দলীয় কোন্দল ও চাঁদার টাকা ভাগাভাগির জেরে লামায় মগপার্টির কম্যান্ডার খুন

হিল ভয়েস, ৪ জানুয়ারি ২০২২, বান্দরবান: মগপার্টি নামে খ্যাত সেনা-আওয়ামীলীগ মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দল ও চাঁদার টাকা ভাগাভাগির জের ধরে বান্দরবান জেলার লামায় খুন হন মগপার্টির সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড মংক্যচিং মারমা (৩৫)।

গতকাল সোমবার (৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১:০০ ঘটিকায় বান্দরবানে লামা উপজেলায় রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের অংহ্লা পাড়াস্থ আথুইমং মারমার (নিহত ব্যক্তির শ্বশুর) বাড়িতে এই খুনের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, মংক্যচিং মারমা রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলা বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের কেঙেরাছড়ি গ্রামের অধিবাসী। তিনি মগপার্টি নামে খ্যাত মারমা লিবারেশন পার্টির সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড। মগপার্টির প্রধান নেতা/কম্যান্ডার হচ্ছে উচিংমং মারমা ওরফে খইলাং এবং থার্ড-ইন-কমান্ড হচ্ছে উথোয়াইচিং মারমা ওরফে সবুজ।মংক্যচিং মারমা হচ্ছে মগপার্টির মধ্যে অন্যতম নৃশংস সন্ত্রাসী ও অনেক নিরীহ ব্যক্তির খুনী।

সূত্রে জানা যায় যে, গত ২ জানুয়ারি মংক্যচিং মারমা, উথোয়াইচিং মারমা ওরফে সবুজ ও সদস্য অংসিনু মারমার নেতৃত্বে মগপার্টির একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়া থেকে সিংনুমং মারমা নামে এক নিরীহ গ্রামবাসীকে অপহরণ করে এবং অপহরণের পর ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে ১০ লক্ষ টাকার মুক্তিপণের বিনিময়ে মংক্যচিং মারমার গংরা সিংনুমং মারমাকে ছেড়ে দেয়।

সূত্র আরো জানায় যে, মুক্তিপণের দশ লক্ষ টাকা নিজ দলীয় প্রধান উচিংমং মারমা ওরফে খইলাং-এর নিকট জমা না দিয়ে উক্ত টাকা নিয়ে মংক্যচিং মারমা লামার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লা পাড়াস্থ তার শ্বশুর আথুইমং মারমা বাড়িতে পালিয়ে যায়।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাত ৭:০০ ঘটিকার সময় শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে খাওয়া দাওয়া করে মংক্যচিং মারমা ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ১:০০ ঘটিকার সময় নিজ দলীয় কর্মীরা বাড়ি ঘেরাও করে এবং বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে মংক্যচিং-কে গুলি করে হত্যা করে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজস্থলী উপজেলায় সদ্য বহিষ্কৃত এক আওয়ামীলীগ সদস্যের মাধ্যমে জানা গেছে।

Oitijjhya.tv নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের “আভ্যন্তরিন কোন্দল ও চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ার জের ধরে লামায় এমএলপি’র সদস্যর চাঞ্চল্যকর খুন” শীর্ষক সংবাদেও তার সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায় যে, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মংক্যচিং মারমার নেতৃত্বে মগপার্টির সন্ত্রাসীরা রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলায় এবং বান্দরবানের সদর, রোয়াংছড়ি, লামা ও আলিকদম উপজেলায় অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে। তাদের মধ্যে অনেককে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। আবার অনেকের কাছ থেকে অমানুষিক নির্যাতনের পর মৃত্যুর হুমকি দিয়ে মোটা অংকের মুক্তিপণের টাকা আদায় করা হয়েছে।

এসব নৃশংসতার কারণে এসমস্ত এলাকার জনগণের মধ্যে মংক্যচিং মারমার উপর চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।সোমবার মগপার্টির একদল সশস্ত্র সদস্য কর্তৃক গুলি করে হত্যার পর মংক্যচিং-এর উপর কিছু বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিও দা দিয়ে কুপিয়ে ক্ষোভ মিটিয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

More From Author