হিল ভয়েস, ০১ ডিসেম্বর ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: আগামীকাল ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই যুগপূর্তি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ২৪ বছর আগে এই দিনে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তির স্বাক্ষরের ফলে জুম্ম জনগণসহ দেশের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল শক্তি আশা করেছিল যে, এবার বুঝি পার্বত্য সমস্যার একটা স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান হতে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে জুম্ম জনগণের উপর চলমান নিপীড়ন-নির্যাতন, শাসন-শোষণ, অবহেলা-বঞ্চনার অবসান হতে যাচ্ছে। এবং জুম্ম জনগণ তাদের হৃত স্বশাসন পেতে যাচ্ছে।
কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের পর যতই দিন যেতে থাকে ততই সেই আশা গুড়েবালিতে পরিণত হতে থাকে। পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান তথা জুম্ম হৃত শাসনতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়া তো দূরের কথা, চুক্তি-পূর্বের মতো জুম্ম জনগণের উপর দিন দিন নিপীড়ন-নির্যাতন ও শাসন-শোষণ আরো গভীরভাবে চেপে বসতে থাকে।
পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার বলছে, পার্বত্য চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৯টি ধারা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অপরদিকে চুক্তির অপর স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বলছে, চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৮টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে, অবশিষ্ট ২৯টি সম্পূর্ণভাবে অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। সর্বোপরি চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহও সম্পূর্ণ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।
সরকার ও জনসংহতি সমিতি- এই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও সন্দেহ-অবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে এবারও সরকার পক্ষ বিপুল উত্সাহ উদ্দীপনা ও আনন্দ-ফূর্তির মধ্য দিয়ে চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি পালন করতে যাচ্ছে। অপরদিকে জনসংহতি সমিতিও ক্ষোভ, অসন্তোষ ও হতাশার মধ্য দিয়ে দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে চুক্তির ২৪তম বর্ষপূতি উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের উপর প্রতিবেদন ও প্রচারপত্র, জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র, পোষ্টার ইত্যাদি প্রকাশ করেছে। এছাড়া জনসংহতি সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক নিম্নোক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে-
১। জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে ঢাকার আগারগাঁওস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ২ ডিসেম্বর সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় আলোচনা সভা আয়োজন করেছে। এতে জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাসহ জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের বরেণ্য ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখবেন।
২। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৪তম বর্ষপূতি উদযাপন কমিটি, চট্টগ্রাম কর্তৃক চট্টগ্রামের জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে ২ ডিসেম্বর বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে বরেণ্য শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, কবি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নারী নেত্রী, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
৩। জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগে রাঙ্গামাটির শিল্পকলা একাডেমীতে ২ ডিসেম্বর সকাল ৯:৩০ ঘটিকায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি উষাতন তালুকদার।
৪। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে ২ ডিসেম্বর বান্দরবানে আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়েছে।
৫। ‘বাঘাইছড়ি উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ’-এর উদ্যোগে ২ ডিসেম্বর সকাল ৯:৩০ ঘটিকায় বাঘাইছড়ির উগলছড়ি মুখ (বটতলা) নামক স্থানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
৬। ‘মাদল’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকার আগারগাঁওস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ৪ ডিসেম্বর বিকাল ৩:০০ ঘটিকা প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
৭। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে ৭ ডিসেম্বর বিকাল ৩:০০ ঘটিকা ঢাকার শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে।