হিল ভয়েস, ২৫ নভেম্বর ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের দাবি জানিয়েছে দেশের ২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক। অবিলম্বে এসকল রোলধারী অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য নির্বাচিত করে তালিকা প্রকাশ করার জন্য তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার (২৪ নভেম্বর) ২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের পক্ষে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয় যে, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষে ভর্তির সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে আদিবাসী কোটা ও রাখাইন কোটায় ভর্তির মেধা তালিকায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার এই ফলাফলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
এর আগেও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তিতেও আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের দাবি জানানো হয়। তিন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ১ম বর্ষ/লেভেল-১ এর সমন্বিত ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে আদিবাসী কোটায় মোট ১৮টি এবং চুয়েটে রাখাইন সম্প্রদায় কোটায় ১টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। আদিবাসী কোটায় চুয়েট এ ১০টি, কুয়েট এ ৪টি এবং রুয়েট এ ৪টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, আদিবাসী কোটায় সংরক্ষিত ১৮টি আসনের বিপরীতে আদিবাসী কোটায় মোট ১১জন এবং রাখাইন সম্প্রদায় কোটায় ১১ জন মেধা তালিকায় এসেছে। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে “ক” গ্রুপে ৩৭ জন ও “খ” গ্রুপে ৫ জনের মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ফলাফলে “ক” গ্রুপে ৩৭ জনের মধ্যে ১০ জন এবং “খ” গ্রুপে ৫ জনের মধ্যে ১ জন অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী আদিবাসী কোটার মেধা তালিকায় রয়েছে।
কোটার মেধা তালিকায় স্থান প্রাপ্তদের মধ্যে “ক” গ্রুপে মেধাক্রম ১-১৮ পর্যন্ত ও “খ” গ্রুপে মেধাক্রম ১-৫ পর্যন্ত ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের আগামী ৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে ভর্তির জন্য সনদপত্র জমা দিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীরাও ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। আদিবাসী কোটায় ভর্তির জন্য মেধা তালিকায় স্থান প্রাপ্ত অ-আদিবাসী ভর্তিচ্ছু প্রার্থীরা হচ্ছে, “ক” গ্রুপে ১১তম সাবিকুন নাহার নিতি (রোল-৭৬৪৭৮), ১২তম জয়মিত্র (রোল-৭৬২২১), ১৪তম মোঃ আল গালিব (রোল-৭০৭৩৯), ১৯তম মোঃ রাফায়েল সিয়াম (রোল-৭৬৯৮৯), ২১তম মোঃ জাহিদ আলম নোমান (রোল-৭৫৬৮৯), ২৩তম প্রতিমা দে ইমু (রোল-৫০৯৫৬), ৩২তম মোঃ আশরাফুল কবির আরিফ (রোল-৬২৫১৮), ৩৩তম রনি সরকার (রোল-৬৬০৭৩), ৩৪তম কারিন সাফানা (রোল-৫৯২৬৩), ৩৭তম মোঃ নাজমুস সাকিব (রোল-৫৬২৭৯) এবং “খ” গ্রুপে ৪র্থ কারিন সাফানা (রোল-৫৯২৬৩)। রাখাইন সম্প্রদায়ের কোটায় “ক” গ্রুপে ১২ জনের মধ্যে ১১ জনই এবং “খ” গ্রুপে ৩ জনের ২ জনই রাখাইন সম্প্রদায়ের বাইরের অর্থাৎ বাঙালি শিক্ষার্থী। “ক” গ্রুপে ১ম ইমরান হোসাইন (রোল-৬২৪১৭), ২য় মোঃ শাহরিয়ার হাসান তালুকদার (রোল-৭২৪১৮), ৩য় ফারিহা ফেরদৌস নেহা (রোল-৭৬৭৭১), ৪র্থ ফারিয়া আহম্মেদ ঐশি (রোল-৭২৯৩৯), ৬ষ্ঠ খান শাহারিয়ার আহমেদ সেতু (রোল-৬৫৮১৭), ৭ম মোঃ শাহরিয়ার ইমন (রোল- ৭৬৮৫৭), ৮ম মোঃ এরফানুল হক (রোল-৬৩২৪৯), ৯ম এস এম রাফিদ রহমান (রোল-৬১১৩০), ১০ম মোঃ তামেজুল হাবিব (রোল-৭৮৭৭৫), ১১তম মোঃ আবরার শাহরিয়ার তানহা (রোল-৭৯১৬৮)। “খ” গ্রুপে ১ম মোঃ আবরার শাহরিয়ার তানহা (রোল-৭৯১৬৮), ৩য় মোঃ তামেজুল হাবিব (রোল-৭৮৭৭৫)। এ সকল শিক্ষার্থীর কেউই বাংলাদেশ সরকারের গেজেটভুক্ত ৫০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (আদিবাসী জাতিসত্তার) সদস্য নয়।
অবিলম্বে এসকল রোলধারী অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য নির্বাচিত করে তালিকা প্রকাশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসীরা কিভাবে স্থান পায়, তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আদিবাসী কোটায় শুধুমাত্র আদিবাসী শিক্ষার্থীদেরকেই নির্বাচন করতে হবে। আদিবাসী কোটায় নির্বাচিত অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ফলাফল বাতিল করে সেসব আসনে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করে পুনরায় ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। এই অনিয়ম বন্ধ হওয়া জরুরি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন: অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা; পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ; রামেন্দু মজুমদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন; ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর; ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভাপতি, মহিলা পরিষদ; ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, সভাপতি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি; খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী; রোকেয়া কবির, উন্নয়ন কর্মী; এস এম এ সবুর, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি; অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; এম এম আকাশ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন; অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, আইনজীবি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ডা. লেলিন চৌধুরী, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ; লতিফুল বারি হামিম, সাবেক ছাত্র নেতা; সানোয়ার হোসেন সামছি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন; জহিরুল ইসলাম জহির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় খেলাঘর; দীপয়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব); এ কে আজাদ, সংস্কৃতি কর্মী; অলক দাসগুপ্ত, সংস্কৃতি কর্মী; বিভূতী ভূষণ মাহাতো, সদস্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি; কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী; গৌতমশীল, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল)।