হিল ভয়েস, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের এক পথিকৃত ও ত্যাগী নেতা এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা (৫৫) আর নেই। আজ শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নওগাঁর মহাদেবপুর বাজারের একটি চায়ের দোকানে চা পানরত অবস্থায় হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সবিন চন্দ্র মুন্ডা মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের কাঁলনা গ্রামের মৃত কৃষ্ট পাহানের ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি তার স্ত্রী, ছোট ভাই ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান। আগামীকাল রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তার নিজ বসত বাড়ি বৃন্দাবনপুর (কালনা), এনায়েতপুর, মহাদেবপুর, নওগাঁয় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার ছিল মহাদেবপুর সদর হাটবার। সবিন চন্দ্র মুন্ডা বাজার শেষে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে স্থানীয় তুষার ট্রেডার্স দোকানের পাশে বসে চা পান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয় পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের ডাক্তার তমা আক্তার বলেন, সবিন চন্দ্র মুন্ডাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তিনি মারা যান। হার্ট অ্যাটাকের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, সহ সাধারণ সম্পাদক গণেশ মার্ডি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিমলচন্দ্র রাজোয়াড়, কোষাধক্ষ্য সম্পাদক সুধীর তির্কী, দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মানিক সরেন, প্রচার সম্পাদক রামপ্রসাদ মাহাতো, কেন্দ্রীয় সদস্য বিভূতী ভূষণ মাহাতো, রাজশাহী মহানগর সভাপতি সুমিলা টুডু, সাধারণ সম্পাদক আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, আদিবাসী যুব পরিষদ সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং, সাধারণ সম্পাদক নরেন পাহান, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ সভাপতি নকুল পাহান, সাধারণ সম্পাদক তরুণ মুন্ডা প্রমূখ তার মৃত্যুকে শোক প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, সবিন চন্দ্র মুন্ডা দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে আদিবাসীসহ নিপীড়িত বঞ্চিত অধিকারহীন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। সর্বদা হাস্যজ্জ্বল সবিন মুন্ডা জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সর্বশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশভাবে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন।
এরপর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের প্রায় সকল জেলায় আদিবাসী আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। মাস কয়েক আগেও হাত ভাঙ্গা অবস্থায়ও তিনি সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের আদিবাসী-বাঙ্গালিদের ভূমি অধিকারের আন্দোলনে সশরীরে থেকে সংহতি জানিয়েছেন। তার নিজ জেলা নওগাঁয় আদিবাসীদের যে কোন ধরনের বিপদে আপদে সবসময় তিনি ছুটে গেছেন এবং নানাভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন।