বাচ্চু চাকমা
আজ ১০ নভেম্বর আমাদের জুম্ম জাতীয় শোক দিবস। এই শোক দিবস আমাদের জুম্ম জনগণের জন্য শোকের, কষ্টের, বেদনার ও জুম্ম জাতির জন্য হারানোর দিন। আজকের এদিনে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও তাঁর আট জন সহযোদ্ধাসহ শাহাদাত বরণ করেছিলেন। মহাননেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাসহ জুম্ম জাতির মুক্তির আন্দোলনে যারা নিজের জীবনকে জাতির মুক্তির সংগ্রামে উৎসর্গ করেছেন, জুম্ম জাতির সেসব শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আজ শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে স্মরণ করতে চাই। আমরা জুম্ম জাতির পিতাকে আমাদের কাছ থেকে হারিয়েছি ঠিক, কিন্তু তাঁর আদর্শকে বুকে নিয়ে এখনও পাহাড়ের বুকে লড়াই সংগ্রাম চলমান রয়েছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। তাঁর প্রদর্শিত আদর্শের ঝান্ডা বহন করে এযাবতকালে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে বিশেষত ৬০ দশকের শুরুতেই জুম্ম ছাত্র ও যুবশক্তি (আজকে হয়তোবা বয়সে প্রবীণ হয়েছে) জুম্ম সমাজের অগ্রগামী অংশ প্রিয় সংগ্রামী অগ্রজরা আজও জীবন্ত ও সজীবতায় নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
মহাননেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার মৃত্যু হলেও তাঁর আদর্শ ও চেতনার মৃত্যু হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ অন্তর দিয়ে আজও গভীরভাবে অনুভব করে নেতাকে হারিয়ে জুম্ম জাতি কতটাই ক্ষতির শিকার হয়েছে। জুম্ম জাতি আজও সেই কষ্ট ও যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে অবিশ্রান্তভাবে লড়ে যাচ্ছে। মহাননেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে হারানোর শোক পাহাড়ের মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। পাহাড়ের চলমান পরিস্থিতি ও কঠিন বাস্তবতায় লারমার প্রদর্শিত আদর্শের গভীরে গিয়ে বিশেষ করে জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকে প্রবেশ করা উচিত। প্রয়াতনেতা এম এন লারমা ও বর্তমান নেতা সন্তু লারমার ডাকে সাড়া দিয়ে ৬০ দশকে অসংখ্য জুম্ম ছাত্র ও যুবশক্তি জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। সেই ৭০ দশকের জুম্ম তরুণ প্রজন্মরা দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী পরেও আন্দোলনকে শক্ত হাতে পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
চল্লিশ দশকে দেশ বিভাগের সময় অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের সাথে যুক্ত না করে ইসলামিক রাষ্ট্র পাতিস্তানে অন্তর্ভুক্তির ফলে জুম্ম জনগণের প্রতি যে অন্যায় ও অবিচার করা হচ্ছিল, তখন তৎকালীন সামন্ত ও প্রবীণ নেতৃত্বের প্রশান্তবাদী নীতির বিপরীতে স্নেহ কুমার চাকমা, ঘনশ্যাম দেওয়ানের নেতৃত্বে ছাত্র-যুব সমাজই সেই অন্যায়-অচিারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল। তারা রাঙ্গামাটিতে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিল, দিল্লীতে তৎকালীন ভারতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে ধর্ণা দিয়েছিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে কলকাতায় বেঙ্গল বাউন্ডারী কমিশনের শুনানীতে অংশগ্রহণ করেছিল।
এরপর পঞ্চাশ দশকে ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তান কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ফ্রন্টিয়ার পুলিশ রেগুলেশন বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পুলিশ বাহিনী বিলুপ্ত, ভারত থেকে আগত মুসলিম শরণার্থীদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি প্রদান, জুম্ম জনগণের রক্ষাকবচ পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ইচ্ছামাফিক সংশোধন ইত্যাদি অন্যায়-অবিচার গভীর ক্ষোভ ও অসন্তোষ্টির সাথে তৎকালীন ছাত্র-যুবরাই প্রত্যক্ষ করেছিল এবং পাহাড়ি ছাত্র সমিতি গঠন করে জুম্ম ছাত্র-যুবরাই সংগঠিত হতে উদ্যোগী হয়েছিল।
ষাট দশকে জুম্ম জনগণের মরণ ফাঁদ কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি অধিগ্রহণ আইন প্রণয়ন করে জুম্মদের জায়গা-জমি হুকুমদখল ও উচ্ছেদ, পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনতান্ত্রিক অধিকার যথাক্রমে ‘শাসন বহির্ভুত এলাকা’ ও ‘ট্রাইবাল অধ্যুষিত এলাকা’র মর্যাদা তুলে দেয়া, বহিরাগত মুসলমানদের অবাধ অনুপ্রবেশকরণ ইত্যাদি অবিচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল একমাত্র জুম্ম ছাত্র-যুবরাই। কোনরূপ জেল-জুলুমকে তোয়াক্কা না করে সহপাঠী ছাত্র-যুবদের সংগঠিত করে তৎকালীন ছাত্র নেতা এম এন লারমাই কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন এবং জেল জীবন বরণ করতেও তিনি কুণ্ঠাবোধ করেননি।
ষাট দশকের জুম্ম ছাত্র-যুবরাই সত্তর দশকে সদ্য বাংলাদেশ শাসনামলে জুম্ম জনগণের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে প্রথমে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত করেছিল, ’৭৫-এর পর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল রুদ্ধ হলে সশস্ত্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে দেশের স্বৈরশাসকদের একদিকে দমন-পীড়ন, অন্যদিকে সংগ্রাম-বিমুখ করার নানা প্রলোভনের মধ্যেও সত্তর ও আশি দশকের ছাত্র-যুবরা সশস্ত্র আন্দোলনে সামিল হতে দ্বিধাবোধ করেনি।
এভাবে জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজের ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়েই দুর্বার সশস্ত্র আন্দোলনের ফলে দেশের একের পর এক সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে জনসংহতি সমিতির সাথে আনুষ্ঠানিক সংলাপে বসতে বাধ্য হয়েছিল এবং তারই ধারাবাহিকতায় পরিশেষে ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু দেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণের অধিকার স্বীকার করেনিতে বাধ্য হলেও উগ্র জাতীয়তাবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার খোলশ থেকে বেেিরয়ে আসতে না পারায় সেই শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। ফলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন তথা জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন অব্যাহতভাবে চলমান রয়েছে। দেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিবর্তে বর্তমানে পূর্ববর্তী স্বৈরশাসকদের মত একাধারে সামরিক উপায়ে ও ডেভেলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে জুম্ম জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে গলাটিপে স্তব্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে। তাই জুম্ম জনগণকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হতে বাধ্য হয়েছে।
জুম্ম জনগণের চলমান এই চুক্তি বাস্তবায়ন তথা জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে এখনো ষাট-সত্তর-আশি-নব্বই দশকের ছাত্র-যুব অগ্রসৈনিকরাই নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। কিন্তু প্রকৃতির জাগতিক নিয়মের বাইরে কোন মানুষই যেতে পারে না। তাই মন চাইলেও আজকের প্রবীণরা আগামী দিনের আন্দোলনের জন্য দৌড়াতে পারবে তা কিন্তু নয়, দৌড়ানোর দায়িত্বনিতে হবে বর্তমান জুম্ম তরুণ প্রজন্মকে। তবে প্রবীণদের অতীতের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি ও কৌশল নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই আয়ত্ত করে নেওয়ার চেষ্টা ও আগ্রহ থাকতে হবে। শ্লোগানে শ্লোগানে আওয়াজ তুলতে হবে, “প্রবীণের বুদ্ধি আর নবীনের শক্তি” দুয়ে মিলে আসবে জুম্ম জাতির মুক্তি এবং প্রবীণদের বুদ্ধি আর নবীনদের শক্তি ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে নতুন কিছু সৃষ্টি হবে।
