মিতুল চাকমা বিশাল
আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, ‘অস্ত্র পরিহার করুন, রাষ্ট্রের সাথে সংঘর্ষে জড়াবেন না।’ অথচ সরকারের একজন দায়িত্বশীল এমপি হিসেবে এবং রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সর্বোপরি আওয়ামীলীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে তাঁর উচিত ছিল- চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের বিষয়ে, চুক্তি বাস্তবায়নের অন্তরায়সমূহ নিয়ে, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দল হিসেবে চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে আওয়ামীলীগের অবস্থানকে সুস্পষ্ট করা। যেহেতু গত ২১ মার্চ ২০২২ ছিল আওয়ামীলীগের তৃণমূল কর্মীসম্মেলন, সুতরাং তিনি তার কর্মীদের এটাও বলতে পারতেন যে, চুক্তিবিরোধী অবস্থান না নিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নে জনসংহতি সমিতি ও সরকারকে সহায়তা দিতে হবে এবং পার্বত্যাঞ্চলে সমস্ত চুক্তিবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের দৃঢ়হস্তে দমন করতে হবে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিহাসের বিষয় এই যে, হানিফ অনেকটা দাম্ভিকতার সুরেই বলেছেন যে, ‘অস্ত্র পরিহার করুণ, রাষ্ট্রের সাথে সংঘাতে জড়াবেন না।’
আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আওয়ীমীলীগের কতিপয় নেতা-কর্মীর বক্তব্য অত্যন্ত উস্কানিমূলক এবং বিদ্বেষমূলক। চুক্তি বাস্তবায়নের কথার বিপরীতে বরাবরই তারা অবৈধ অস্ত্র এবং উন্নয়ন নিয়েই বেশি কথা বলেন। মোটকথায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার মূল কেন্দ্রবিন্দুটিকে তারা বরাবরই পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করেন এবং শক্তিপ্রয়োগের নীতিটিকে সামনে নিয়ে আসেন। গতকাল আওয়ামীলীগের কর্মী সম্মেলনে মাহবুবউল আলম হানিফ নির্দ্বিধায় এবং অনেকটা দম্ভের সুরে বলেছেন যে, ‘সন্ত্রাস দিয়ে পৃথিবীতে কেউ কোনদিন শান্তি আনতে পারে নি। অস্ত্র দিয়ে কখনও শান্তি আসে নি। সন্ত্রাস এবং শান্তি কখনও একসাথে চলতে পারে না। যারা এখনও অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে রাঙামাটির মানুষকে জিম্মি করে ঘুম হারাম করতে চাচ্ছেন, তাদেরকে অনুরোধ করবো, আপনারা অস্ত্র পরিহার করুণ। রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াবেন না। কারণ রাষ্ট্রের শক্তি অনেক বড় শক্তি। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে, আর না হয় অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করা হবে। তখন ঠিকতে পারবেন না।’
এমনিতর আরো কত বক্তব্য, কত কথা আমরা শুনে আসছি। কখনও মাটির ১০ হাত গভীর থেকে সন্ত্রাসীদের বের করা হবে বলা হচ্ছে, কখনও পাহাড়ে বিশেষ পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলা হচ্ছে, কখনও বা সেনাক্যাম্প বাড়ানো হবে বলা হচ্ছে।
বাস্তবিকপক্ষে এসবের কোনটিই পাহাড়ের সমস্যার সমাধান করতে পারে না এবং পারবেও না। সরকার কর্তৃক শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিপরীতে যদি শক্তিপ্রয়োগের নীতিকে আঁকড়ে ধরা হয়, তাহলে সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হবে, যার সমাধান তাদের দ্বারা কখনই আসবে না।
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে, জনসংহতি সমিতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ কখনই বলে নি যে, অস্ত্র পৃথিবীতে শান্তি বয়ে নিয়ে এসেছে। তারা এটাও জানে এবং বুঝে যে, অস্ত্র কোন নির্ধারক উপাদান নয়, রাজনৈতিক সমাধানই একমাত্র পথ। ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতার স্থপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানকে একদল উচ্চাভিলাষি সামরিক কর্মকর্তা কর্তৃক সপরিবারে হত্যার পর দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ও শাসন শুরু হলে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে জুম্ম জনগণ বাধ্য হয়ে জাতীয় অস্তি¡ত্ব রক্ষা ও অধিকারের স্বার্থে সশস্ত্র সংগ্রামে যেতে বাধ্য হয়। তারপরও জুম্ম জনগণ মহান পার্টির নেতৃত্বে আলোচনার টেবিলটিকে উন্মুক্ত করে দিয়ে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল। শান্তির শ্বেত কপোত সেদিন কেবল শেখ হাসিনা উড়িয়ে দেন নি, সন্তু লরামাও উড়িয়েছিলেন। রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী তথা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগের তথাকথিত নেতাকর্মীদের এই বিষয়টা গভীরভাবে অনুধাবন করা দরকার। যদি সত্যিই পাহাড়িরা অস্ত্রবাজি আর চাঁদাবাজির মধ্যেই নিজেদের আবদ্ধ রাখতে চাইতেন, তাহলে নিঃসন্দেহে সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য এগিয়ে আসার কোন প্রশ্নই ওঠতো না। কিন্তু রাষ্ট্রকে চুক্তি করতে হয়েছে এবং এটা স্পষ্টভাবে জেনে যে, জুম্ম জনগণের আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত এবং তাদের দাবিটি একটি রাজনৈতিক দাবি।
আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাবো, যদি সত্যিই পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে, সেনাশাসন প্রত্যাহার করে পাহাড়ে গণতান্ত্রিক সুষম পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক, আমরাও সেটা চাই। কিন্তু ২৪ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন না, উপরন্তু চুক্তিবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের নামে জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা, হয়রানি ও নিরাপত্তার অভাব সৃষ্টি করে জনগণকে হয়রানি করা কোনমতেই কাম্য হতে পারে না। সন্ত্রাসী খোঁজার নামে পাহাড়ে সেনাশাসন বলবৎ রাখা হবে, সেটাও আমাদের কাম্য নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করে চুক্তি অনুসারে আইনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হোক, জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদের সমন্বয়ে সৃষ্ট বিশেষ শাসনব্যবস্থাকে সুসংহত, শক্তিশালী এবং প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হোক, এটাই সকলের প্রত্যাশা।
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ক্ষমতায় থাকা শাসকদলের এমপি, মন্ত্রী এবং আমলারা বরাবরই চুক্তি বাস্তবায়নের বিপরীতে পাহাড়ে অস্ত্রবাজি’র (দীপঙ্কর তালুকদারের ভাষায় অবৈধ অস্ত্র) কথা বলেন। এবং এটাও অনস্বীকার্য যে, তাদের অঙ্গুলির তীর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির দিকেই। তারা বরাবরই চুক্তি বাস্তবায়নের অন্তরায় হিসেবে অবৈধ অস্ত্রের কথা বলে থাকেন। তার জন্য জনসংহতি সমিতিকে বরাবরই দোষারোপ করে চলেছেন যে, জনসংহতি সমিতিই এই অস্ত্রবাজির মূল হোতা। বাস্তবিকপক্ষে, তারা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও এটা স্বীকার করেন না যে, এই অবৈধ অস্ত্র কার হাতে আছে! কেন সন্ত্রাসীদের থেকে উদ্ধারকৃত হাতিয়ার এবং বুলেটে ‘BOF’ বাংলাদেশ অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি লেখা থাকে, কেন সন্ত্রাসীদের থেকে পাওয়া ইউনিফর্মগুলোতে ‘Bangladesh’ নামটি লেখা থাকে?
আমি একজন অধিকারকর্মী হিসেবে সেটা বলছি না, কেন বলছি তার যথাযথ কারণও আছে। বিশেষ করে ২০১২ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংহতি সমিতিকে সমূলে উৎখাত করতে রাষ্ট্রযন্ত্র মরিয়া হয়ে ওঠে। বান্দরবানে জনসংহতি সমিতি ও এর অঙ্গসংগঠন এবং সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সমগ্র বান্দরবানকে নেতৃত্বশূণ্য করে দেওয়া হয়। অপরদিকে ২০১৫ সালে অসহযোগ আন্দোলন ঘোষিত হওয়ার পরপরই সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংহতি সমিতির কেন্দ্র, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি তৃণমূল পর্যায়ের গ্রাম কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও একের পর এক গণহারে মামলা দেওয়া হয় (পার্টির সহ-সভাপতি এবং জেনারেল সেক্রেটারিও বাদ পড়েন নি)। বর্তমানে জনসংহতি সমিতির প্রায় ৫ শতাধিক (বেশিও হতে পারে) নেতাকর্মী এবং এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন (পিসিপি, এইচডব্লিউএফ) ও অঙ্গসংগঠনের (মহিলা সমিতি, যুব সমিতি) প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মী ফেরারি হয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছে। রাঙামাটি, বান্দরবানে সভা-সমাবেশ করা একপ্রকার নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বান্দরবানে পার্টির ব্যানারে সমাবেশ করা মানেই আরেকটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা। মোটকথায় সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশকে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করা, সভা-সমাবেশ করা এবং সামগ্রিকভাবে চুক্তি বিরোধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া জনসংহতি সমিতির ন্যায্য অধিকারের মধ্যে পড়ে। এটি কেবল জনসংহতি সমিতির একপাক্ষিক দায়িত্ব নয়, বরং চুক্তি স্বাক্ষরকারী হিসেবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরকারও এই দায়িত্বের অধিকারী।
অপরদিকে জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীদের এলাকছাড়া করে উক্ত এলাকাগুলোতে সরকারের অবৈধ পোষ্যবাহিনীর আমদানি করা হয়েছে এবং সেটাও প্রকাশ্যে একেবারে সেনাছত্রছায়ায়। রাষ্ট্রীয় যানবাহনে করে সন্ত্রাসীদের সুদূর খাগড়াছড়ি থেকে বান্দরবানে আমদানি করা হলো, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে (এএলপি, আরসা, আরএসও) আমদানি করা হলো। আর মিয়ানমারের সেইসমস্ত সশস্ত্র গ্রুপগুলোর দেশীয় রূপ হলো কথিত ‘এমএনপি (মারমা ন্যাশন্যাল পার্টি)’ বা মগ পার্টি এবং শামীম মাহফুজ-এর জামায়েতে আরাকান।
তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, অবৈধ অস্ত্র, সন্ত্রাসী বলতে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা শাসকগোষ্ঠী কাদের বোঝাতে চায়? যারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে তাদের? নাকি যারা সেনাছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে দিবালোকে রাইফেল কাঁধে ঘুরে বেড়ায়, তাদের? সেনাবাহিনী এবং সেনামদদপুষ্ট এই সমস্ত সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক কেবলমাত্র গত দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) মোট ২৮টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্য ২৫ জন জুম্মকে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ৩ জনকে খুন ও ১৫ জনকে সাময়িক অপহরণ করা হয়েছে (সুত্র: জনসংহতি সমিতি, ১২ মার্চ)। তাহলে প্রকৃত সন্ত্রাসী কারা? কারা পাহাড়কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছে?
