হিল ভয়েস, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, বান্দরবান: বান্দরবানের রাজভিলায় সেনা-মদদপুষ্ঠ মগ পার্টি নামে খ্যাত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য বহনকারী একটি চাঁদের গাড়ি প্রতিপক্ষের সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে মগ পার্টির ৫ জন আহত হন। সেনাবাহিনীর একদল সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে মগ পার্টির আহত সদস্যদের উদ্ধার করে চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টান মিশনারী হাসপাতালে ভর্তি করে বলে জানা গেছে। গাড়িটিতে ৮ জন মগ পার্টির সদস্য ও ৪ জন নারী ছিল বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় পোয়াইতু পাড়ায় মগ পার্টির গ্রুপ কম্যান্ডার উচিমং মারমা (দলীয় নাম- খইলাং), যিনি বোগ্রি (‘বোগ্রি’ অর্থ প্রধান নেতা) হিসেবে পরিচিত, মংক্যচিং মারমা, সবুজ মারমা প্রমুখ কম্যান্ডাররা ৬/৭ মাস পূর্বে বিয়ে করেন। অতি সম্প্রতি মগ পার্টির নিম্নস্তরের আরো ৮ জন সদস্য একসাথে বিয়ে করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
সদ্য বিয়ে করা কিছু সদস্য তাদের নববধুদের নিয়ে একটি চাঁদের গাড়ি ভাড়া করে রাজস্থলী পোয়াইতু পাড়া থেকে বান্দরবানের রুমা উপজেলাস্থ সেনাবাহিনীর বগালেক পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমন করতে যান। বগালেক থেকে ফেরার পথে ১৮ সেপ্টেম্বর, শনিবার, বিকাল ৩:৩০ ঘটিকায় বান্দরবান সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নের কিউবো পাড়ার ডাক বাংলো এলাকায় (রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কে) পৌঁছলে মগ পার্টির সদস্যরা প্রতিপক্ষের হামলায় শিকার হন। এতে গাড়িটি উল্টে গিয়ে ২ জন নারীসহ ৫ জন মগ পার্টির সদস্য আহত হন বলে জানা গেছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে “বান্দরবানে পর্যটকবাহী গাড়িতে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণে ২ জন মারমা মহিলা আহত হয়েছে” বলে প্রচার করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় কার্বারী জানান যে, সেনাবাহিনী তাদের লালিত মগপার্টির সন্ত্রাসীদের নাম গোপন করতে এবং ঘটনাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করতে হামলার শিকার মগ পার্টি সদস্যদেরকে সাধারণ পর্যটক হিসেবে প্রচার করেছে।
মগ পার্টি সদস্যদের বহনকারী উক্ত গাড়ির উপর হামলার জন্য সেনাবাহিনী জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে। তবে বান্দরবান জেলার জনসংহতি সমিতির দায়িত্বশীল একটি সূত্র তা অস্বীকার করেন। জনসংহতি সমিতির সদস্যদের উপর দমন-পীড়ন চালানোর হীনউদ্দেশ্যে কোন ঘটনা ঘটলেই সেনাবাহিনী জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করার অপচেষ্টা সেনাবাহিনীর পুরানো কৌশল বলে জনসংহতি সমিতির উক্ত সূত্র উল্লেখ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাইন্দ্যা ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি জানান যে, সেনাবাহিনীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সশস্ত্র মগ পার্টির সদস্যরা সম্প্রতি নিরীহ বিভিন্ন ব্যাক্তিকে অপহরণ করে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করে চলেছে। মুক্তিপণের উক্ত অর্থ দিয়ে মগ পার্টি সদস্যরা পোয়াইতু পাড়ায় পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে। উক্ত অর্থ দিয়ে অতি সম্প্রতি অবিবাহিত ৮ জন সদস্য একসাথে বিয়ে করেন। বোগ্রি মারমা পূর্বে বিয়ে করলে তিনিও ৬/৭ মাস আরেকটি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। উক্ত চাঁদাবাজির অর্থ দিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সদ্য বিবাহিত মগ পার্টির সশস্ত্র সদস্যরা রুমার বগালেকে ফুর্তি করতে গিয়েছিল বলে উক্ত জনপ্রতিনিধি জানান।
মগ পার্টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক সাম্প্রতিক কালে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া থেকে মিথোয়াই রাখাইন (৫৬) নামে এক বাঁশ ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়; ২৮ আগস্ট ২০২১ বাঙ্গালহালিয়া বাজার থেকে মংথোয়াইনু মারমা (৫২) নামে এক জুম্মকে অপহরণের পর ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়; ২৫ আগস্ট ২০২১ রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন এলাকা থেকে শাহীন তঞ্চঙ্গ্যা (২৬) নামে একজন মাইক্রোবাস চালককে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি অন্যতম।
এছাড়া রাজভিলা ইউনিয়নের বৃহত্তর বাঘমারা এলাকার কানাইজো মারমা পাড়া, সেনোসেপ্রু মারমা পাড়া ও খায়াম্রোং মারমা পাড়া সহ আশপাশের সকল গ্রামে মগ পার্টির সন্ত্রাসীরা পোয়াইতু পাড়ায় তাদের পাকা ক্যাম্প নির্মানের জন্য প্রতি পরিবার থেকে ৩০০-৫০০ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে বলে স্থানীয় সুত্রে জানা যায়। যে সকল লোকেরা চাঁদা দিতে অপরাগ, তাদেরকে ক্যাম্প নির্মাণের কাজে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে।
মগ পার্টির এহেন চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, খুন, রাহাজানির ফলে রাজস্থলী এলাকায় জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মগ পার্টির প্রতি সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় আওয়ামীলীগের মদদ থাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।