হিল ভয়েস, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, চট্টগ্রাম: মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পিসিপির চবি ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার বর্ণমালা মিছিল ও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে বর্ণমালার মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রকাশিত দেয়ালিকা “মুক্তির বার্তা” ২য় সংকলন উন্মোচন করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নবোদয় চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নরেশ চাকমার সঞ্চালনায় উদ্ভোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণ চাকমা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দেয়ালিকা “মুক্তির বার্তা”র সম্পাদক অন্বেষ চাকমা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, “সরকারের সদিচ্ছার অভাবে আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এখনো পর্যন্ত আদিবাসীদের মধ্যে পাঁচটি মাতৃভাষায় পাঠদান কার্যক্রম চালু হলেও দক্ষ শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের অভাবে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনে ছাত্র-যুবকেরা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। প্রত্যেক মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। বক্তারা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন সহ সকল আদিবাসীদের স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার দাবি জানান।
অন্যদিকে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে “সকল আদিবাসীদের স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে” পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যাগে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, বর্ণমালা মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭.৩০ ঘটিকায় চট্রগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ হতে বর্ণমালা মিছিল বের করে চেরাগী পাহাড় চত্ত্বরে এসে মিছিলটির শেষে মানববন্ধন করা হয় । উক্ত মানববন্ধনে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক বিনিময় চাকমার সঞ্চালনায় এবং সংগঠনের সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা’র সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিপির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ-সভাপতি শৈউমং মারমা, সাংগঠনিক সম্পাদক হ্লামিও মারমা ও সাধারণ শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী ভানু মারমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অম্লান চাকমা।
স্বাগত বক্তব্যে অম্লান চাকমা বলেন-যে জাতি একদিন ভাষার আগ্রাসনের বিরোদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল, সে জাতির কাছে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে তাদের নিজ দেশে আদিবাসীর ভাষা সংকটাপন্ন। তিনি আরও বলেন-পাহাড়ের আদিবাসীদের ভাষা এই করুন হওয়ার কারণ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া। তিনি অবিলম্বে পাবর্ত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সাধারণ শিক্ষার্থী ভানু মারমা বলেন- আমরা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, উপজাতি নই, আমরা এই দেশের জনগোষ্ঠী এই দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়। তিনি পাবর্ত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান।
সাংগঠনিক সম্পাদক হ্লামিও মারমা বলেন, বাংলাদেশ একটি বিভিন্ন ভাষাভাষীর রোল মডেল হতে পারতো যদি বাংলাদেশ তার নিজের দেশে আদিবাসীদের ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যে জাতি ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে সেই জাতিগোষ্ঠী দ্বারা সেই দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা আজ সংকটাপন্ন। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। চুক্তি মোতাবেক চাকমা,গারো, মারমাসহ পাঁচটি ভাষার পাঠ্যবই চালু করা হলেও এই ভাষার বই শিক্ষা দেওয়ার শিক্ষক নেই। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন- সেই বইগুলো পড়ানোর দায়িত্ব সরকার কি কখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? এই ব্যর্থতার দায় সরকার এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই।
উপস্থিত থেকে আরও বক্তব্য রাখেন শৈউমং মারমা। তিনি বলেন, পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো জনগোষ্ঠীর ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি এ দেশেরও চাক,পাংখোয়া, ম্রোসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। দেশে আদিবাসীদের নিরাপত্তার অভাবে দেশান্তরিত হয়ে নিজ মাতৃভূমি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে কেন দেশান্তরিত হয়ে যাচ্ছে তার জবাব রাষ্ট্রের কাছে জানতে চান।
মানববন্ধনে পিসিপির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আজ মহান ভাষা আন্দোলন ৭০ বছর। সেই সত্তর বছর পরেও যদি সেদেশেই পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ” ভাষার অধিকারের দাবি জানাতে হয়, ভাষা সংরক্ষণের জন্য, তাদের ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য রাজপথে প্লেকার্ড হাতে আন্দোলনে নামতে হয় সেই লজ্জার কিন্তু রাষ্ট্র কিছুটেই দায় এড়াতে পারে না।