হিল ভয়েস, ১ নভেম্বর ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার সদর উপজেলাধীন বালুখালী ও বন্দুকভাঙ্গা এলাকায় সেনাবাহিনী কর্তৃক ৬ জুম্ম গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি তল্লাসী এবং রশি দিয়ে বেঁধে হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, গত ৩০ অক্টোবর ২০২১ রাত ১১.০০ ঘটিকার সময় জুরাছড়ি উপজেলাধীন বনযোগীছড়া সেনা জোনের নিয়ন্ত্রিত রাঙামাটি সদর উপজেলার ৬নং বালুখালী ইউনিয়নের রাজমনি পাড়া (মরিচ্যা বিল) সেনা ক্যাম্প হতে দুটি ইন্জিন চালিত ট্রলারযোগে মানবেন্দ্র চাকমাসহ (মানেন্দ) ৫০/৬০ জনের একটি সেনা দল তল্লাসী অভিযান বের হয়।
সেনা সদস্যরা কাইন্দ্যা মুখ হয়ে বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের খারিক্ষ্যংয়ে পৌঁছলে ট্রলার দুটি বন্ধ করে বইঠা বেয়ে রাত ৪.০০ ঘটিকার সময় একদল সেনা সদস্য দুত্তাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান নেয়।
অপর সেনাদলটি বালুখালী ইউনিয়নের কাইন্দ্যা মোষহাবাছড়া নামক স্থানে গিয়ে নীল কুমার চাকমা (৫৫), পিতা- আনন্দ চাকমারবাড়ি ঘেরাও করে।
সেনা সদস্যরা বাড়িতে ঢুকে নীল কুমার চাকমাকে বেঁধে ফেলে এবং বাড়িঘর তল্লাশি চালায়। তখন মানবেন্দ্র চাকমাকে (মানেন্দ) সহ সেনা সদস্যরা নীল কুমার চাকমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হয়রানি করে। তারা জিজ্ঞাসা করে যে, গত ২৯ অক্টোবর ১২ জনের একটি সন্রাসী গ্রুপ তোমাদের এখানে অবস্থান করছিল, তারা এখন কোথায়? তাদেরকে তোমরা কত টাকা করে চাঁদা দিয়েছো ইত্যাদি।
জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সেনা সদস্যরা নীল কুমার চাকমাকে সাথে নিয়ে ভ্রম লাল চাকমার বাড়ি যায় এবং তারপর ভ্রম লাল চাকমার বাড়িসহ ৫ জন গ্রামবাসীর বাড়ি ঘেরাও করে। সেনা সদস্যরা বাড়ির মালিকদের বেঁধে তাদের বাড়িঘর তল্লাশি চালায়।
এ সময় সেনা সদস্যরা আটককৃত ৫ জন গ্রামবাসীকে মানসিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ ও হুমকি প্রদান করে হয়রানি করে।
বালুখালী ইউনিয়নের মোষহাবাছড়া গ্রামে তল্লাশি শিকার ভুক্তভোগীরা হলেন- জ্ঞান লাল চাকমা (৩২), পিতা- মেঘবর্ণ চাকমা; জ্যোতি লাল চাকমা (৩০), পিতা- মেঘবর্ণ চাকমা; জ্যোতিময় চাকমা (২৬), পিতা- প্রবীর চাকমা; ভ্রম লাল চাকমা (৪৮), পিতা- প্রবীর চাকমা ও শান্তিময় চাকমা (৪২), পিতা- প্রবীর চাকমা।
তাদের ঘরবাড়ি তল্লাসীর নামে সেনা সদস্যরা বাড়ির জিনিসপত্র এলোপাতাড়ি ছুড়তে থাকে। অন্যদিকে শান্তিময় চাকমাসহ কয়েকজনকে বন্দুক তাক করে জিজ্ঞাসা করে।
এলাকাবাসীরা জানান যে, গ্রামবাসীরা সবাই চাষী এবং মৌসুমী শ্রমিক। সারাদিন শারীরিক খাটুনির পর রাতে ঘুমানোর সময়ে এ ধরনের হামলা ও হয়রানির শিকার হওয়ায় তারা ভীষণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং এ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর গ্রামে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় আতংক বিরাজ করছে বলে জানা যায়।
৩১ অক্টোবর ২০২১ সেনাবাহিনীরা যাবার সময় আটককৃত সবাইয়ের বাঁধন খুলে দেয় ও সকাল ৯.০০ ঘটিকার দিকে সেনা ক্যাম্পে চলে যায় বলে খবর পাওয়া যায়।