ক্যবা মারমা
আমরা দেখেছি যে, ২০০৮ সালে কুকি-চিন জাতীয় উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি সংগঠন রুমা সদরে স্থাপিত হয়। রুমা সদরের এডেন পাড়ার ছেলে নাথান বমের উদ্যোগে ও নেতৃত্বে এ সংগঠনটি স্থাপিত হয়েছে বলে জানতে পারি। সেই সময়ে একদিন হঠাৎ পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি বান্দরবানের ৬৯ সেনা রিজিওনের তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার মোঃ নকীব আহমেদ চৌধুরীকে (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব) প্রধান অতিথি করে কুকি-চিন জাতীয় উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম উদ্বোধন করে। আমার মন আছে, ব্রিগেডিয়ার সাহেব ঐদিন ঐ সংগঠনের উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা আর্থিক সাহায্য দিয়ে এসেছেন। সেই সময় এই সংগঠনের তৎপরতা নিয়ে কয়েকদিন আলোচনার পর অনেকগুলো বছর চুপচাপ ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়, কুকি-চিন জাতীয় উন্নয়ন সংস্থা (কেএনডিও)-কে কুকি-চিন জাতীয় ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনে রূপান্তরিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক জুম্ম আদিবাসী ভূখণ্ডের রাঙ্গামাটি জেলার চারটি (বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি) ও বান্দরবান জেলার পাঁচটি (আলীকদম, লামা, থানছি, রুমা, রোয়াংছড়ি) মোট নয়টি উপজেলাকে নিয়ে একটি কুকি-চিন রাজ্য (ষ্টেট) করার দাবি তোলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসী জনগণের অস্তিত্ব রক্ষা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘবছরের আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে আন্দোলনকারী দল ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে লড়াইয়ে নেমেছে। এই কর্মধারা অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং তার নেতাকর্মীদের নামে বিভিন্নরূপে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার প্রতিনিয়ত চালিয়ে আসতে দেখা যায়।
শুধু তাই নয়, নিজেদের সশস্ত্র শক্তি ও অতীতের ন্যায় মানুষ খুনের (দুধর্ষ কুকি বিদ্রোহ, হেড হান্টিং) কথা বলে ভয় দেখিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে কুকি-চিন জাতীয় ফ্রন্টের সামরিক শাখার সশস্ত্র কর্মীরা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনরত সদস্যদের উপর এক অতর্কিত হামলায় আত্মনিয়োগকারী অ্যাকশন চাকমা নামের একজন কর্মীকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের দ্বারা হত্যা করেছে বলেও জানা গেছে। এই কুকি-চিন জাতীয় ফ্রন্ট সংগঠনের প্রচার শাখার লোকজন নিজেদের আবার শান্তিপ্রিয় বা শান্তিবাদী বলেও প্রচার করে যাচ্ছে। যদিও তাদের দাবি এবং কাজের মধ্যে বিশাল ফারাকটি যে কেউ সহজে বুঝতে পারে।
কুকি-চিন জাতীয় ফ্রন্টের দাবি করা রাজ্যের অংশে আমাদের উপজেলা রোয়াংছড়ির নামও দেখা যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পূর্ববর্তী সময় ১৯৯৫-১৯৯৭ সালের দিকে যখন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আন্দোলন জোরদার চলেছিল, তখন শোনা গিয়েছিল রুমা উপজেলাকে বম রাজ্য করার জন্য তৎকালীন জাতীয় পার্টি থেকে পরবর্তীতে বিএনপি নেতা ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের বমজাতির সদস্য প্রয়াত মিঃ লাল ঙাক বম-এর সাথে রুমা সেনাজোনের সিও-র মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। জোনের সিও নাকি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রুমা উপজেলাকে বম রাজ্য করে দেয়া হবে।
