছে।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর এক গ্রামবাসী জানান যে, পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর উল্লেখিত ব্যক্তিরা সবাই ঐতিহ্যবাহী জুম ও বাগান চাষী। বন্য পশু-পাখী থেকে জুম ও বাগানের ফসল রক্ষার জন্য তারা সাধারনত সরকারি লাইনন্সেপ্রাপ্ত এসবিবিএল বন্দুক কিনে থাকেন। এছাড়া স্থানীয় ক্যাম্পের অনুমতি সাপেক্ষে নিজস্ব তৈরী গাদা বন্দুক ব্যবহার করে থাকেন, যা একপ্রকার ওপেন সিক্রেট বিষয় বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান যে, লাইসেন্সকৃত ৩টি এসবিবিএল বন্দুক বাদে বাদবাকী দেশীয় তৈরি ৫টি গাদা বন্দুক বন্য পশু-পাখী মারা ছাড়া সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না। এছাড়া মিজোরাম থেকে যে ৩০টি কার্টুজ কিনে আনা হয়েছে সেগুলো সাধারনত বন্য মোরগ শিকারের কাজে ব্যবহার করা হয় হয় বলে তিনি জানান।
আরও উল্লেখ্য যে, গত ১৯ জুলাই ২০২১ সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃক বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন রুমা উপাজেলার গালেংগ্যা এলাকা থেকে ২৯টি মর্টার শেল উদ্ধারের দাবিকেও একটি সাজানো নাটক বলে অভিযোগ ওঠে। সেই সময় সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন সদর দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বান্দরবান সেনা রিজিয়নের অধীন বলীপাড়া বিজিবি জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার মুহম্মদ শরীফ-উল-আলমের নেতৃত্বে বিজিবি ও সেনা সদস্যরা দুর্গম গালেংগ্যা এলাকা থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ২৯টি মর্টার শেল উদ্ধার করে বলে দাবি করা হয়।
স্থানীয় একাধিক সূত্রমতে, সেনা ও বিজিবি সদস্যদের কর্তৃক মর্টার শেল উদ্ধারের সংবাদটি একটি সাজানো নাটক।
সূত্রটি জানায়, বস্তুত সেনাবাহিনী ঐদিন রুমার স্থানীয় বাসিন্দা ওয়েবার ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে মিয়ানমারের এক সশস্ত্র দলের কাছ থেকে থানচি এলাকা থেকে ৯৯টি মর্টার শেল গ্রহণ করে। মিয়ানমারের এক সশস্ত্র দলের কাছ থেকে পাওয়া ঐ মর্টার শেলগুলোই উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি ও প্রচার করা হয়।