হিল ভয়েস, ৩০ এপ্রিল ২০২২, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি গতকাল শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২১তম অধিবেশনে বলেন, বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সামরিক সমাধানের পথ বেছে নিয়েছে।
এজেন্ডা আইটেম ৫: “আদিবাসীদের সাথে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের সংলাপ”-এর উপর অংশগ্রহণ করে জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি প্রীতিবিন্দু চাকমা আরও বলেন, সেনাবাহিনী প্রায়শই সামরিক অভিযান পরিচালনা করে, যার ফলে বিচার-বহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, বাড়িঘর তল্লাসি, মানবাধিকার কর্মীদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত (ক্রিমিনালাইজ) করা এবং আদিবাসী নারীর উপর সহিংসতা ইত্যাদি সংঘটিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায়। অন্য কথায়, সামরিক বাহিনী সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এমনকি তারা পাঁচটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে চলেছে এবং হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি সহ আদিবাসীদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টির লক্ষ্যে সে সকল সন্ত্রাসী বাহিনীগুলিকে ব্যবহার করে থাকে।
শ্রী প্রীতিবিন্দু চাকমা বলেন, “গতকাল (২৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধির বক্তব্য শুনেছি। প্রতিনিধির বক্তব্যে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ সরকার এবং আদিবাসী জুম্ম জনগণের মধ্যে ১৯৯৭ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং চুক্তিটি সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে’’। সরকারি প্রতিনিধি হওয়া সত্বেও তিনি জানেন না, চুক্তিটি সম্পূর্ণ না আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
প্রকৃতপক্ষে, পার্বত্য চুক্তির মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ধারা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারা হল সকল অস্থায়ী সামরিক ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া, কিন্তু সরকার এখনও তা বাস্তবায়ন করেনি। ৫০০-এর অধিক সামরিক ক্যাম্পের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০০টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী বিগত কোভিড মহামারী চলাকালীন সময়ে আরও ২০টি ক্যাম্প নতুন করে স্থাপন করেছে।
জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কমিটি ও সংস্থাগুলির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে নিয়োগ দেয়ার আগে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মানবাধিকার রেকর্ড যাচাই করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রীতি বিন্দু চাকমা স্থায়ী ফোরামের প্রতি আহ্বান জানান।
নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদর দফতরে বর্তমানে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২১তম অধিবেশন ২৫ এপ্রিল থেকে ৬ মে ২০২২ পর্যন্ত ব্যক্তিগত উপস্থিতি এবং অনলাইনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আদিবাসী জনগণ, ব্যবসা, স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতিসহ মানবাধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে নীতি’, এবং আদিবাসী ভাষার আন্তর্জাতিক দশক ২০২২-২০৩২-এর ভিত্তি স্থায়ী ফোরামের ২১তম অধিবেশন চলছে।
বাংলাদেশ থেকে জনসংহতি সমিতির পক্ষে শ্রীমতি অগাস্টিনা চাকমা এবং বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের পক্ষে চঞ্চনা চাকমা শারীরিক (ইন-পার্সন) উপস্থিতির মাধ্যমে স্থায়ী ফোরামের অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন।