হিল ভয়েস, ৫ নভেম্বর ২০২১, রাঙ্গামাটি: একটি জাতিকে টিকে থাকতে হলে ছাত্র-যুব ও নারী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এই ছাত্র-যুব ও নারী সমাজকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিতে হবে। বিপ্লবী এম এন লারমার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হিল উইমেন্স ফেডারেশন উদ্যোগে আয়োজিত স্মরণসভায় জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) এই কথা বলেন।
আজ শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হিল উইমেন্স ফেডারেশন উদ্যোগে “জুম্ম জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় এম এন লারমার জীবন ও সংগ্রাম” শীর্ষক এক স্মরণসভায় অনুষ্ঠিত হয়। উলিসিং মারমার সভাপতিত্বে ও শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন।
অন্যান্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, পার্বত্য মহিলা সমিতির রাঙ্গমাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিতা চাকমা, এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্তুমনি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি কলেজ শাখার সভাপতি সোনারিতা চাকমা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, ষাট দশকে এম এন লারমার নেতৃত্বে ছাত্র সমাজ সংগঠন হওয়ার চেষ্টা করেছে। এম এন লারমার সেই ভূমিকার আলোকে জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজের অবস্থান ভাবা উচিত ও ভাবতে হবে। যতদিন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শ্রেণিহীন ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে না, ততদিন পর্যন্ত জুম্মদের উপর শাসন-শোষণ বহাল থাকবে।
তিনি বলেন, আজকে শিক্ষিত সমাজ ভুলতে বসেছে এম এন লারমা নামে তরতাজা যুবকটি জুম্ম জনগণের আন্তনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের যৌবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তারা জেগে থেকেও ঘুমিয়ে আছে। তারা বুঝতে পারছেন না তারা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে এবং তারা কি পরিস্থিতির মধ্যে দাড়িয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ২৪ বছর হতে চলেছে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের কোন সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ৫১ বছর ধরে সেনা শাসনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তির পরেও “অপারেশন উত্তরণ” জারি করে সেনাশাসন বলবৎ রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি-পূর্ব অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।
শ্রী লারমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র সমাজ সত্তর দশকে পাকিস্তান সরকারের জুম্ম বিধ্বংসী কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার পরও জুম্মরা আজো অধিকার বঞ্চিত। একটি জাতিকে টিকে থাকতে হলে ছাত্র-যুব ও নারী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এই ছাত্র-যুব ও নারী সমাজকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিতে হবে। জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে অধিকতরভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন বলেন, নেতা জন্ম দেয়া যায় না, সঠিক আদর্শ ধারণের মধ্য দিয়ে নেতা গড়ে উঠে। তিনি জুম্ম জনগণের আত্মানিয়ন্ত্রণাধিকার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-যুব সমাজকে এম এন লারমার আদর্শ ধারণ করার আহ্বান জানান।
মহান নেতার সংগ্রামী জীবনকে স্মরণ করে এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি চাকমা বলেন, ছাত্রাবস্থা থেকে এম এন লারমা যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বর্তমান ছাত্রদের জন্য অবশ্যই অনুকরণীয়। মহান নেতার জীবন সংগ্রাম সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া জরুরি বলে মত দেন।
সোনারিতা চাকমা বলেন, এম এন লারমা আজীবন জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারীদের মুক্তির জন্য এম এন লারমার চিন্তাধারা ধারণ ও লালন করা দরকার।
মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আজ বিপ্লবী এম এন লারমা আমাদের নেয় বলেই আমরা শোক দিবস পালন করছি। শোককে শোক নয়, বরং শক্তি হিসেবে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।