কিন্তু আজ হতাশার সাথে বলতে হয়, আজ জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তি ভোগবাদী সংস্কৃতির অকণ্ঠ নিমজ্জিত। অধিকাংশ তরুণেরা ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ, স্বার্থপরতা, আত্মমুখীনতা, উচ্চাভিলাষী, সুবিধাবাদিতা, বৈষয়িক চিন্তাধারায় ডুবে রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজ নয়, সাধারণত যে কোন জাতিগোষ্ঠীর ছাত্র সমাজই পরিবেশগতভাবে পেটি বুর্জোয়া শ্রেণিচরিত্রের অধিকারী। শ্রেণিগত অবস্থান থেকে ছাত্র ও যুব সমাজ আসলেই দোদুল্যমানতা, ব্যক্তি স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা, সুবিধাবাদীতা, উচ্চাভিলাষ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, সেই সাথে জুম্মদের ক্ষয়িঞ্চু সামন্তীয় সমাজের পশ্চাৎপদতা, চরম রক্ষণশীলতা, অলসতা, পরশ্রীকাতরতা, প্রতিহিংসাপরায়ণ এই ধরনের চিন্তাধারা মূলত আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের পথে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সেই সাথে নিজের মা বাবা, পরিবার-পরিজন, আত্মীয় স্বজন, আন্দোলন বিমুখ বন্ধু, প্রেমিক-প্রেমিকার পিছুটান তথা সমাজের চলমান ব্যবস্থাও জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজের সংগ্রামের পথে অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করে। আরেকটি বিষয় হল, এই ছোটবেলা থেকে প্রত্যেকটি ছেলেমেয়েকে শেখানো হয় শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল চাকরি করা, জ্ঞানার্জন নয়। মা বাবারাও চাই ছেলে কেবল চাকরি করে পরিবারের সকল ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করুক। এটাও জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজের আন্দোলন সংগ্রামের সক্রিয় অংশগ্রহণের অন্যতম বাধা। যাহোক, জুম্ম সমাজের মধ্যেকার চলমান ভুল চিন্তাধারা আসলেই নিজস্ব সমাজ ব্যবস্থা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়।
জুম্ম জনগণের এই কঠিন পরিস্থিতি ও জটিলতর জুম্ম সমাজের বাস্তবতা সম্পর্কে ছাত্র ও যুব সমাজকে আরও গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে। তারুণ্যের এই ভাবনাগুলোকে প্রয়াতনেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার প্রদর্শিত আদর্শের উপর ভিত্তি করে বাস্তবে জীবনে কাজের মাধ্যমেই চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটাতে হবে। মনে রাখবেন, আমাদের এই জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন থেমে গেলে বর্তমান জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকেই বেশি দায়ী থাকতে হবে। কারণ একটা জাতির ভবিষ্যৎ বির্নিমাণের জন্য অগ্রভাগে এসে আন্দোলন সংগ্রামে সামিল হয় কেবল ছাত্র ও যুব সমাজ। তারা উদীয়মান সূর্যের মতোই তেজস্বী হয় এবং উদীয়মান সূর্যের ন্যায় পুরো দেশ, জাতি, সমাজ তথা পুরো পৃথিবীকেও আলোকিত করার যোগ্যতা ও দক্ষতা রাখে। এই ছাত্র ও যুব সমাজ যদি শাসকের ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ হয়ে তাঁর মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চুড়ান্ত অধঃপতনের দিকে চলে যায়, তাহলে আমাদের জুম্ম জাতির ভবিষ্যৎ পুরোটাই অন্ধকারে পরিণত হবে।
আজকাল অনেকেই বহুজাতিক কোম্পানির বড় বড় ফাইভ স্টার হোটেল, কমপ্লেক্স ও নামীদামী গাড়ি-বাড়ি, রেস্টুরেন্ট এধরনের উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন দেখে থাকে।কিন্তু জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব যদি টিকে না থাকে, তাহলে সেই ফাইভ স্টার হোটেল, কমপ্লেক্স ও নামীদামী গাড়ি-বাড়ি, রেস্টুরেন্ট তো দূর ছাঁই। এগুলোর কোন নিরাপত্তা যদি না থাকে, তাহলে সেগুলো ফুৎকারে উড়ে যাবে। শাসকগোষ্ঠী জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজকে বিনোদন ও মাদকের সমদ্রে বন্দী করে রাখতে চায়। তাই তো দেখি কোন উপলক্ষ হলেই, যেমন- পার্বত্য চুক্তির বর্ষপূতি, থার্টি ফাস্ট নাইট ইত্যাদি ধরনের প্রতিটি উপলক্ষে সরকারি বাহিনী কর্তৃক ব্যান্ড শো’-এর আয়োজন এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য কখনোই পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে জুম্মদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে না, এর পেছনে মূল লক্ষ্যই হলো জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজকে বিনোদন-আনন্দ-ফ‚র্তিতে ডুবিয়ে রেখে ঘুমিয়ে রাখা। এগুলো জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজের মনুষ্যত্ব বিকাশের গতিকে যেমনি রুদ্ধ করে দেয় তেমনিভাবে জুম্ম জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তথা জুম্ম জাতীয় জীবনধারায় মূল্যবোধের উপর প্রবলভাবে আঘাত হানছে এটাই স্বাভাবিক। জুম্ম জাতির ছাত্র ও যুব সমাজ চূড়ান্ত অধঃপতন মানে আমাদের জুম্ম জাতির জন্য হুমকি। এরই বিরুদ্ধে অসংখ্য জুম্ম ছাত্র ও যুবশক্তির লড়াই সংগ্রাম আরও সুদৃঢ় করতে হবে।
বিশেষ করে জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতি আহ্বান থাকবে, আমাদের মধ্যেকার ভুল চিন্তাধারাগুলো অধিকতরভাবে প্রাধান্য পেয়ে বসেছে। জুম্ম জাতির একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে কি এভাবে থাকবো? নাকি সংগ্রামের সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে প্রতিকূল পরিস্থিতি ও বাস্তবতাকে পরিবর্তনের ভূমিকা রাখবো। শাসকগোষ্ঠী যে ষড়যন্ত্র রচনা করে চলেছে, সেটা তো আমাদেরকে অবশ্যই ভাঙতে হবে। এধরনের পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের করণীয় কি হবে? শাসকগোষ্ঠী যা করছে সেটা যদি আমরা মেনে নিতে পারি তাহলে গা ভাসিয়ে থাকলেই চলবে। চুপ করে বসে থাকলেই শাসকগোষ্ঠী তার আসল কার্যক্রম অবাধে চালিয়ে যেতে পারবে। আর যদি মেনে নিতে না পারি, তাহলে আপনাকে প্রতিরোধ সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, গা ভাসিয়ে চুপ করে থাকলেও শাসকগোষ্ঠী তাদের দমন-পীড়নের ষ্টীমরোলার থেকে কাউকে মুক্তি দেবে না। যেই ছাত্র ও যুব সমাজ এখনও দোদুল্যমানতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, মা বাবা, প্রিয়জন ও সকল পিছুটানকে প্রাধান্য দিয়ে চলেছে, সেই ছাত্র ও যুব সমাজকে সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। যেই চিন্তাধারাগুলো আমাদের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় সেগুলো পরিহার করে আপনাকে এগিয়ে আসতে হবে। এই আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের মধ্যেকার নানা হতাশা-নিরাশা যাতে বাসা বাঁধতে না পারে তার জন্য নিজেকে সব সময় সমালোচনা-আত্মসমালোচনা করে সদাজাগ্রত রাখতে হবে। নিজেকে সঠিক চিন্তায় শাণিত করতে হবে। নিজেকে আরও অধিকতর বা উচ্চ মাপের আন্দোলনের যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। মনে রাখবেন, অধিকার অর্জিত না পাওয়া পর্যন্ত অধিকতর আন্দোলন থেকে বিচ্যুত হবো না। এধরনের চেতনা সম্পন্ন শক্তি ও মনোবল নিয়ে সংগ্রামের ময়দানে উপস্থিত থাকতে হবে।
আমাদের প্রিয় অগ্রজরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, ক্ষুদ্র শক্তি নিয়েও শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে অধিকার ছিনিয়ে আনা সম্ভব। বৃহৎ শক্তির সাথে লড়াই করার জন্য আমাদের প্রয়োজন শুধু দেশপ্রেম, সাহস, মেধা, যোগ্যতা, আদর্শ ও কৌশল। নীতি-আদর্শগত সুসংগঠিত কোন জাতিকে যতই শক্তিশালী হোক না কেন পৃথিবীর কোন শাসকগোষ্ঠী পরাজিত করতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস মানেই হলো নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে অধিকারকামী জুম্ম জনগণের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। জুম্ম জাতির ইতিহাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস। রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে, হে জুম্ম তরুণ সেটা অন্তরের গভীরে গিয়ে স্মরণ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ও প্রকৃতির সাথে আমরা বেড়ে উঠেছি। রক্তাক্ত লাশ এবং নৃশংস গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলার নীরব সাক্ষী পাহাড়ের নিরন্ন খেটে-খাওয়া জুম্ম জনগণ, পাহাড়ের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকে প্রতিরোধ সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তবে মনে রাখতে হবে যে, রাজনীতি প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। শাসকদের রাজনীতি ও শোষিতদের রাজনীতি। বহু মানুষের, বহু জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বা সমগ্র জীবনধারাকে নিয়েই হল আমাদের রাজনীতি। শোষণ থেকে মুক্ত হওযার একটা রাজনীতি আর শোষণকে ধরে রেখেই আরেকটি রাজনীতি এই ভূমিতে বিদ্যমান রয়েছে। এই রাজনীতির সাথে জুম্ম তরুণদের প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয়ে মহান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সঠিক রাজনীতি লাইনে এগিয়ে আসতে হবে। সকল মানুষই রাজনীতির সাথে যুক্ত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ঘিরে এই দুই ধরনের রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছি। আমরা শোষণ, নিপীড়ন, দুঃশাসন দূরীভূত করার রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি। আত্মকেন্দ্রিকতা ও ব্যক্তি-স্বার্থপরতার কারাগারে জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজের জীবনকে আবদ্ধ করে রাখলে হবে না। আন্দোলন সংগ্রামের মহান প্রক্রিয়ার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে হবে। তবে প্রশ্ন হল এই, জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজ নিজের জীবনকে কোন ধরনের চিন্তা চেতনায় সুসজ্জিত করবেন? সেটার সঠিক পথকে দেখিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু বাস্তবে বদলানো অনেক কঠিন এবং বাস্তবে সেই প্রয়াত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আদর্শের পথ বয়ে চলা অনেক কঠিন। সেই কঠিন কাজেই জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সকল মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে আপনাকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে হবে।
আমাদের পার্টি জনসংহতি সমিতির আদর্শকে অনেকে যথাযথভাবে গ্রহণ করতে না পারার কারণে আমাদের মধ্যে পশ্চাৎপদ চিন্তা-চেতনা ঘিরে ধরেছে। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কোন লেশমাত্র পরিবেশ নেই। যেহেতু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কোন ভিত্তি নেই, তাহলে জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজ অধিকতর আন্দোলনকে কতটুকু অনুভব করতে পারে? এই বিষয়ে যুক্তি দিয়ে পরিষ্কার করে যদি বিচার বিশ্লেষণ করতে না পারি তাহলে পাহাড়ের মানুষকে আন্দোলন সম্পর্কে বুঝিয়ে জুম্ম জনগণের সমর্থন আদায় করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। মনে রাখবেন, এধরনের আন্দোলন শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা থাকলেই হয় না। নিজেকে যদি প্রগতিশীল চিন্তাধারা আলোকে জাগিয়ে তুলতে না পারি তাহলে যেকোন সময় বিপথে চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে বিলুপ্ত করারজন্য শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্র চালিয়েযাচ্ছে। তার মধ্যে আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীকে দিয়ে অগণতান্ত্রিক পন্থায়জুম্ম জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার ব্যর্থ অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এই কাজে শাসকগোষ্ঠীর বড় বাধা হল জনসংহতি সমিতি। সেকারণেই মিথ্যা মামলা, ধরপাকড়, জেল জুলুম, অত্যাচার, অবিচার, জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বাড়িঘরে তল্লাসী, অপারেশন উত্তরণের নামে এক ধরনের সেনাশাসন জারী রেখে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বকে চিরতরে নির্মূল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বারবার।
তাই এসব বিষয়গুলো ছাত্র-তরুণ সমাজকে গভীরভাবে উপলদ্ধি করতে হবে। পাহাড়ের বুকে আজ আমাদের সময়টা হয়তোবা যেনতেন করে কাটিয়ে দিতে পারবো, কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম ছেলেমেয়েরা অনাগত দিনে কিভাবে থাকবে। সেটা জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকে গভীরভাবে মূল্যায়নে নিয়ে আসতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নীতি-আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতি পরিচালনা করতে না পারলে জুম্ম জাতির চিরতরে ধ্বংস হওয়া শুধু সময়ের দাবি। আমি মনে করি, আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম সফল হওয়া আর না হওয়া জুম্ম তরুণ ছাত্র সমাজের উপরই নির্ভর করবে। এই জুম্ম তরুণ ছাত্র সমাজ কতটুকু বৈপ্লবিক চেতনায় সুসজ্জিত হচ্ছে সেটার উপরই নির্ভর করবে জুম্ম জাতির অনাগত দিনগুলি কেমন হবে। সেজন্য জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও দোদুল্যমানতা থাকতে পারেনা। একারণে নিজেকে আরও অধিকতর আদর্শিক চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। আমরা কখনো একা নই, মুক্তিকামী জুম্ম জনগণ আমাদের আন্দোলনের সাথে যুক্ত রয়েছে, রয়েছে আমাদের পক্ষে পৃথিবীর মানবাধিকার শক্তি ও রাষ্ট্রগুলো। দেশের মধ্যেও আজকে প্রগতিশীল শক্তি আমাদের সাথে রয়েছে, তার মধ্যে মানবতাবাদীমিডিয়া থেকে শুরু করে দেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও প্রগতিমনা মানুষেরা সবাই আমাদের আন্দোলনের পক্ষে রয়েছে, যেটা আমাদেরকে আরও অধিকতর আশাবাদী করে তোলে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের কঠিন পরিস্থিতিতে আজ পাহাড়ের বুকে এক ঝাঁক এম এন লারমার প্রকৃত সৈনিকের প্রয়োজন। এম এন লারমার প্রকৃত সৈনিক হতে হলে তার আদর্শকে গভীরভাবে উপলদ্ধি করতে হবে। কিন্তু তাঁর আদর্শকে কেবল উপলদ্ধি করাতেই কাজ শেষ হয় না, তাঁর প্রকৃত সৈনিক হতে হলে তাঁর আদর্শকে জেনে তা নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। জুম্ম জাতির মুক্তির লড়াইয়ে নিজেকে সামিল করা এবং এই সংগ্রামের মহান প্রক্রিয়ার সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারলে কেবল লারমার প্রকৃত সৈনিক হওয়া সম্ভব। এই মহান প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর প্রথমে নিজেকে বদলাতে হবে, হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রপ্ত করা নিজের মধ্যে গুণেধরা পশ্চাৎপদ সামন্তীয় চিন্তা চেতনাকে বদলাতে হবে। বদলাতে হবে পেটি বুর্জোয়া শ্রেণির লালিত উচ্চাভিলাষী মন মানসিকতাকে।