প্রয়াত লাল ঙাক বম এর ব্যাপারে নিশ্চয় অনেকের জানা আছে, তিনি ১৯৯৫ সালের ১৫ই মার্চ বান্দরবান জেলাতে প্রথম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সম্মেলন পণ্ড করে দেয়া ও পাহাড়ি ছাত্রদের উপর হামলা চালানোর জন্য নিজের নগণ্য স্বার্থের লোভে শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা ব্যবহৃত পরিকল্পিত দায়িত্ব পালন করে লাই পাড়া এবং ফারুক পাড়া এলাকা থেকে গাছের লাঠি সংগ্রহ করে গাড়িতে বান্দরবান সদরে এসেছিলেন। আধিপত্যবাদী শাসকগোষ্ঠী পরাধীন দুর্বল জাতি ও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যবহার করে ঐ জাতি ও সমাজের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা এবং ঐ ব্যক্তিস্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও নিজের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে নিজ জাতি-সমাজকে বিভিন্ন কৌশলে বিপথগামী করার ইতিহাস পৃথিবীতে কম নেই। এমন ব্যক্তিস্বার্থান্বেষী শাসকগোষ্ঠীর ব্যবহৃত সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ সেই সময়ে মারমাদের মধ্যে যেমন ছিল, তেমনি জুম্মজাতির অংশ অন্যান্য জাতির মধ্যেও ছিল। বলা চলে, ঐ স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের বান্দরবান অঞ্চলে মারমা সমাজের নেতৃস্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই নেতৃত্ব দিত।
রুমা উপজেলাকে নিয়ে বমরাজ্য প্রতিষ্ঠার অলীক প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা বম সমাজের মধ্যে কতটুকু প্রভাব ফেলেছিল তা জানি না। কিন্তু নানান কারণে জুম্ম বা পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর সমষ্টিগত অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বমজাতি থেকে ভালো নেতা বা নেতৃত্ব আমরা পাইনি। এর মানে এই নয় যে, বম জাতি থেকে ভালো (এখানে ভালো বলতে বুঝানো হচ্ছে চরিত্র ও নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন) কোনো ছাত্র বা যুব নেতা উঠে আসে নাই তা নয়। তবে তাঁরা আন্দোলনে টিকে থাকে নাই – এটাই সত্য। আমার মনে পড়ে, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রুমা উপজেলার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন একজন শিক্ষিত এবং নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন যুবক। তাঁর নাম এখন মনে করতে পারছি না। তিনি বছরখানেক রুমাতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং সংগঠন গড়ে তুলে ছিলেন। কিন্তু তিনি একদিকে সেনাবাহিনীর হুমকি ও আরেকদিকে প্রলোভনে পড়ে আন্দোলন থেকে সরে যান। তাঁর সরে যাওয়ার পর রুমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মারমার নেতৃত্বে এগিয়ে চলে।
১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পরে রুমাকে নিয়ে বমরাজ্যের কথাবার্তা হাওয়ায় মিশে যায়। এরপর চুক্তির শর্ত সাপেক্ষে জনসংখ্যা অনুপাতে নির্ণীত ছয় জাতিসত্তা (বম, লুসাই খিয়াং, পাংখোয়া খুমি ও চাক) থেকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের একসময়কার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লয়েল ডেভিড বম পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য হোন। তাঁকে নিয়েও শাসকদলের লোকজন নানান বিতর্ক সৃষ্টি করে কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম আদিবাসী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে জুম্ম আদিবাসীদের মধ্য হতে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী ও স্বার্থলোভী ব্যক্তিদেরকে (যাঁরা নিজের হোক বা সমষ্টিগত পাহাড়িদের স্বার্থে হোক কখনো আন্দোলন করেনি, এমনকি একটি কথাও ব্যয় করেনি) নিয়ে শাসকগোষ্ঠী মেকি ইস্যু তৈরি করে এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার দ্বারা অবাস্তব কল্পনা সৃষ্টি করে জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য লিপ্ত থেকেছে। শাসকগোষ্ঠী এধরনের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জুম্ম জাতির কোনো না কোনো অংশকে আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে দূরে সরে রাখা বা নিষ্ক্রিয় করে রাখা অথবা একে-অপরের সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে দেয়া অথবা আন্দোলনের বিরোধিতায় লেলিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহার করে এসেছে এবং জুম্ম জাতির সেইসব পাপী সন্তানরাও নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে মোহাচ্ছন্ন হয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্তবেলায় শাসকগোষ্ঠী সকল জুম্ম জাতিকে ধ্বংসের কিনারায় ধীরে ধীরে নিয়ে যাচ্ছে, কাউকেও রক্ষা করছে না। দিন দিন সকল জুম্ম আদিবাসীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অস্তিত্বের ভূমি ক্ষুদ্র হয়ে আসছে। বর্তমানে এরূপ অবস্থা আরও প্রকট রূপে দেখা যায়। ব্যক্তিস্বার্থান্বেষী ও স্বার্থলোভী ব্যক্তিরা কী করে, কী না করে তা দেখে থাকলেও বা জানলেও জুম্ম লোকজনের শিক্ষা বা জ্ঞান হচ্ছে না। সমাজে একটা প্রবাদ আছে, “নয় বছরে আক্কেল না হলে নব্বই বছরেও আক্কেল হয় না”। জুম্ম সন্তানদের অবস্থাও তাই।
দেখা যায় যে, কুকি-চিন জাতীয় উন্নয়ন সংস্থা (কেএনডিও) থেকে কুকি-চিন জাতীয় ফ্রন্ট (কেএনএফ) রূপান্তরিত হয়েছে। কেএনডিও বা কেএনএফ-এ জুম্মজাতির ছয় জাতিসত্তা বম, খুমি, লুসাই, খিয়াং, পাংখোয়া ও ম্রো নিয়ে আলাদা জনসমষ্টি বা জাতি কথা তুলে ধরা হচ্ছে। তাদের দাবিকৃত রাজ্যে তাদেরই দাবিকৃত জাতির ভূমি শাসকগোষ্ঠীর লোকজনেরা দখল করছে, তাদের দাবিকৃত জাতির লোকজন উচ্ছেদ হচ্ছে ও বিপদে পড়ছে, কিন্তু কেএনএফ বা কেএনএ (কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি)-এর কোনো বক্তব্য নেই। আদিবাসী জুম্ম জনগণের ভূমি দখল, দমন, বিতাড়ন ও স্বাধিকার বঞ্চিত করার শাসকগোষ্ঠীর প্রধান হাতিয়ার যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা তাদের উপলব্ধিতে নেই। বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, কুকি-চিন জাতীয় উন্নয়ন সংস্থার জন্মদাত্রী হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড। কুকি-চিন জাতীয় উন্নয়ন সংস্থা ও কুকি-চিন জাতীয় ফ্রন্ট এর সভাপতি এবং অন্যান্য নেতারা উন্নয়নের মাতৃগর্ভ স্থান খুঁজে পেয়েছিল সেনাবাহিনীতে। অন্য কোনো সরকারি সংস্থাতেও কুকি-চিন জন্মলাভের ভালো মাতৃগর্ভ স্থান দেখে নাই। সেই হিসেবে কুকি-চিন নেতাদের অত্যন্ত মেধাবী ও জ্ঞানী বলা যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি দখল বিরোধী আন্দোলন, আদিবাসী নিপীড়ন প্রতিবাদ, আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে কুকি-চিন সংগঠকদের কখনো দেখিনি। অন্যরা দেখে থাকলে তুলে ধরতে পারেন। রুমা উপজেলার পাঁচটি মৌজার নয় হাজার একরের অধিক ভূমি রুমা সেনানিবাস কর্তৃক অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও রুমা থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত লং মার্চের কুকি-চিন সংগঠকদের দেখা যায়নি। বান্দরবানের ফারুক পাড়া ও লাই পাড়া একজন সেনাকর্মজর্তার দ্বারা দখল হয়ে যাচ্ছিল। তখন যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে আন্দোলন না হতো ঐ পাড়াগুলোর বমজাতি আজ উচ্ছেদ হয়ে কোথায় চলে যেতো তা আমি জানি না। ঐ আন্দোলনে আমি নিজেই ছিলাম; লয়েল ডেভিড বম ও চিংলামং চাক ছিলেন। পাড়াবাসীকে নিয়ে আমাদের আন্দোলনের কারণে ঐ সেনাকর্মকর্তার লীজ বাতিল হয়ে যায়। তখন প্রভাবশালী কোনো নেতার সহযোগিতা আমরা পাইনি।
