হিল ভয়েস, ১২ অক্টোবর ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যু, আদিবাসীঅধিকার, সংখ্যালঘু ও নারীর ইস্যু এবং মানবাধিকার বিষয়ক অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ‘হিলভয়েস’সহ আদিবাসী ও মানবাধিকার বিষয়ক ৫টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। উক্ত ৫টি সহ সারাদশের মোট ১৭৮টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সরকারের এই বন্ধের তালিকায় রয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর ২০২১ সরকারের তথ্য ও প্রচারমন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক অবগতিপত্রে এবং গত ১১ অক্টোবর ২০২১ একই ব্যক্তি স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বন্ধের তালিকায় থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম, আদিবাসী, সংখ্যালঘু ও মানবাধিকার বিষয়ক এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের নিউজ পোর্টালগুলো হচ্ছে- হিল ভয়েস (hillvoice.net), সিএইচটিনিউজ (www.chtnews.com), সিএইচটি মেইল (www.chtmail.com), সিএইচটিমিডিয়া (www.chtmedia24.com), ইন্ডিজেনেসমিডিয়া.বিডি (indegenessmedia.wordpress.com)।
উল্লেখ্য, হিল ভয়েস মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যু, আদিবাসী অধিকার, সংখ্যালঘু ও নারীর ইস্যু এবং মানবাধিকার বিষয়ক একটি অনলাইন পত্রিকা হলেও এটি প্রকাশিত হয় কানাডার অন্টারিও থেকে। শুরু থেকে বাংলা ও ইংরেজি দ্বিভাষিক এই সংবাদ মাধ্যমটি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতল এলাকার আদিবাসী, নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংবাদ, প্রতিবেদন ও প্রবন্ধ বস্তুনিষ্ঠতা ও সাহসিকতার সাথে প্রকাশ ও প্রচার করে আসছে। ফলে অচিরেই হিল ভয়েস পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের ও দেশের বাইরের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষসহ বিভিন্ন মানবাধিকারকর্মী ও সচেতন পাঠক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
অপরদিকে লক্ষনীয় যে, বাংলাদেশ সরকারের একটি মহল এবং আদিবাসী অধিকার ও মানবাধিকার পরিপন্থী বাংলাদেশের একটি গোষ্ঠী গত বছর (২০২০) থেকে হিল ভয়েস’এর বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করে। গত ১৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখ হতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে হিল ভয়েসকে বাংলাদেশে প্রচার ব্লক করে দেয়া হয়। তা সত্ত্বেও অন্যান্য দেশে হিল ভয়েসে সরাসরি প্রবেশ করা যায় এবং বাংলাদেশেও বিকল্প উপায়ে হিল ভয়েস দেখা ও পাঠ করা যায়। এছাড়া আজ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তির নামে সরকারি এজেন্সী কর্তৃক একাধিকবার হিল ভয়েসের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কপিরাইট লংঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিবারই হিল ভয়েস কর্তৃপক্ষ তা সফলতার সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সর্বপ্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে সৈয়দ ফারহা ননামে এক ব্যক্তি (যার ফোন নম্বর +১-৫২৬৩৪৭৮৯৬৫৯ ও ইমেইল syedfarhansyed59@gmail.com) অভিযোগ প্রদান করেন যে, হিল ভয়েস কর্তৃক ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ‘বাঘাইছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক এক জুম্ম স্কুল শিক্ষকের বাড়ি তল্লাশি ও হয়রানি’ সংবাদ নাকি তার নিজস্ব সংবাদ, যা হিল ভয়েস তার অনুমতি ছাড়া কপিরাইট লংঘন করে প্রকাশ করে। হিল ভয়েসের পক্ষ থেকে উক্ত সংবাদটি যে হিল ভয়েসের নিজস্ব সংবাদ তা যথাযথ ব্যাখ্যা ও যুক্তি উপস্থাপন এবং তথ্য-প্রমাণাদি দাখিল করা হয়। ফলে যথাযথ ব্যাখ্যা ও তথ্য-প্রমাণাদি দাখিলের ফলে হোষ্টিং প্রোভাইডার থেকে সৈয়দ ফারহানের অভিযোগ খারিজ করে দেয়া হয়। সাময়িক অসুবিধার জন্য হিল ভয়েসের নিকট দু:খপ্রকাশও করে সংশ্লিষ্ট হোষ্টিং প্রোভাইডার।
এরপর গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ একই নিউজের উপর সৈয়দ ফারহান একই অভিযোগ দাখিল করেন। হিল ভয়েসের তরফ থেকে আবারো যথাযথ ব্যাখ্যা ও তথ্য-প্রমাণাদি দাখিলের ফলে হোষ্টিং প্রোভাইডার থেকে আবারো সৈয়দ ফারহানের অভিযোগ খারিজ করে দেয়া হয়।
এরপর আবার গত ৭ অক্টোবর ২০২০, ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের মংগীবাই রোডের ৫৪ সুপার মার্কেটের ঠিকানা থেকে সাইমুম শিল্পগোষ্ঠী নামে এক সংস্থা থেকে হিল ভয়েস কর্তৃক ৫ অক্টোবর ২০২০ প্রকাশিত “পটুয়াখালীতে দুর্গামন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর” শীর্ষক সংবাদটি তাদেও নিজস্ব সংবাদ দাবি করে এবং হোষ্টিং প্রোভাইডারের নিকট হিল ভয়েসের বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ দাখিল করে। হিল ভয়েস থেকে হোষ্টিং প্রোভাইডারকে জানিয়ে দেয়া হয়, উক্ত সংবাদটি হচ্ছে হিল ভয়েসের নিজস্ব নিউজ এবং স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযোগকারী উক্ত সংস্থাটি ও সংস্থার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভূয়া ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়।
গত ২৩ জানুয়ারি ২০২১ যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ এর ৭৬ পার্ক এভিনিউ থেকে যশ খান নামে এক ব্যক্তি ২০ জানুয়ারি ২০২১ হিল ভয়েসে প্রকাশিত ‘নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে এক জুম্ম গ্রামবাসীর ভূমি বেদখল করে সেনা ক্যাম্প স্থাপন’ শীর্ষক ইংরেজি সংবাদের বিষয়েও কপিরাইট লংঘনের অভিযোগ তুলেন। এমনকি যশ খান হিল ভয়েসের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে যাওয়ার হুমকি দেন এবং এ ব্যাপারে তার কাছে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের আদেশ রয়েছে বলে জানান। পরে হিল ভয়েস কর্তৃপক্ষ তার কথিতআদেশ ও বক্তব্যের ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলে তিনি নীরব থাকেন। ফলে তার অভিযোগ খারিজ হয়ে যায়।
সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর ২০২১ কানাডার ৪৫৯৩ ৯০ এভিনিউ থেকে তফিকুল পিউস নামে এক ব্যক্তি (abuse@taufiqulpius.org, ফোন ৪০৩৮৫৭৭৮৫৬) ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ হিল ভয়েসে প্রকাশিত ‘Human chain demanding punishment of Abdul Rashid for rape of Hajong woman in Sunamganj’ শীর্ষক ইংরেজি সংবাদের বিষয়েও কপিরাইট লংঘনের অভিযোগ তুলেন। হিল ভয়েসের পক্ষ থেকে উক্ত সংবাদটি যে হিল ভয়েসের নিজস্ব সংবাদ এবং নিজস্ব বাংলা সংবাদের ইংরেজি ভাষান্তর তা যথাযথ ব্যাখ্যা ও যুক্তি উপস্থাপন এবং তথ্য-প্রমাণাদি দাখিল করা হয়।