মোদ্দাকথায় রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে এখন ২টি স্তরে ভাগ করেছে। আর এসবের বিশেষ টার্গেটে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি অর্থাৎ চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে নস্যাৎ করা। খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটির কিয়দংশে সংস্কারপন্থী, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দিয়ে জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর তাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী। উক্ত ২টি স্বশস্ত্র গ্রুপ এখন খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি জেলার লংগদু, বাঘাইছড়ি, সুবলং, জীবতলী, নানিয়াচর প্রভৃতি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে।
অপরদিকে রাঙামাটির কাপ্তাই, বিলাইছড়ির কিয়দংশ এবং বান্দরবান জেলায় তথাকথিত মগ পার্টি, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), সংস্কারপন্থী, এএলপি, আরসা, আরএসও এবং ইসলামিক স্বশস্ত্র গ্রুপগুলোকে জনসংহতি সমিতির বিপরীতে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। কাপ্তাই, রাজস্থলী, রোয়াংছড়ি, বান্দরবান সদরে মগ পার্টি, সংস্কারপন্থী ও ইউপডিএফ (গণতান্ত্রিক) এবং রুমা, থানচি, আলিকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও লামাতে এএলপি, আরসা, আরএসও এবং জামায়াতে আরাকান দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে রাখা হয়েছে।
সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে উক্ত সশস্ত্র গ্রুপগুলো তৃণমূল পর্যায়ে জনসংহতি সমিতি ও এর কর্মী সমর্থকদের ধরে ধরে হত্যা, অপহরণ ও হয়রানি করে চলেছে। তাদের উৎপীড়নে এলাকাছাড়া হয়ে পড়েছে অনেক গ্রামবাসীও। অপরদিকে এই সমস্ত সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা এবং অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে চলেছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়াও জাতিগতভাবে বিভেদকে উস্কে দিতে নামে-বেনামে নানা জাতিভিত্তিক নানা সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। যেসব সংগঠন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট এবং আশীর্বাদপুষ্ট।
রাষ্ট্রযন্ত্রের এই যে নিখূঁত কুটচাল, তা অবশ্যম্ভাবীরূপে সাধারণভাবে অনেকেরই বোধগম্যতার বাইরে। তবে বাস্তবতার নির্মম পরিহাস যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের এই সমস্ত কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জুম্ম জনগণের চলমান আন্দোলনকে নস্যাৎ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে সমূলে ধ্বংস করা।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন যে, ‘অস্ত্র দিয়ে কখনও শান্তি আসে নি।’ তার সুরে আমরাও বলতে চাই যে, অস্ত্র যেহেতু শান্তি আনতে পারে না, সুতরাং পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করা হোক। অস্ত্র দিয়ে পাহাড়ের সমস্যাকে বিবেচনা করা মানেই পাহাড়কে আরো সংঘাতময় এবং রক্তাক্ত করে তোলা। যত দ্রুততম সময়ে রাষ্ট্র এই সত্যটি মনেপ্রাণে হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে ততই রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলময় হবে। সুতরাং শক্তি প্রয়োগের নীতি পরিহার করে রাষ্ট্রকে আলোচনার টেবিলটিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে, তবেই পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে। সরকারের উচিত চুক্তিবিরোধী ভূমিকা থেকে সরে গিয়ে, সমস্ত চুক্তি বিরোধীদের মোকাবেলা করে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন করা এবং চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় শাসন কাঠামোকে শক্তিশালী করা তথা জুম্ম জনগণকে তাদের নায্য অধিকার দেওয়া। যাতে পাহাড়ের সমস্ত জনগণ বাংলার ১৭ কোটি মানুষের সাথে প্রাণভরে গাইতে পারে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।