হিল ভয়েস, ১৬ মে ২০২২, খাগড়াছড়ি: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়ন এলাকায় ক্যাম্প স্থাপনের নামে স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসীর ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রায় ২১ একর পরিমাণ জুম্মদের এসব ভূমিতে বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বাগান রয়েছে বলেও জানা গেছে।
ভুক্তভোগী জুম্মরা হলেন- (১) যামিনী চাকমা (৫৩), পীং-মৃত পদ্মধন চাকমা, গ্রাম-হারুবিল; ২. বিজয় চাকমা (৪৫), পীং-মৃত পদ্মধন চাকমা, গ্রাম-হারুবিল; (৩) ধারাজ্যা চাকমা (৬০) পীং-ইন্দ্র কুমার চাকমা, গ্রাম-ঘিলাতলী ও (৪) মঙ্গল চাকমা (৬০), পীং-মহেশ্বর চাকমা, গ্রাম-ঘিলাতলী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুম্মদের এইসব ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পানছড়ি বিজিবি জোনের অধীন উপজেলার চেঙ্গী ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়া বিজিবি ক্যাম্পের কম্যান্ডার সুবেদান মোঃ সুলেমান গত ১৫ মে ২০২২ উক্ত ভূমির মালিকদের দুটি চিরকুট পাঠান। একটি চিরকুটে লেখা আছে, ‘সোমবার তাং ১৬/৫/২২ ইং জমির কাগজপত্রসহ হাজির থাকতে হবে, না হলে টাকা পাবে না সরকারী ক্যাম্প হবে।’ আরেকটিতে লেখা আছে, ‘আজকে অবশ্যই কল দিবে, ০১৬৬৯-৬১১৫৫৬, সনখোলা বিজিবি ক্যাম্প।’
উক্ত চিরকুটের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে, জুম্মদের উক্ত জায়গায় বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। ভূমির কাগজপত্র দেখাতে হবে। নইলে কোনো টাকা পাবে না মালিকরা। এমনিতেই সরকার দখল করে নেবে।
জানা গেছে, ভূমির মালিকরা কেউই তাদের ঐ জায়গা ছেড়ে দিতে নারাজ। কারণ সেইসব জায়গা তারা যুগ যুগ ধরে ভোগদখল করে আসছে। সবচেয়ে বড় কথা, ঐ জায়গায় তাদের দীর্ঘদিনের আম, বড়ই, পেয়ারা, লিচু ইত্যাদি ফলজ এবং সেগুনসহ বনজ বাগান রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যামিনী চাকমা ও বিজয় চাকমা তাদের দুই ভাইয়ের জায়গার পরিমান অন্তত ১০ একর। উক্ত জায়গায় তাদের রয়েছে ১,২০৯ টি আম গাছ ও সেগুন গাছ লাগানো আছে ১৩০০০টি। অপরদিকে, ধারাজ্যা চাকমার ১০ একর জায়গায় রয়েছে ২০০০টি বড়ই গাছ ও ৮০০টি পেয়ারা গাছ এবং মঙ্গল চাকমার ১ একর পরিমাণ জায়গায় রোপন করা হয়েছে ১০০টি আম ও ১০০টি লিচু গাছ।
বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের প্রক্রিয়ার কথা জেনে ভুক্তভোগী মালিকরা গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়ে আজ ১৬ মে ২০২২ পানছড়ি বিজিবি জোনের জোন কম্যান্ডার ছনখোলা পাড়া বিজিবি ক্যাম্পে যাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক অধিকারকর্মী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার, সেনাবাহিনী ও বিজিবি এখন ইচ্ছেমত যত্রযত্র কখনো উন্নয়নের নামে, কখনো সেনা ও বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে জুম্মদের ভূমি বেদখল করে চলেছে। জুম্মদের মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং পার্বত্য চুক্তি লংঘন করে স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতিরেকেই এই ভূমি বেদখল করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, অতিসম্প্রতি বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) কর্তৃক ক্যাম্প স্থাপনের জন্য অধিগ্রহণের নামে স্থানীয় আদিবাসী জুম্মদের প্রায় ৬০ একর পরিমাণ ধান্যজমি বেদখলের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই জমিগুলো দখল হয়ে গেলে জমির মালিকদের জীবনধারণ করার মতো কোনো জমি থাকবে না বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এতে অন্তত ২১টি জুম্ম পরিবার তাদের ধান্যজমি হারাবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, এই ২১ জনের কেউই তাদের জীবিকার অবলম্বন এইসব জমি হাতছাড়া করতে ইচ্ছুক নয়। এছাড়া তাদের জীবনধারণ করার মতো আর জমি নেই বলেও জানান তারা। এইসব জমিতে তারা বছরে ২/৩ মৌসুম চাষাবাদ করে থাকেন।