হিল ভয়েস, ২৭ নভেম্বর ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: “আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে, ইস্পাত কঠিন আর্দশিক শক্তিতে বলিয়ান হই’ স্লোগানকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) ঢাকা মহানগর শাখার বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে শুক্রবার ২৬ নভেম্বর ২০২১ তারিখে বিকাল ৩ ঘটিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ক্যাফেটেরিয়ায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ—সভাপতি ঊষাতন তালুকদার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ । উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সহ—সাধারণ সম্পাদক লিটন চাকমা ও সঞ্চালনা করেন রেং ইয়ং ম্রো। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যবিলন চাকমা ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ—সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার বলেন, “আমাদের ইস্পাত কঠিন আদর্শিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রাম করে যেতে হবে। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ বিরাজ করছে। যুবসমাজ ঘুমিয়ে থাকলে, ভয়—ভীতি ও দ্বিধা-সংশয় নিয়ে থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা দূর হবে না। আন্দোলন—সংগ্রাম সবাই করতে পারে না, যারা অগ্রণী, সাহসী এবং সামনের সারির তারাই এগিয়ে আসে। লড়াই করতে না পারলে টিকে থাকা যাবে না। জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সকলের দায়িত্ব। আমরা সমঅধিকার, নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আমাদের কাজে কর্মে একাত্ম হয়ে এগিয়ে যেতে হবে”।
পিসিপি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা বলেন, ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের জাতিগতভাবে নির্মূল করার জন্য শাসকগোষ্ঠী সূক্ষ্মভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তার জন্য বাহাত্তরের সংবিধানে আমাদের অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়নি। কাপ্তাই বাঁধের মতো জুম্ম বিধ্বংসী সিদ্ধান্ত ও সামরিকীকরণের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। পাহাড়ের জনমিতি পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ম্রোদের উচ্ছেদ করে চিম্বুকে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে। বলা যায় আমরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যদি আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারি তাহলে আমাদেরকেও আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের মত কর্ণফুলীর বাঁকে কবর খুঁজে নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শেকল ভাঙতে না পারলে জুম্ম জনগণের দুঃখ নিরসন করা সম্ভব হবে না”। তাই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইস্পাত কঠিন আদর্শিক শক্তিতে বলীয়ান হতে হবে তবেই আমরা টিকে থাকব।
সংহতি বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মো: ফয়েজ উল্লাহ বলেন, আমরা স্বাধীন দেশে অধিকার নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা সম্ভব হয়নি। দেশের সাম্প্রদায়িক হামলা, পাহাড়ের অস্থিরতা— এগুলো জাতির বিদ্বেষী মনোভাব থেকে করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৪ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে কিন্তু কোন সরকারই তা বাস্তবায়ন করছে না। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প জিইয়ে রাখা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই—সংগ্রামে ছাত্র ইউনিয়ন সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে”।
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউ চিরান তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, “আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের লড়াই সংগ্রাম করতে হয়। এদেশেই আদিবাসীদের ঘরে আগুন লাগে, ৯৬ সালে কল্পনা চাকমাকে অপহৃত হতে হয়। সরকার ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবহেলা করছে। এ অবস্থায় আমাদের রাজপথে আন্দোলন আরো বেগবান করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ যে বলিষ্ঠ শক্তি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল তাকে আরো দ্বিগুণ শক্তিতে এগিয়ে নিতে হবে”।
ঢাকা মহানগর শাখার নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রেং ইয়ং ম্রো এবং লিটন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে মোট ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয় । এছাড়াও সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি; ১৫ সদস্য বিশিষ্ট বাসাবো কমিটি এবং ১৩ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা পলিটেকনিক্যাল শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবগঠিত পিসিপির ঢাকা মহানগর কমিটিকে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জিকো চাকমা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বাসাবো ও ঢাকা পলিটেকনিক কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যবিলন চাকমা।