হিল ভয়েস, ১৬ অক্টোবর ২০২১, বান্দরবান: বান্দরবানের আলিকদম উপজেলাধীন ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দো’ছড়ি বাজারের পাশে আলিকদম সেনা জোনের অধীনে একটি নতুন করে সেনা ক্যাম্প এর নির্মাণ কাজ চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলিকদম সেনাজোনের জেসিও মোঃ ইকরামুল হাসানের নেতৃত্বে দো’ছড়ি বাজারের একটু উপরের দিকে তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের জুম ভূমির উপর কাউকে না জানিয়ে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন অনুযায়ী জোরপূর্বক জমিদখল করে একটি নতুন সেনাক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
উক্ত এলাকায় ম্রো পাড়া, তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া, ত্রিপুরা পাড়া, খুমি পাড়া, বুতুই পাড়া, লেংতুই পাড়া, রাইতমনি পাড়া, মেনতাং, পাদ্দি পাড়া, সাকলাম পাড়া, পারাও পাড়া, তনলেং পাড়া, বড় মংপং পাড়া, ডাংকু পাড়া, জাগরাম পাড়াসহ সর্বমোট ১৪০/১৫০ টি গ্রাম রয়েছে দো’ছড়ি বাজারের আশেপাশে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্হানীয় এক প্রবীন সদস্য জানান, এখানে কোন ধরনের সমস্যা হয় না। দীর্ঘবছর ধরে আমারা ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, খুমী জনগোষ্ঠী একসাথে মিলেমিশে বসবাস করছি। এখানে হঠাৎ করে আমাদেরকে কিছু না বলে আলিকদম সেনা জোনের অধীনে নতুন করে সেনাক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সেনা সদস্যরা সন্ত্রাসী খোঁজার নাম করে অহেতুক গ্রামে গ্রামে প্রায়ই ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে আসছে। তারা এলাকার লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে।
স্থানীয় এক গ্রামের কার্বারী বলেন, সেনাবাহিনী আমাদেরকে নিদের্শনা দিয়েছে জনসংহতি সমিতির কোন সদস্য ও সর্মথক কিংবা কোন চাঁদাবাজকে আমরা যেন তাদেরকে আশ্রয় না দিই এবং সন্ত্রাসী দেখলে সাথে সাথে যেন সেনাবাহিনীকে খবর দিই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জুম্ম গ্রামবাসী জানান, সেনাবাহিনী যেখানে নতুন সেনাক্যাম্প নির্মাণ করছে, সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে গ্রামবাসীদেরকে বাধ্য করা হয়। বিনামূল্যে গাছ, বাঁশ দিতে গ্রামবাসীদেরকে বাধ্য করা হয়।
গ্রামবাসীরা আরো জানান যে, আলিকদম সেনাজোন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমাদেরকে আমরা যেন তাদেরকে প্রয়োজনীয় গাঁছ বাঁশ দিই। কোন প্রকার মজুরি ছাড়া মাটি কাটার কাজ, জঙ্গল পরিস্কারের কাজ, সেনা ছাউনি নির্মাণের কাজে সহযোগিতা করতে হয় গ্রামবাসীদেরকে।
উল্লেখ্য যে, বান্দরবান জেলায় কয়েকটি উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে জুম্মদের উপর সেনাবাহিনী এখনো সামন্ত যুগীয় বেগার প্রথা চালু রেখেছে। বিনা পারিশ্রমিকে ক্যাম্প নির্মাণ করে দেয়া, বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে দেয়া, ছড়া-ঝর্ণা থেকে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ক্যাম্পে পালাক্রমে পানীয় জল তুলে দেয়া, ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর খাদ্য-সামগ্রী নিয়ে যাওয়া, স্বল্পমূল্যে সেনাবাহিনীর নিকট হাঁস-মুরগী ও গরু-ছাগল বিক্রি করতে বাধ্য করা ইত্যাদি মধ্যযুগীয় বর্বরতা এখনো চালু রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার কর্মী অভিমত ব্যক্ত করেন যে, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের বিধান থাকলেও শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার চুক্তি পদদলিত করে নতুন নতুন ক্যাম্প স্থাপন করে চলেছে। ২০০১ সালে জারিকৃত ‘অপারেশন উত্তরণ’ নামক একপ্রকার সেনা শাসনের বদৌলতে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, উন্নয়ন কার্যক্রম, বিচার ব্যবস্থাসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান না করে, স্বৈরশাসকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান সরকার ফ্যাসীবাদী কায়দায় পার্বত্য সমস্যার সামরিক সমাধানের পথ বেছে নিয়েছে বলে উক্ত মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মী জানান।