হিল ভয়েস ৭ এপ্রিল ২০২২ বিশেষ প্রতিবেদক: ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকুরীতে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্ধ ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সকাল ১১.০০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ, চট্টগ্রাম অঞ্চল এর উদ্যোগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক রুমেন চাকমার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব স্নেহময় ত্রিপুরার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি বক্তব্য রাখেন ধর্মরাজ তঞ্চঙ্গ্যা, মংমংশি মারমা, ধীমান ত্রিপুরা, নির্টন মারাক, মেনপং ম্রো, হ্লামিউ মারমা, পহেলা চাকমা, ডচেংনু চৌধুরী, সুখী কুমার তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন “২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে এক সরকারি ঘোষণায় সরকারি চাকরিতে আদিবাসী কোটাসহ সকল ধরনের কোটা বাতিল করা হয়। এর প্রতিবাদে তখনকার সময়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের দাবি জানালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আদিবাসী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কিন্তু ৪০ তম বিসিএস এর চূড়ান্ত পরীক্ষায় কয়েকজন আদিবাসী প্রার্থী ভাইভা দেওয়ার পরও কাউকে কোন ক্যাডারে সুপারিশ দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি কথার বাস্তবায়ন করা হয়নি।”
মানববন্ধনে দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন ” আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা পুনর্বহাল এর সুমষ বন্টন এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর (চাক, ম্রো, বম, খেয়াং, খুমি, কোচ, মাহাতো, রাজবংশী, পাংখোয়া প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী) জন্য সরকারি চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষা ভর্তির ক্ষেত্রে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের এই অধিকার আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয় সংবিধানের বিরুদ্ধেও নয়, এটি আমাদের ন্যায্য অধিকার পাওয়ার আন্দোলন। সভ্য প্রত্যেক দেশে যেখানে অপ্রতিনিধিত্বশীল জাতিগোষ্ঠী থেকে প্রতিনিধিত্বশীলতা তুলে আনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সেখানে বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা সুবিধা বাতিল করেছে সভ্য বিশ্বে কখনোই কাম্য নয়।”
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, ” সরকারের আদিবাসী কোটা বাতিলের ঘোষণাটি ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা পুনর্বহাল না রাখা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে মানববন্ধন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ২০০ শতাধিক আদিবাসী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
অপরদিকে একই দাবিতে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে সকাল ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে আদিবাসী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি সুশান্ত মাহাতোর সভাপতিত্বে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, কেন্দ্রীয় সদস্য বিভুতি ভুষণ মাহাতো, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নকুল পাহান, সাধারণ সম্পাদক তরুন মুন্ডা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সহ-সভাপতি কলাবতি মাহাতো, পাহাড়ি আদিবাসী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক জীনিস চাকমা, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক বিজয় চাকমা, সদস্য শুভ্রদেব চাকমা ও লিংকন মারমা প্রমুখ।
বক্তারা ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার চুড়ান্ত তালিকায় কোন আদিবাসী প্রার্থীকে সুপারিশ না করার তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানান। ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের ৫% কোটা তুলে দেওয়ার কারনে আজকে কোন আদিবাসী প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়নি। আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবি জানান।
বক্তারা আরও বলেন, আদিবাসীদের কোটা বাতিল করার এখনো সময় হয়নি। কারন আদিবাসীরা এখনো উন্নয়নের প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছেন। তাদের শিক্ষা এবং চাকরির যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। আদিবাসীদের উপর সরকারের বিমাতা সুলভ আচরণের প্রতিবাদ জানান। ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষার চুড়ান্ত তালিকায় আদিবাসীদের পুর্নবিবেচনা করে ফলাফল প্রকাশ করার জোর দাবি জানানো হয়।
একই দাবিতে আগামী ১১ এপ্রিল রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টের সামনে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে আদিবাসী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি।