হিল ভয়েস, ১৭ অক্টোবর ২০২১, ঢাকা: সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসবের প্রতিমা ভাংচুর, বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার এবং পাহাড় থেকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ’ এর যৌথ আয়োজনে আজ রবিবার (১৭ অক্টোবর, ২০২১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জগন্নাথ হলের বুদ্ধ মূর্তির সামনে এই মৌন প্রতিবাদী আলোক প্রজ্জ্বালনের আয়োজন করা হয়।
জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি রাতুল তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে এবং সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক ঐতিহ্য চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত আয়োজনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন এবং জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদের সহ-সভাপতি সতেজ চাকমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সিনিয়র শিক্ষার্থী ওতাইচিং চাকমা এবং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমেধ চাকমা প্রমুখ। প্রতিবাদী আলোক প্রজ্জ্বালন অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
উক্ত আয়োজনে সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলায় নিহত ও আহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া পাহাড়ী শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, এই মোমবাতি প্রজ্জ্বালন, এটার একটা অর্থ রয়েছে। মোমবাতি থেকে আলো বের হয়। পৃথিবী আলোকিত হয়। অন্ধকার কেটে যায়। আমাদের দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান- এই চার ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সাথে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। আমাদের কোনো কোনো মানুষের মধ্যে কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক রয়েছে। যার ফলে এই ভুলগুলো করে। এই মোমের আলোয় সেই অন্ধকার দিকটা যেন দূরিভূত হয় এবং সৎবুদ্ধির যেন উদয় হয় তা আমি কামনা করি।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রথমে মানুষ। বিজ্ঞানের ভাষায় যদি বলি সকল মানুষের শরীরে সমানভাবে ৪৬ টি ক্রোমোজম রয়েছে। এমন না যে হিন্দুদের ৪৫ টি, মুসলিমদের ৪৪ টি বা বাকীদের ৪৭ টি- এরকম নয় কিন্তু। সকলের সমান সংখ্যক ক্রোমোজম আছে। তাহলে প্রকৃত অর্থে মানুষ হিসাবে সকলেই সমান হওয়াটা স্বাভাবিক। ধর্ম যার যার উৎসব সবার এবং সবার যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা আছে বলেও মনে করেন তিনি। নিজের ধর্মের প্রতি যেমন শ্রদ্ধা আছে তেমনি অন্য ধর্মের প্রতিও সমান শ্রদ্ধা রাখতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। এভাবেই আমরা সবাই ভালো থাকতে পারবো।
স্বাগত বক্তব্যে সতেজ চাকমা বলেন, সারাদেশে চলমান যে সাম্প্রদায়িক হামলা এবং প্রতিমা ভাংচুর তা ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিপন্থি এই ধরণের হামলা এবং সহিংসতাকে আমরা যারা বিবেকবান, যুক্তিবাদী এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ রয়েছি তারা কখনোই মেনে নিতে পারি না। এদেশের সংবিধানে যার যার ধর্ম নির্বিঘেœ এবং স্বাধীনভাবে পালনের অধিকারের কথা বলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, গত ১৩ অক্টোবর বান্দরবানের লামা উপজেলায় শুকরের মাংস ঝিরি’তে ধোয়ার অপরাধে পার্শ্ববর্তী দুস্কৃতিকারী কর্তৃক এক মারমা পরিবারকে আক্রমণ এবং উছাইন ওয়ান মারমা’কে আহত করার ঘটনাও একই সূত্রে গাঁথা। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ঝাঁকিয়ে বসার কারণেই এই ধরণের সাম্প্রদায়িক হামলা এবং সহিংসতা বারংবার সংঘটিত হচ্ছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
সমাপনি বক্তব্যে ঢাবি জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি রাতুল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, একজন বিবেকবান এবং যুক্তিবাদী মানুষ হিসাবে আমরা কোনো ধরণের সাম্প্রদায়িকতাকে সমর্থন দিতে পারি না। আমাদের দেশের সংবিধান আমাদের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের গ্যারান্টি দিয়েছে। কাজেই আমরা সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক হামলা এবং সারাদেশ ব্যাপী দুর্গোৎসবের প্রতিমা ভাংচুর এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তিনি সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানান।