হিল ভয়েস, ২ এপ্রিল ২০২২, চট্টগ্রাম: গতকাল ১ এপ্রিল ২০২২ চট্টগ্রামে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, যে দল আমার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মূল্যায়ন করে না, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন করে, তাকে আমার ভোট দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমার অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে যার দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে তাকে আমি ভোট দিতে যাবো কেন?
চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘অস্তিত্বের লড়াইয়ে আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হই’ শ্লোগানের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার ১০ম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে শ্রী লারমা উক্ত কথাগুলো বলেন।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও এবং সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতি প্রদীপ কুমার চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য এড. সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু, ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি প্রফেসর রনজিত কুমার দে, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাংবাদিক বাসুদেব ধর, প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জু ধর, ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম জেলার নেতা মনিন্দ্র কুমার নাথ, ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. তাপস পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য, ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের নেতা এড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ ও উত্তম কুমার শর্মা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা আরও বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদে তারাই নির্বাচিত হয়ে আসেন যারা অস্তিত্বের জন্য লড়াই করে যেতে পারেন। আমি সারা বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাথে সংহতি জানাতে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা অনেকেই অনেক কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারি না, আবার না বললেও নয়। তাই আমি আজ এই মঞ্চ থেকে বলতে চাই, আমাদের অস্তিত্বের যে বিপন্ন অবস্থা হয়েছে তা থেকে আমরা কাটিয়ে উঠতে হলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সংগঠিত হয়ে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে চট্টগ্রামের মানুষের এদেশের আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কার্যক্রমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যে ভূমিকা আমরা দেখি তা সকল ক্ষেত্রে না হলেও প্রধান প্রধান ক্ষেত্রে কিন্তু স্ববিরোধিতার ভূমিকা প্রত্যক্ষ করি। কিছুক্ষণ আগে একজন বক্তা বলেছেন, ‘যাকে আমি ভোট দিই, যাকে আমি মূল্যবান ভোট প্রদান করে নির্বাচিত করি, তিনি আমার উপর দমন-পীড়ন, শোষণ করে যান।’ আমি মনেকরি, এটা একটা স্ববিরোধীতা।
তিনি বলেন, যে দল আমার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মূল্যায়ন করে না, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন করে, তাকে আমার ভোট দেয়ার প্রয়োজন নেই। নীতি-আদর্শ না থাকায় আমাদের জনগণ সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমার অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে যার দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে তাকে আমি ভোট দিতে যাবো কেন?
তিনি বলেন, এই স্ববিরোধী কার্যকলাপ ও মনোভাব বজায় রেখে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যায় না। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার একটা প্রক্রিয়া আছে, সেটি হচ্ছে সঠিক নীতি-আদর্শ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য’র প্রতি একনিষ্ঠ থাকা। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্ববিরোধীতার অবসান ঘটবে। আমি মনেকরি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশের আদিবাসীসহ মেনহতি মানুষের পক্ষেও যুগপৎ আন্দোলন করে যাবে ।
জগাখিচুড়ির সংবিধান নিয়ে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছেঃ রানা দাশগুপ্ত
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এড. রানা দাশগুপ্ত বলেন, আজকের বাংলাদেশ শুধু বাংলাদেশ নয়, এই দেশে অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জগাখিচুড়ির সংবিধান নিয়ে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে নীতি আদর্শকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন হলে আমাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ২৫ জুন দেশের জেলা-উপজেলায় বিকাল ৩:০০ টায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। অক্টোবরের ২২ তারিখ সকাল ৮:০০টা থেকে বিকাল ৫:০০টা পর্যন্ত সারাদেশে গণঅনশন পালন করা হবে। ৯ ডিসেম্বর পথযাত্রার মাধ্যমে ‘চল চল ঢাকায় চল’ এর কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে আমরা ঢাকার রাজপথে গিয়ে মিলিত হবো। ১০ ডিসেম্বর পথযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে রওয়ানা হবো। ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ লক্ষ জনগণ নিয়ে আমরা মহাসমাবেশ করবো। এরপরও যদি না হয় তা হলে আমরা আমরণ অনশনের কর্মসূচি পালন করবো। এ সময় তিনি দাবি আদায়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভার পরবর্তী অনুষ্ঠানে তাপস হোড়কে সভাপতি ও এড. প্রদীপ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট ৩ বছর মেয়াদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।