হিল ভয়েস, ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ঢাকা: মনোরঞ্জন হাজং এর ন্যায় বিচারের দাবিতে রাজধানীতে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মানববন্ধন করেছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে যদি বিচারপতির ছেলে সাইফ হাসানকে গ্রেফতার করা না হয় তাহলে বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়।
গত সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিচারপতি ছেলের গাড়ির ধাক্কায় আহত মনোরঞ্জন হাজং-এর ন্যায় বিচার দাবিতে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক এক মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ’র সভাপতিত্বে সাংগঠনিক সম্পাদক বাদল হাজং এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত ধামাই, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস)-এর ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি ডন জেত্রা, হাজং স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নাঈম হাজং, মানবাধিকারকর্মী আকরাম ও প্রকাশক রবিন আহসান প্রমূখ।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে অলিক মৃ বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও আদিবাসীরা অবহেলিত, যার একটি নমুনা মনোরঞ্জন হাজংয়ের ঘটনা। দেশে যে ক্ষমতাবান ও ক্ষমতাহীনের বৈষম্য-এর চিত্র আমরা দেখতে পেলাম। আগামী সাতদিনের মধ্যে যদি বিচারপতির ছেলে সাইফ হাসানকে গ্রেফতার করা না হয় তাহলে বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও সহ কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবে বলেও হুশিয়ারী দেন এই ছাত্র নেতা।
আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত ধামাই বলেন, এই রাষ্ট্র শুধু ক্ষমতাবানদের নয়। এ রাষ্ট্র একজন শ্রমিক রিকশা চালক পুলিশ আদিবাসী সহ সাধারণ মানুষের। অবিলম্বে মনোরঞ্জন হাজং এর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান তিনি।
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক দীপক শীল তার বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও বিচারপতির ছেলের দামী গাড়ির নিচে পিষ্ট হয়ে একজন আদিবাসী হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে। মামলা করতে গেলেও মামলা নেয় না। এর তীব্র নিন্দা জানান এই ছাত্রনেতা।
বাগাছাস ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি ডন জেত্রা বলেন, মনোরঞ্জন হাজং-এর মেয়েও একজন পুলিশের সার্জেন্ট। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় পুলিশ হয়েও পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরে তিনি মামলা করতে পারেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দা এবং গণমাধ্যমে সংবাদের কারণে ঘটনার ১৪ দিন পর পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়, তাও আবার ঘাতক সাইফ হাসানকে বাদ দিয়ে অজ্ঞাত আসামী উল্লেখ করে। “এই কি আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অর্জন?” বলেও প্রশ্ন করেন তিনি।
হাজং স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নাঈম হাজং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে সেটির চাক্ষুষ প্রমাণ মনোরঞ্জন হাজং-এর ন্যায় বিচার না পাওয়া। মামলার জন্য তার মেয়ে ১৪ দিন থানায় ঘুরলেন।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধে হাজংরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতেও এদেশে হাজং সহ আদিবাসীরা এখনো সেই স্বাদ পায়নি। বরং আদিবাসীদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন প্রতিনিয়ত চলছে। মনোরঞ্জন হাজং এর ন্যায় বিচার ও আদিবাসীদের নিরাপত্তাও দাবী করেন তিনি।
আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক ফাল্গুনী ত্রিপুরা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ক্ষমতার দাপটের নিচে পিষ্ট হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও বিচার পাচ্ছে না মনোরঞ্জন হাজং। এমন দিন দেখবো আশা করিনি।
মানববন্ধনে আরো সংহতি জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন, বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন (বাহাছাস) ও পাহাড়িকা সংগঠন।