আজ লামা, আলিকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসী জনগণ ভয়ের মধ্যে রয়েছে, ভূমি হারাচ্ছে, নিপীড়িত হচ্ছে সেদিকে কুকি-চিন নেতাদের কোনো দৃষ্টি নেই, প্রতিবাদ নেই। তাঁরা ব্যস্ত চাকমা জাতি বা সংখ্যাগুরু জাতিগুলো তাদের বঞ্চিত করেছে বলে ধোঁয়া ছড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত করার কাজে এবং আদিবাসী জাতিগুলোর মধ্যে বিরোধ বেঁধে দেয়ার কাজে। এই বিরোধ লেগে গেলে তাদের কুকি-চিন স্টেট দাবিও কোথায় উড়ে চলে যাবে, আর আদিবাসীদের মধ্যে ধ্বংস কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বিচার-বিবেচনা করে দেখুন একবার।
কুকি-চিন সংগঠনের বয়ানের দিকে লক্ষ্য করুন। তাদের বক্তব্য হলো সব সুযোগ-সুবিধা চাকমারা ভোগ করছে, চুক্তি বাস্তবায়ন হলে জুম্মল্যাণ্ড হয়ে স্বাধীন হয়ে যাবে। যেগুলো একেবারেই সেনাবাহিনী ও উগ্র সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠী বক্তব্যের সাথে হুবহু মিল। চাকমারা সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নিয়েছে, এমন বক্তব্য মগপার্টিও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে আসছে। অধিকার কার কাছ থেকে চাইতে হবে বা নিতে হবে তা-ও জানে না। এখন যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আন্দোলন ত্যাগ করে দিলে তাদের দাবিগুলোও আর থাকবে না। এমন দাবি নিয়ে নিকট অতীতে ম্রো ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি) হয়েছিল। এমএনপি’র কার্যক্রম যখন জোরদার চলেছিল আমি তখন পোয়ামুড়িতে সাংগঠনিক সফরে ছিলাম। তখনও দেখেছি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিরোধী বক্তব্য।
ইয়াংরিং পাড়া (বউবেটি) দিকে পোয়ামুড়ি সেনাক্যাম্পের উপরের ঝিড়ির ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকজন ম্রোকে কাজ থেকে ফেরার সময় দেখা হয়। তাঁদের সাথে সাথে আলাপ করে জানা গিয়েছিল তাঁরা হেলিপ্যাড কাটার কাজে গেছে এবং কয়েকদিনের মধ্যে বান্দরবানের ব্রিগেডিয়ার যাবেন। তখন এমএনপি’র নেতা মেনরুম বাবু থাকতেন ঐ ইয়াংরিং পাড়া থেকে আধা ঘণ্টার রাস্তার হাঁটা পথে। আমরা বান্দরবানে ফিরে আসার সাত দিনে মধ্যে মেনরুন বাবু খুন হয়ে যান। এর দুই-তিন পর এমএনপি সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে। ঐ বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা লুহুপ ম্রোসহ বেশ কয়েকজন সদস্যের সাথে বান্দরবান কারাগারে আমার দেখা হয়, কথা হয়। তাঁরা বলে প্রশাসন তাঁদের দেয়া ওয়াদা পালন করেনি। ঐদিকে শাসকগোষ্ঠীর লাভ হয়েছে। তাঁরা দেখাতে পারলো পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ সন্ত্রাস করছে। জনসাধারণকে নিরাপত্তা দেয়া এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সেনাক্যাম্প ও সেনা কার্যক্রম বজায় রাখা দরকার। ঐ লক্ষ্য পূরণ করে দিচ্ছে সেনাবাহিনীর লালিত-পালিত বিভিন্ন নামের পার্টি। এরূপ একটি পার্টি হয়ে উঠছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। এই হলো কুকি-চিনের উন্নয়ন কার্যক্রম পথরেখা।
বি:দ্র: ক্যবা মারমার ফেসবুক থেকে নেয়া, ৩ মে ২০২২।