হিল ভয়েস, ২০ অক্টোবর ২০২১, ঢাকা:“উন্নয়ন দরকার কিন্তু পাহাড়-প্রকৃতি পরিবেশ, সর্বোপরি কোন একটি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব-সংস্কৃতি-জীবিকা ধ্বংস করে সেই উন্নয়ন কাম্য নয়” বলে অভিমত করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম এনডিসি।
“আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে এগিয়ে আসুন”- এই স্লোগানকে সামনে রেখে নেদারল্যান্ড এ্যাম্বাসির সহায়তায় কাপেং ফাউন্ডেশন কর্তৃক আজ বুধবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে দিনব্যাপী আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের সম্মেলন ২০২১ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে উক্ত সম্মেলন উদ্বোধন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম এনডিসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ড এ্যাম্বাসির এ্যাম্বাসসেডর এ্যানা ভ্যান লিইয়েন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। উদ্বোধনী সভাটি সভাপতিত্ব করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। সম্মেলনের এ অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প সমন্বয়কারী হীরামন তালাং।
দিনব্যাপী উক্ত সম্মেলনের সমাপনী পর্বে জাতীয় সংসদের সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার ও এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামছুল হুদা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাছিমা বেগম বলেন, মানবাধিকার কর্মীরাই মানবাধিকার রক্ষা করেন। তিনি বলেন, সংবিধানে সবার জন্যে মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ রয়েছে। তিনি সবাইকে মানবাধিকার সুরক্ষার নির্দেশনা মেনে চলার কথা উল্লেখ করেন। তিনি আদিবাসীদের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলেন, উন্নয়ন দরকার কিন্তু পাহাড়-প্রকৃতি পরিবেশ, সর্বোপরি কোন একটি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব-সংস্কৃতি-জীবিকা ধ্বংস করে সেই উন্নয়ন কাম্য নয়। ভূমি থেকে উচ্ছেদ আদিবাসীদের জন্য বড় ঝুঁকি।
আদিবাসী নারীদের প্রতি সহিংসতা বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু আদিবাসী নারী নয়, মূলধারার নারীরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নারীর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন বন্ধের পক্ষে। এমনকি কমিশন শিশু কিশোরদের প্রতি চলমান যৌন নির্যাতন বন্ধেরও জন্যও কাজ করছেন।
এ্যানি ভ্যান লিইয়েন বলেন, বাংলাদেশ একটি বহুজাতির ও বহুভাষার বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। নেদারল্যান্ড দূতাবাস বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, এদেশের আদিবাসী ও প্রান্তিক মানুষ প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। সেই বঞ্চনার জায়গায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কাজ করছে যদিও তিনি কমিশনের কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন।
পল্লব চাকমা তাঁর বক্তব্যেএসডিজির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের নিশ্চিত ও সমঅংশগ্রহনের দাবি জানান।
এছাড়াও সম্মেলনের দিনব্যাপী আলোচনায় ২য় অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আইপিএইচআরডি সদস্যরা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে গিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে আইপিএইচআরডি নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করবে তার একটি কৌশলপত্র পরিকল্পনা তৈরি নিয়ে আলোচনা হয়।
এ সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় ১০০ জনের অধিক আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীগণ অংশগ্রহণ করেন। সমাপনী অধিবেশনে আদিবাসী সংগঠন ছাড়াও দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের তৃণমূল পর্যায়ের সমস্যার আলোকে ১৩টি সুপারিশ বা দাবি গ্রহণ করা হয়।