হিল ভয়েস, ৬ জানুয়ারি ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: আগামীকাল থেকে ঢাকায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দুইদিন ব্যাপী জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথের স্বাক্ষরিত ৫ জানুয়ারির ঐক্য পরিষদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে বলা হয়েছে যে, ধর্মীয়-জাতিগত বৈষম্যবিরোধী মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ১০ম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন আগামী ৭ ও ৮ জানুয়ারি ২০২২ শুক্র ও শনিবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে ৭ জানুয়ারি ২০২২ শুক্রবার সকাল ১০:০০ টায়। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরে শুরু হবে র্যালী।
একই দিন বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে উদ্বোধনী অধিবেশন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি।
অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা), বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, বাংলাদেশের কম্যুনিষ্ট পার্টির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, বিশিষ্ট গবেষক প্রফেসর ড. আবুল বারকাত, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী।
দ্বিতীয় দিন ৮ জানুয়ারি ২০২২ শনিবার সকাল ১০:০০টায় একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। সারাদিন ধরে উক্ত সম্মেলন চলবে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করা হয়।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির এক প্রচারপত্রে বলা হয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সেই যে স্বদেশ উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করে, রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতায় আজও তা থেকে বিন্দুমাত্র উত্তরণ ঘটেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী সরকার সর্বস্তরের জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করেছে ঠিকই, কিন্তু অনেক কিছুতেই পিছিয়ে পড়েছে। অস্বীকারের উপায় নেই, বিগত একদশকে সরকারি নিয়োগে ও পদোন্নতিতে, সংসদে-জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থায় অংশীদারিত্বে-প্রতিনিধিত্বে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির উন্নতি ঘটেছে, নিবন্ধন আইনে বিরাজিত বৈষম্যের অবসান ঘটেছে, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রণীত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, অমানবিক কলাকানুন শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইন বাতিল হয়ে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন প্রণীত হলেও এর প্রকৃত বাস্তবায়ন আজও হয়নি। পার্বত্য শান্তিচুক্তি দীর্ঘ দু’যুগের উর্ধ্বকাল আগে স্বাক্ষরিত হলেও এর পূর্ণ বাস্তবায়ন আটকে আছে। পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন কবে বাস্তবায়িত হবে তা কেউ জানে না। মোদ্দাকথা, স্বাধীনতার অর্ধশতক পরেও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভূমির উপর নিরঙ্কুশ স্বত্ব ও অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি। আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিরবিচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে। এতে প্রবলভাবে উৎসাহিত হয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তাদের অপতৎপরতা ব্যাপকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়, বাড়িঘর, জায়গা-জামি, দেবোত্তর ভূমি জবরদখল, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, মেয়েদের অপহরণ ও ধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অতি সাম্প্রতিক শারদীয় দুর্গোৎসবে নারকীয় হামলা গোটা বিশ্বকে হতবাক করেছে এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধের দাবি আজ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।
ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষা আজকের বাংলাদেশে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ লক্ষে ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্য পরিষদ আয়োজিত মহাসমাবেশে ঐকমত্যের ভিত্তি ৭ দফা দাবিনামা গৃহীত হয়। এর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ টি দাবি মেনে নেওয়ার জন্যে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত অপর এক মহাসমাবেশ থেকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একে বিবেচনায় নিয়ে বিগত ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও বৈষম্যবিলোপ আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্যে পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের অঙ্গীকার করে। এসব অঙ্গীকার পূরণ আজ সময়ের দাবি। এ দাবির সাথে সংখ্যালগু মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিও রয়েছে। সর্বোপরি, আমরা মনে করি ও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ৭২-র সংবিধান পুন:প্রতিষ্ঠা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়।