হিল ভয়েস, ২৬ জানুয়ারী ২০২২, পার্বত্য চট্টগ্রাম: গত ২ সপ্তাহে দেশের পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ বুধবার এক বিবৃতির মাধ্যমে তারা এই উদ্বেগ জানান।
বিবৃতিদাতারা জানান, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানাগেছে, পার্বত্য চট্রগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যাদের বয়স ১মাস থেকে ২বছরের মধ্যে। এ ধরনের শিশু মৃত্যুর ঘটনা মোটেই স্বাভাবিক নয়। এমন ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে; আমরা উদ্বিগ্ন।
কত সংখ্যক শিশুর মৃত্যু হলে রাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হবে এবং নড়ে চড়ে বসবে? প্রশ্ন করে বিবৃতি দাতারা আরো বলেন, শিশু মৃত্যুর ঘটনা থেকে প্রমাণ হয় ঐ পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষ মানুষের আকৃতিতে -খোলসে বেড়ে ওঠে মাত্র, তা না হলে কি করে ১৫ শিশুর মৃত্যুর পরও রাষ্ট্রযন্ত্র নিরুত্তাপ পড়ে থাকে বলেও উদ্বেগ জানান তারা। এছাড়া পাহাড়ে উন্নয়নের নামে অনেক প্রকল্প হয়েছে কিন্তু এ সকল প্রকল্প কিছু মানুষের অবসর যাপনের কেন্দ্র বলেও মনে করেন তারা।
এতগুলোর মৃত্যুতে আমরা একটি ফাঁপা রাষ্ট্র কাঠামোকে দেখতে পাই। ফলে পাহাড় আর সমতলের মধ্যকার বৈষম্যের সম্প্রসারণ বুঝতে পারি। অথচ কথা ছিলো ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের কোথাও কোনো থাও বৈষম্য থাকবে না; মুক্তিযুদ্ধে সুবর্ণজয়ন্তীরকালে এই বৈষম্যের মাত্রা শুধুই প্রকট হয়েছেÑ চাইলেই বৈষম্য মুক্তির স্বাদ মিলবে না। রাজনীতি, অর্থনীতির সবটাই এই বৈষম্য তৈরির কারিগর।
আমরা জেনেছি, শুধুমাত্র সেবা উপকরণের অপ্রতুলতাই নয়, সেবাদানকারীদের অবহেলাও এতগুলো প্রাণ ঝরেপরার জন্য দায়ী। গত দুই সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণকালে আমরা স্বাস্থ্যখাতের যে নগ্নতা দেখেছি, তাতে এখানে আর এমন কোনো রাখঢাকের বিষয় নেই বলেও মনে করেন বিবৃতিদাতারা।
নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তানুসন্ধান প্রয়োজন দাবী করে তারা আরো বলেন, এতগুলো মৃত্যুর পেছনের কারণ জানা দরকার। শুধুমাত্র আর্থিক অসঙ্গতির কারণে উন্নত সেবা নিতে না পারায় শিশুদের মৃত্যু ঘটেছে, এটি বিশ্বাস করার মতো নয়। তাছাড়া নিউমোনিয়ার প্রকোপ যখন এই বয়সের শিশুদের মাঝে খুবই বেশি এবং প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবায় এই রোগমুক্তির ব্যবস্থাও বিদ্যমান তখন এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।
বিবৃতি দাতারা নিম্নোক্ত তিনটি দাবী করেন- ১) অবিলম্বে শিশুর মৃত্যুর পেছনে কি কি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে; ২) হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত উপকণ ছিলো কিনা এবং না থাকলে কেন ছিলো না; এবং ৩) সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে ঘটনার তদন্ত করতে হবে।
বিবৃতি প্রদানকারীরা ব্যক্তিরা হলেন ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম,সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস.এম.এ সবুর, বি এম এ’র সাবেক সভাপতি ডা রশীদ -ই-মাহবুব, মানবাধিকার কর্মীখুশী কবির, উন্নয়ন কর্মী রোকেয়া কবির, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় শ্রমিক জোট এর কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, গণজাগরণ মঞ্চ এর সংগঠক অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতি কর্মি ড. সেলু বাসিত, সংস্কৃতি কর্মি এ কে আজাদ, উঠোন সাংস্কৃতিক সংগঠন সভাপতি অলক দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) এর সাধারণ সম্পাদক গৌতম শীল প্রমুখ।