হিল ভয়েস, ২১ নভেম্বর ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে আদিবাসী কোটার আসনে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অসংগতিপূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্তিকরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আজ রবিবার (২১ নভেম্বর) সংগঠনটির তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রেং ইয়ং ম্রো স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া চুয়েট, কুয়েট এবং রুয়েট এর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় আদিবাসী কোটায় প্রকাশিত মেধা তালিকায় অনেক অ-আদিবাসী (বাঙালি) শিক্ষার্থীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, প্রতিবছর বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী কোটা বন্টনে অসংগতি ও অনিয়ম বিভিন্ন সময়ে শোনা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যেকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হলেও প্রতিবছর এ রকম অসংগতিপূর্ণ ফলাফল প্রকাশের যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
অভিযোগ করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯(৩) অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যকার স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ‘ঘ’ অনুচ্ছেদের ১০নং ধারায় ‘চাকরি ও উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সমপর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত সরকার আদিবাসীদের (উপজাতীয়) জন্য সরকারি চাকরি ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখার বিধান রয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০১৮ সালে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণা অনুযায়ী ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে এই কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হয় যা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও সংবিধান পরিপন্থী ।
বিবৃতিতে ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫% কোটা ব্যবস্থার পুর্নবহাল এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ৫% আদিবাসী কোটার যথাযথ বাস্তবায়নসহ আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নাম বাতিল করা এবং ভবিষ্যতে এরকম অসংগতিপূর্ণ ফলাফল প্রকাশ না করে নিয়মানুযায়ী আদিবাসী কোটায় শুধুমাত্র আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ জোর দাবি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এর ২০২০-২০২১ শিক্ষবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী কোটার নাম প্রকাশ করে। কোটার ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জন অ-আদিবাসী নাম দেখা যায়। প্রকাশিত অ-আদিবাসী (বাঙালি) শিক্ষার্থীদের নামসমূহ হলো- প্রতিমা দে ইমু (৫০৯৫৬), মো: নাজমুস সাকিব (৫৬২৭৯), মো: আশরাফুল কবির আরিফ (৬২৫১৮), রণি সরকার (৬৬০৭৩), মো: আল গালিব (৭০৭৩৯), সারিকুইন নাহার নিতি (৭৬৪৭৮), মো: রাফায়েল শিয়াম (৭৬৯৮৯), মো: জাহিদ আলম নোমান (৭৫৬৮৯)।
এছাড়াও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ডেন্টাল কলেজের বিডিএস কোর্সের আদিবাসী কোটার জন্য বরাদ্দকৃত আসনে আবু মো. মোস্তফা কামাল (রোল-৫৬০৩৭৫০), স্যার সলিমুল্ল্যাহ মেডিকেল কলেজ (ডেন্টাল ইউনিট) এবং আনজুম ফারিয়া (রোল- ৫৪০৬৮৪২), সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ (ডেন্টাল ইউনিট) অ-আদিবাসী (বাঙালি) শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ করা হয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার আদিবাসী কোটায় জাহেদ রহমান (৪৩২২৬), আবদুল মজিদ (৩০৩৯৩), ফাহমিদ হাসান (৫৩৫৫১), অ স ম মুশফিকুর রহমান (৭২২০৮)- এই চারজন অ-আদিবাসী (বাঙালি) শিক্ষার্থীদের নাম অন্তর্গত করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।