ভোগবাদী সমাজের দালালীপনাকে ঘৃণা করতে হবে তীব্রভাবে। নিজেকে বদলানোর পৃথিবীর এই কঠিন কাজটি পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে সব ফ্রন্টে চলমান রাখতে হবে। তার মানে জুম্ম জনগণের চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে ও দেশের তথা বিশ্বের খেটে খাওয়া মানুষের, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে এখনই। পার্বত্য চট্টগ্রামের চারিদিকে অনাচার, অবিচার সত্যিই আমাদের লড়াইয়ের মনকে বিক্ষুদ্ধ করে তুলে। আজ এদিনে আমরা জুম্ম জাতীয় জীবনে এক ধরনের তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছি। নেতাকে হারানোর এই যন্ত্রণার আগুনে পোড়া খেয়ে পাহাড়ের এক ঝাঁক সংঘবদ্ধ জুম্ম তরুণ প্রাণকে দ্রোহের আগুন জ্বালাতে হবে। ১০ নভেম্বরে জুম্ম জনগণের প্রিয়নেতাকে হারানোর শোককে আমরা ইস্পাত-দৃঢ় শক্তিতে পরিণত করতে চাই! শাসকগোষ্ঠী তথা তার পদলেহনকারী বিভেদপন্থীরা প্রয়াতনেতাকে হত্যা করে যে অন্যায় করেছে, সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দ্রোহী হয়ে জুম্ম তরুণদের লড়তে শিখতে হবে।
বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার সমগ্র জীবন ও সংগ্রামী জীবনে তিনি একজন পরিপূর্ণ নেতা ছিলেন, এমন নেতা বিশ্বের দরবারে সত্যিই বিরল। সত্যিকার দেশপ্রেমিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিকভাবে দক্ষ একজন বিরল এই নেতাকে ১৯৮৩ সালে ১০ নভেম্বরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই এম এন লারমাকে হারানোর গ্লানিভরা যন্ত্রণা জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজের বিবেককে প্রতিটি মুহুর্তে দংশন করতে এবং আমাদের জুম্ম তরুণ প্রাণকে কিছু সময়ের জন্য হয়তোবা ঝাঁকুনি দিয়ে যায় ঠিক, কিন্তু সত্যিকার অর্থে এম এন লারমাকে হারানোর বেদনা ও যন্ত্রণাকে নিজের করে নিতে পারেনি বলে আমরা সচরাচর স্বার্থপরের ভূমিকা পালন করে যাই। “যে জাতি সংগ্রাম করতে জানে না সে জাতি পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার থাকতে পারে না”-এমনই মুক্তির মন্ত্রের জন্য জুম্ম জনগণই লারমার কাছে চিরঋণী।
জুম্ম তারুণ্যের প্রাণে প্রাণ মেলাতে হবে, দ্রোহের আগুন জ্বালাতে হবে জুম্ম তরুণদের প্রাণে। মনে রাখতে হবে বস্তুর আভ্যন্তরীণ শক্তি সক্রিয় হলে বাহ্যিক শক্তি এগিয়ে আসতে দ্বিধাবোধ করেনা। আর বাহ্যিক শক্তি সক্রিয় থাকলেও আভ্যন্তরীণ শক্তি যদি দুর্বল হয় তাহলে আমাদের সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়া কখনো সম্ভব হবে না। আজ জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকে চিন্তার গভীরে গিয়ে উপলদ্ধি করতে হবে যে, আমাদের লড়াই জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এই লড়াই একটা অসমশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই হলেও অসম্ভব কোন কিছু নয়। শাসকগোষ্ঠীর সাথে এই লড়াই সংগ্রাম প্রয়াতনেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে ৭০ দশকে প্রবলভাবে শুরু হয়েছিল। শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়েবিভেদপন্থীদের বিশ্বাসঘাতকতামূলক আক্রমণে আমরা প্রয়াত নেতাকে হারিয়েছি, কিন্তু তারপরও জুম্ম জাতির সংগ্রাম এক মুহূর্তের জন্যেও থেমে থাকেনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র ও যুব সমাজের গৌরবময় সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাসের আলোকে ছাত্র ও যুব সমাজকে আরও অধিকতর সংগ্রামী, সাহসী ও নির্ভীক হয়ে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। আমাদের জুম্ম সমাজে চারিদিকে প্রতিক্রিয়শীল চিন্তা বিরাজমান। আমাদের মধ্যে মধ্যবর্তী শ্রেণির চিন্তাধারা বিরাজমান যা একদিন সুবিধাবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল ও আপোষপন্থী হিসেবে আবির্ভাব হতে পারে। সেই সকল প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাাধারা থেকে জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকে বেরিয়ে এসে জাতির কান্ডারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূলে নিয়ে আসার জুম্ম জাতির মহান কাজে নিজেকে যুক্ত করতে হবে। ১০ নভেম্বর এর এদিনে প্রত্যাশা করি যেন তাই হয়। নিপীড়িত জুম্ম জনগণের আন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক।