হিল ভয়েস, ৭ অক্টোবর ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলাধীন বিজিবির বড় হরিনামুখ বিওপি কর্তৃক ট্রলার বোট তল্লাসী চালিয়ে ৩০টি কার্টুজসহ পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর ৭ জন লোককে আটক করে বলে জানা গেছে। এরপর বরকল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হালাম্বা এলাকায় তল্লাসী চালিয়ে আরো তিনজন পাংখোয়া গ্রামবাসী আটকসহ ৮টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসীরা বিপুল পরিমান অস্ত্র-শস্ত্র মজুদ করেছে বলে বিজিবি সদস্যরা ব্যাপকভাবে প্রচার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ৫ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার সকালে বড় হরিণা বিওপি ক্যাম্পের সন্নিকটস্থ কর্ণফুলী নদীর চেকপোস্টে ইঞ্জিন চালিত নৌকা তল্লাশি করে বিজিবি সদস্যরা ৩০ রাউন্ড কার্তুজ, পয়েন্ট ২২ বোরের খালি খোসা ১০টি, দুই জোড়া নেপালের (ডিএমএস) বুটসহ পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর ৭ জন লোককে আটক করে। আটককৃতরা হলেন-
১. থাংলেই পাংখোয়ার ছেলে লিয়ানা পাংখোয়া (৫৩);
২. মৃত জোওয়া পাংখোয়ার ছেলে জোওরাম পাংখোয়া (২৩), রাঙামাটি কলেজের বিএ ২য় বর্ষের ছাত্র;
৩. সোমহার পাংখোয়ার ছেলে লালমসাং পাংখোয়া (২৭);
৪. থানমই পাংখোয়ার ছেলে থানজোয়ালা পাংখোয়া (১৬), সাপছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ৯ম শ্রেণির ছাত্র;
৫. লালচুংজোয়া পাংখোয়ার ছেলে এলবিত পাংখোয়া (২০), সাপছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র;
৬. সাংলাল পাংখোয়ার ছেলে আদি পাংখোয়া (১৭), সাপছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী;
৭. আইমাছড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চাইচালপাড়ার বাসিন্দা হোয়াংপুই পাংখোয়া (৪০)।
আটককৃত ৭ জনের মধ্যে প্রথম ৬ জন বরকল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড হালাম্বা এলাকার বাসিন্দা। অন্যজন আইমাছড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চাইচাল পাড়ার বাসিন্দা বলে জানা যায়।
উক্ত ৭ জনকে আটকের পর ৬ অক্টোবর বুধবার সকালে বরকল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের হালাম্বা এলাকায় বিজিবি ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। উক্ত অভিযানে নিজ বাড়ি থেকে পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর নিম্নোক্ত ৩ জনকে তাদের লাইসেন্সকৃত এসবিবিএল বন্দুকসহ আটক করা হয়। তবে উক্ত অভিযানে তাদের কাছ থেকে ৮টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে বলে বিজিবি সদস্যরা দাবি করে।
আটককৃত তিনজন ব্যক্তি হলেন সিয়ামা পাংখোয়া (৩১), পীং মৃত সাংলা পাংখোয়া; মইসাং পাংখোয়া (৪০), পীং থাংচেলেই পাংখোয়াও আচুং পাংখোয়া (৪৫)।
স্থানীয় সূত্র জানা যায় যে, ইঞ্জিত চালিত নৌকা থেকে ৩০ রাউন্ড কার্তুজসহ আটককৃত উক্ত ৭ জন ব্যক্তি গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১রাঙামাটি থেকে কুকুর সংগ্রহ করে ভারতের মিজোরামে উক্ত কুকুর বিক্রি করতে যান। সেখান তাদের মধ্যে ৩ জন ব্যক্তি ১০ রাউন্ড করে ৩০ রাউন্ড কার্তুজ কিনে নিয়ে আসেন। আদি পাংখোয়া নামে আরেকজন ব্যক্তি বড়দিনে ব্যবহারের জন্য দুই জোড়া বুট কিনে নিয়ে আসেন। এছাড়া পয়েন্ট ২২ বোরের খালি খোসা ১০টি, পটাসিয়াম এক প্যাকেট, টেস্টিং সল্ট ৩ প্যাকেটও তারা কিনে নিয়ে আসেন বলেস্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর এক গ্রামবাসী জানান যে, পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর উল্লেখিত ব্যক্তিরা সবাই ঐতিহ্যবাহী জুম ও বাগান চাষী। বন্য পশু-পাখী থেকে জুম ও বাগানের ফসল রক্ষার জন্য তারা সাধারনত সরকারি লাইনন্সেপ্রাপ্ত এসবিবিএল বন্দুক কিনে থাকেন। এছাড়া স্থানীয় ক্যাম্পের অনুমতি সাপেক্ষে নিজস্ব তৈরী গাদা বন্দুক ব্যবহার করে থাকেন, যা একপ্রকার ওপেন সিক্রেট বিষয় বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান যে, লাইসেন্সকৃত ৩টি এসবিবিএল বন্দুক বাদে বাদবাকী দেশীয় তৈরি ৫টি গাদা বন্দুক বন্য পশু-পাখী মারা ছাড়া সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না। এছাড়া মিজোরাম থেকে যে ৩০টি কার্টুজ কিনে আনা হয়েছে সেগুলো সাধারনত বন্য মোরগ শিকারের কাজে ব্যবহার করা হয় হয় বলে তিনি জানান।
উক্ত গ্রামবাসী আরো জানান যে, উক্ত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিজিবি সদস্যরা প্রচার করে যে, উপজাতীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাড়াঁশি অভিযান চালিয়ে বিজিবি ও পুলিশের যৌথবাহিনী ৮টি অস্ত্র, ভারতের তৈরি ২০ রাউন্ড তাজা কার্তুজসহ ৫ জন উপজাতীয় সন্ত্রাসীকে আটক করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিপুল পরিমান অস্ত্র-শস্ত্র মজুদ করার কথা আটককৃতরা স্বীকার করেছে বলেও বিজিবি সদস্যরা ব্যাপকভাবে অপপ্রচারনা চালায়।